প্রশান্তি ডেক্স॥ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে নেয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সের গতি রোধ করে তিন ঘণ্টা আটকে রাখে শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ। কারণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল ঢাকায় ফিরবেন। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর সচিব আসার পর ছাড়া হয় ফেরি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তিতাসের।
ফেরির দেরিতে ছোটভাই তিতাসকে হারিয়ে বড়বোন কেয়া ঘোষ ফেসবুকে একটি আবেগঘণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘আমরা সাধারণ মানুষ বলে কি, আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই? সাধারণ মানুষের জীবনের চেয়ে একজন ভিআইপির আত্মীয়ের ভ্রমণের জন্য তিন থেকে চার ঘন্টা ফেরি আটকে রাখা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিচের ছবি গুলো আমার ছোট ভাইয়ের, গত ২৪-০৭-১৯ তারিখে তার বাইক এক্সিডেন্টে তার অবস্থা খুবই গুরুতর হয়, তার মস্তিকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ২৫-০৭-১৯ তারিখ তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু যখন আমরা কাঠালবাড়ি ফেরি ঘাট-১ এ আনুমানিক রাত আটটায় পৌছায় তখন জানতে পারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের কোন একজন ভিআইপির আত্মীয় বিয়ে খেতে যাবে। তাই আনুমানিক তিন ঘন্টা যাবত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তিনি আসবেন বলে রাত আটটা থেকে এগারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করান, আমাদের সাথে আরও তিনটা এম্বুলেন্সে গুরুতর রোগী ছিলেন। আমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ,কোন উপায় না দেখে স্থানীয় পুলিশ ,সেনাবাহিনীর লোকজন, পুলিশ আইজিপি, এমনকি ৯৯৯ হেল্প লাইনে ফোন করি। কিন্তু কারো থেকে কোন সাড়া পাইনি, এমনকি ফেরি কতৃপক্ষের কাছে শত আকুতি জানানোর পরও তারা বলে যে ভিআইপির অনুমতি ছাড়া ফেরি ছাড়লে নাকি তাদের চাকরি থাকবে না। পরে আমরা পুলিশের মাধ্যমে সেই ভিআইপিকে আমাদের অবস্থার কথা জানায় কিন্তু তিনি কোন ভ্রুক্ষেপই করে নাই। অবশেষে ৩ ঘন্টা পর সেই ভিআইপির গাড়ি এল, গাড়িটি ছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের তারপর ফেরি চলল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমরা ফেরিতে প্রায় মাওয়া ঘাটের বেশ কাছাকাছি তখন আমার ভাই শেষ নিংশ্বাস ত্যাগ করে। একটা ফুলের মত জীবন ঝরে গেল শুধুমাত্র নৌ-মন্ত্রনালয়ের ভিআইপির আত্বীয়ের খামখেয়ালি কারণে । এভাবে আমাদের দেশে বহু জীবন যায় তাদের খামখেয়ালির কারণে। এভাবেই কি চলবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ।’