প্রশান্তি ডেক্স॥ আষাঢ়ের শেষ দিনেও পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পনেরটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ৩০ থেকে ৪০ ঘন্টার মধ্যে দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। গত বুধবারের মধ্যে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হতে পারে।
তবে বৃষ্টি বা উজানের ঢল বন্ধ হলে কিছু দিন স্থির থেকে পানি স্বাভাবিকভাবে কমতে থাকবে। তবে এর উল্টোটা হলে এই শতকের সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঝারি মানের বন্যার সম্ভাবনা দেখছে।
অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের পানিতে নদী তীরবর্তী বেশিরভাগ জনপদ তলিয়ে গিয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা কবলিত এসব এলাকায় জনবসতি তলিয়ে গিয়ে খাবার পানির সংকট সহ তীব্র মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাটে বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৬১ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বিভাগের অন্যান্য নদীর মধ্যে কুশিয়ারা নদী অমলশীটে ১৪৬ সেন্টিমিটার, শ্যাওলায় ৯৫ সেন্টিমিটার, সিলেটের শেরপুরে ৫১ সেন্টিমিটার, মনু নদী রেলওয়ে ব্রীজে ৪৮ সেন্টিমিটার, মৌলভীবাজারে ৮৪ সেন্টিমিটার, ধলাই নদী কমলগঞ্জে ১৯ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদী বাল্লায় ১০৩ সেন্টিমিটার, হবিগঞ্জে ১০ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা ধিরাইয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারাদেশে বিপদসীমায় ছাড়িয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দায় ৬৫ সেন্টিমিটার, কংস নদী ৪৩ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রামে ১০৮ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদী কাউনিয়ায় ১৬ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদী গাইবান্দায় ৬৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়ায় ৭১ সেন্টিমিটার, চিলমারীতে ১০২ সেন্টিমিটার, যমুনা নদী ফুলছড়িতে ১০৬ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১১৯ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ৭৯ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ৪৫ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ১৬ সেন্টিমিটার, সাঙ্গু নদী বান্দরবনে ৪০ সেন্টিমিটার, দোহাজারীতে ১০০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এগুলো ছাড়া অন্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে বইছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও দেশের সকল নদনদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এরমধ্যে ধলেশ্বরী নদী এলাশিং পয়েন্টে সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নদ-নদীগুলোর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এসব নদীর পানি দিনে তিন থেকে চার ইঞ্চি করে বাড়ছে।
এখনো পর্যন্ত দেশের ১৬টি জেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যায় ডুবে যাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান। অপরদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, বান্দরবন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে কলাগাছের ভেলা ও ছোট নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র হচ্ছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে ঘরবাড়ী ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খামারিরা বিপাকে পড়েছেন তাদের পোষা গবাদি পশু হাঁস-মুরগির নিয়ে। পুকুর ও জলাশয়গুলো ডুবে যাওয়ায় মৎস্যচাষীরা বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার বড় রকমের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে শিগগির ব্যাপক আকারে ত্রাণ ও জরুরী ওষুধসেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে কয়েকটি এলাকায় এরইমধ্যেই ত্রাণ সেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় স্থানীয় চিকিৎসকদেরও যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।