আনিছুল হকের নিরাপত্তায় ঘাটতি…

tajul islamতাজুল ইসলাম॥ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এডভোকেট আনিছুল হক সাহেব সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন নিরহংকার সাদা মনের মানুষ। তিনি ক্ষমায় অতুলনীয় এবং ভালবাসায় নি:শর্ত ও নি:স্বার্থ। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরী। বিচক্ষনতায় এবং ন্যায়পরায়নতায় সম্পূর্ণ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মানুষ। তাকে পেয়ে বাংলাদেশ ধন্য এবং এলাকাবাসী গৌরবান্বিত। সেই মানুষটি যখন এলাকা চষে বেড়ায় তখন নিরাপত্তা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। তিনি সকলের সাথেই খোলামেলা কথা বলেন এবং মিশে যান এলাকার সর্বস্তরের গণমানুষের সাথে।
আমার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর সকল অনুষ্ঠানে যোগদান করার আর সেই সূত্র ধরেই ইদানিং ঘটনার পরিক্রমায় বিশ্লেষণে পরিলক্ষিত হয়েছে নিরাপত্তা ঘাটতি বা দুর্বলতা। তাই সকলের কাছে সবিনয় অনুরোধ এই নিরাপত্তার উন্নতির চেষ্টা সর্বধিক দিয়ে করা উচিত। সরকার (প্রশাসন), দলীয় শৃঙ্খলা বাহিনী, স্কাউট বাহিনী এবং এলাকার আয়োজক কর্তৃপক্ষ মিলেই এই নিরাপত্তার বলয় এর উন্নয়ন সাধন করতে হবে। ইদানিং মন্ত্রিমহোদয়ের অনুষ্ঠানে ভদ্রবেশী চোর বা পকেটমার প্রবেশ করে বিভিন্ন সম্মানীত ব্যক্তিবর্গের মোবাইল এবং পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। যা অত্যান্ত সম্মানখানীকরও বটে। এতে সরকার এবং জনগণের ও এলাকার এমনকি মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়েরও অসম্মানের কারণ বটে। এই ঘটনার পরিক্রমায় বের হয়ে আসে বিশাল এক চক্রান্ত। এলাকার কিছু দুষ্কৃতিকারীর যোগসাজসে সর্ববাংলার বৃহত্তর এক ভদ্রবেশী নেটওয়ার্ক কাজ করছে এই সম্মানহানীকর কাজে এবং বড় ধরণের সুযোগ খুজছে অথবা তৈরী করে যাচ্ছে আগামীর কোন বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে।
ঘূর্ণায়মান এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়: যার বিশদ বিবরণ এখানে দেয়া হলো। মোবাইলটি চুরি হওয়ার পর থানায় জিডি করতে গিয়ে নতুন মাত্রার এক অনুজ্জ্বল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়; আর তাও আবার আমার নিজের থানায়। যাক সর্বশেষে ধৈয্যের বাধভাঙ্গাবস্থায়

জিডিটি সর্ম্পন্ন করে বাসায় ফিরি আনুমানিক রাত্র ১০.৩০ মিনিট। যার জন্য আর ঢাকায় ফেরা হলো না। পরের দিন সকালে প্রশান্তি নামক ফেসবুক আইডিতে একটি মোবাইল হারানো বিষয়ে ক্ষমাসুন্দর ষ্ট্যাটাস দেয়া হয় এবং ঐ ষ্ট্যাটাসে পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়। ঠিক তখনই আমার ঐ হারানো মোবাইল নাম্বার থেকে আমার স্ত্রির নাম্বারে একটি ফোন আসে এবং সেই ফোনটি আমি নিজেই রিসিভ করি। ঐ ভদ্রবেশী দুস্কৃতিকারীর সঙ্গে আমার কথা হয় এবং আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে, এই ফোনটি কোনভাবেই কেউ ব্যবহার করতে পারবে না এমনকি সময়ের পরিক্রমায় সেই ফোনটি উদ্ধার হবে। তবে এখন দিলে পুরস্কার দিব। তখন তিনি বলেন আমরা ৩০মিনিটের মধ্যে মোবাইলটি শাপলা হাউজে পৌছে দিব আপনি আমার নাম্বারে ফোন দিন এবং কথা বলুন। তখন ঐ ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত নম্বরটি দিয়ে একটি ফোন দেয় এবং আমি রিসিভ করে কথা বলি। আমি বলি আগে ফোন দিন এবং হাতে হাতে পুরস্কার নিন। নিশ্চয়তা দিচ্ছি কেউ জানবে না এবং আপনার কোন ক্ষতি হবে না বরং সবসময়ের উপকারের সারথি হবো। কিন্তু তিনি আগে পুরস্কার চায়। আমি তখন বলি ঠিক আছে। এমন সময় আমি থানায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয় কিন্তু ঠিক সেই সময় আমার স্ত্রীর একমাত্র ভাই ফাহাদ বিন হাফিস (জিকু) আসে এবং সেই মোবাইল পকেট মার এর সাথে কথা বলে এবং তার ঐ ব্যক্তিগত নাম্বারে ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। আমাকে বলে মোবাইল চলে আসবে আপনার থানায় যাওয়ার কোন দরকার নেই। আমিও সরল বিশ্বাসে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করে মোবাইল না পেয়ে থানায় যায় এবং অছি তদন্ত মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে ঐ নাম্বারটি দিয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা করে আসি। কিন্তু দুর্ভার্গ্য আমার ঢাকায় ফোরর পর দু’একদিন অছি সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে এমনকি আমার পত্রিকার কসবা প্রতিনিধির সঙ্গেও কথা হয়েছে। কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি। আগের অবস্থায়ই রয়েছে।
এরই মধ্যে আমি একটি আইফোন কিনে পুর্বের সর্ব ডাটা ফিরিয়ে এনেছি এবং একটি কাজ করেছি যে, ঐ মোবাইলটিকে লক করে এবং নিজস্ব সফটওয়ার এর মাধ্যমে আইফোন সফটওয়ারকে আরো শক্তিশালি করেছি। যাতে করে মোবাই অন হলেই বিভিন্ন মেসেজ পৌছে যাবে ঐ মোবাইলে এমনকি সম্পূর্ণ লোকেশনটি আমার কাছে চলে আসবে। এইভাবে মোবাইলটি লক করা আছে যা কেউ আর ব্যবহার করতে পারবে না এমনকি লকও ভাঙ্গার কোন সুযোগ পাবে না। সেই সুবাদেই আমি নিশ্চিত হলাম যে, মোবাইলটি পাওয়া যাবে এবং এর মাধ্যমে নিরাপত্তার ঘাটতি রহস্যের জট উন্মোচন হবে এমনকি শক্তিশালি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিস্থাপিত হবে।
বরাবরের মতই আবার গত সপ্তাহে মন্ত্রীমহোদয় গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে যান আর আমিও তদসংঙ্গে উপস্থিত হলাম। সেদিন আমারও ব্যক্তিগত অনেক দাওয়াত ছিল এবং মন্ত্রীমহোদয়ের সঙ্গে ফেরারও কথা ছিল কিন্তু আশার সময় শ্বাশুরীর আকুতি-মিনতিতে রয়ে গেলাম কসবায়। রাত্র তখন আনুমানিক ৯.৩০মিনিট; আমি ঘুমে এবং শাপলা হাউজের গেইট বন্ধ। কিন্তু আমার দশ বছর বয়সী শিশু পুত্র তখনও জেগে আছে এবং বিভিন্ন সফওয়ার ব্যবহার করে মোবাইল খুজার কাজে ব্যস্ত। ঠিক সেই সময়েই প্রথম মোবাইলটি অন করা হয় এবং অন করার সাথে সাথে লোকেশনসহ মেসেজ চলে আসে এমনকি মেপও দেখানো হয়। তখন আমাকে আমার ছেলে ডেকে তোলে এবং বিস্তারিত বলে তখন আমি আমার ছেলে ও ছোট মেয়ে থানায় যায় এবং অছি তদন্ত মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলি ও বিস্তারিত ছবি দেখায়। তখন তিনি একজন দারোগা সাহেবকে এই বিষয়টি দেখার জন্য দায়িত্ব দেন। আমি ঐ দারোগা সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘ একঘন্টা কথা বলি ও বিষয়টি দেখায়। তিনি বলেন যে, আপনি মোবাইল পাবেন একটু সময় লাগবে। তখন আমি ঐ নাম্বারের বিস্তারিত জানতে চাই। তখন অছি তদন্ত আমাকে ঐ নাম্বারের বিস্তারিত জানায়। যেদিন প্রথম ফোন দিয়ে কথা বলে সেদিন সে চট্টগ্রাম থেকে কথা বলেছিল এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক রাঙ্গুনিয়া টাওয়ার প্রদর্শন করে। আরো বিস্তারিত থানায় রয়েছে। পাশাপাশি ঐ বিকাশ নাম্বারটি রেজিষ্ট্রেশন হয় বরিশাল থেকে। সবই এখন থানায় গচ্ছিত। ঐ ফোনের ব্যবহারকারী যাবতীয় তথ্য থানায় গচ্ছিত এবং আমার কাছেও রয়েছে।
পরের দিন আমি ঢাকায় আসি এবং জোর প্রচেষ্টা চালায় মোবাইল উদ্ধার মিশনে। তখন এমন ব্যবস্থা করি যে, মোবাইল যেন আনলক না হয় এবং অন করলেই যেন আমার ফোন নম্বরসহ; ঠিকানাসহ যাবতীয় মেসেজে ঐ মোবাইলে পৌঁছে যায় এবং তাঁর ঠিকানা যে আমি জেনেছি ঐ মেসেজটিও পৌঁছে যায়। এই ব্যবস্থার পর সে অনেক চেষ্টা করেছে মোবাইলটিকে ব্যবহারউপযোগী করার জন্য কিন্তু পারেনি। সে যাই করে না কেন সবই আমার মোবাইল স্কীনে দেখা যায়। ইভেন চার্চ দেয়া ও শেষ হওয়া এবং ব্যবহারের সকল কিছুই নখদর্পে চলে আসে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি ভয়েছ মেসেজও পাঠিয়েছি যাতে সে ঐ মোবাইলে দেখে ও শুনতে পায়। কোন সিমের প্রয়োজন নেই শুধু মোবাইল অন করলেই হবে। মাঝে মাঝে সে মোবাইল অনলাইন অফ করে ফেলেছিল কিন্তু আমি নিজে ঢাকায় বসে ঐ মোবাইলের অনলাইন চালু করেছি যা দেখে ঐ ব্যক্তি ভয়াতুর হয়ে পড়েছিল এবং আমার মোবাইলে ফোন করেই যাচ্ছিল। শেষে আমি ঐ ব্যক্তির ফোনে কথা বলি এবং নিশ্চয়তা দেয় যে, আমি তাকে কোন ক্ষতি করব না এবং ক্ষমা করে দিয়েছি। আরো বলি আমার অফিসের ব্রাঞ্চ আছে কক্সবাজার এবং চিটাগাংও অনেক নিজস্ব লোক রয়েছে; আমি তাদের কাছে তোমার নাম্বারটি দিয়ে দিব এবং তুমি ওদের সঙ্গে কথা বলে মোবাইলটি দিয়ে দিও। এর পরেই আমার ছোট ভাই এবং তার শ্যালক রবিউল ঐ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে মোবাইলটি উদ্ধার করে।
এখন বক্তব্য হলো ঘটনা ঘটলো সৈয়দাবাদ এবং মোবাইল উদ্ধার হলো চিটাগাং কক্সবাজার হাইওয়ে রোডের পাশের এক বাড়ি থেকে। আগের দিন মোবাইল চুরি হলো বিকেলে এবং পরের দিন মোবাইল থেকে কল আসল চিটাগাং রাঙ্গুনিয়া টাওয়ার ব্যবহার করে আর বিকাশ একাউন্ট খোলা হলো বরিশাল থেকে যার মাধ্যমে টাকা নিলো। এই যদি হয় দুস্কৃতিকারীদের নেটওয়ার্ক; তাহলেতো এখন আমাদের ভাবার বিষয়। হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। আমার দাবী এই জঞ্জাল দূর করতে হবে এবং মন্ত্রীমহোদয়কে সুশৃঙ্খল পাহাড়ায় গমনাগমনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোন রকম জটলা পাকানোর সুযোগ দেয়া যাবে না। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের তালিকা তৈরী করে সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সুশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান রাখতে হবে। নেতাদের চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করে চলতে হবে। অনুষ্ঠানে আগত সকলকে শৃঙ্খলার চাদরে মোড়াতে হবে। চৌকস পুলিশ বাহিনীকে আরো সজাগ হতে হবে এবং দায়িত্ব পালনে কোনরকম গাফিলতি করার আর সুযোগ নেই। এলাকার নেতা-কর্মী এবং আয়োজকদের মধ্যে সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই। আত্মীয় এবং শুভাকাংখীরাও কড়া নজরে রাখতে হবে প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থল। এলাকার মানুষের মনে স্বর্ত্তী ফিরিয়ে আনতে হবে যে ঐ অনুষ্ঠানস্থল এবং এর আশে-পাশের জায়গা ১০০ভাগ নিরাপদ এবং নিশ্চিত। এই অবস্থার দৃশ্যমান ধারাবাহিকতা শুরু হউক এখন থেকেই।
থানা-পুলিশ ভাইদের বলি কোন ঘটনা ঘটলে হালকাভাবে না নিয়ে একটু গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করে এবং ফলাফল দৃশ্যমান রাখলে আর এই ধরনের কোন অপ্রীত্তিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে মনে হয়। তবে যে সময় ক্ষেপন এবং অসহযোগীতা এমনকি ঢিলেঢালা ভাব আমি স্বচক্ষে দেখলাম তা কাম্য নয়। আমি মনে করি এর উন্নত্তি সাধন আশু প্রয়োজন। নতুবা সুনাম নষ্ট এবং বিশৃঙ্খল পরিবেশের অভয়ারণ্যে বসবাস অভিসম্ভাবী হয়ে পড়বে। দয়া করে সকলেই সচেতন হউন এবং যার যার কাজে শতভাগ আন্তরিকতা দিয়ে শেষ গন্তর্বে পৌঁছুন। এই হউক আমাদের আগামীর শপথ এবং করণীয় কর্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.