প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স । । জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্ট সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানিতে জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে আদালত। গত ৫ আগস্টের পর ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরে ৪ হাজার ১শ’ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদেরকে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জেলখানায় আটক রাখা হয়েছে। ওদিকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তিতে রাজী নন কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দুল্লাহ। ওদিকে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী বলেছেন, আগামী নবেম্বও ডিসেম্বরের মধ্যে পাক ভারত যুদ্ধ হতে পারে। এছাড়া কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলীতে আজাদ কাশ্মীরে ২ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে। এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা, ডন ও জিয়ো নিউজ। ভারতের উচ্চ আদালত এই মাসের শুরুর দিকে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানিতে জানায়, ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে আদালত। এ বিষয়ে উচ্চ আদালত কেন্দ্রের কাছ থেকেও জবাব চেয়েছে। এদিকে, জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত আবেদনগুলো খতিয়ে দেখার জন্যে ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে সেগুলো পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল বুধবার, শুনানি চলার সময় বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং একজন কাশ্মীরী শিক্ষার্থী, যিনি তার বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান, দুজনকেই জম্মু ও কাশ্মীর সফরের অনুমতি দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এনডি টিভি জানায়, সরকার পক্ষের শীর্ষ আইনজীবী বলেছেন, ‘আদালত যা যা বলছে তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। যেহেতু উভয় পক্ষ থেকেই এ নিয়ে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাই বেঞ্চ বলেছে, “আমরা কী করব তা জানি, আমরা এই নির্দেশ দিচ্ছি, আমরা এতে কোনও পরিবর্তন আনব না।’ এর আগে, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও অন্যরা জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখন্ডিত করার বিষয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপকে বে আইনি ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে দেশটির উচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করে। পাশাপাশি, কাশ্মীর টাইমসের কার্যনির্বাহী সম্পাদক গণমাধ্যমের উপর থেকে প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার করার বিষয়েও আবেদন জানিয়েছেন। বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি জম্মু ও কাশ্মীরে আটক থাকা দলীয় নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামির মুক্তির জন্যেও আদালতে আবেদন করেন। ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আবেদনগুলি গ্রহণ করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি এস এ বোবদ এবং এস আবদুল নাজির। ভারত সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো পিটিশনগুলির যুক্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির যে নির্দেশের মাধ্যমে সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত হওয়া রাষ্ট্রের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছিল, তা অবৈধ আবেদনে বলা হয়েছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে এই জাতীয় নির্দেশ কেবল তখনই জারি করা যেতে পারে যখন ওই সিদ্ধান্তেরে বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভারও সম্মতি থাকবে। ১৯৫১ সালে ওই রাজ্যের বিধানসভার সম্মতিক্রমেই সংবিধানের ধারাটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাই এটি রদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত টিও রাজ্য বিধানসভার মতামত তথা সম্মতির উপর নির্ভরশীল। তবে, সরকার দাবি করেছে যে রাজ্যটি রাষ্ট্রপতির শাসনের অধীনে থাকাকালীন, রাজ্য বিধানসভার ক্ষমতাগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংসদে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। সুতরাং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নির্দেশের উপরেই গোটা বিষয়টি নির্ভরশীল। প্রসঙ্গত, গত ৫ অগাস্ট ভারত সরকার তাদের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে। এ নিয়ে যে কোনও ধরণের প্রতিক্রিয়া এড়াতে ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা হয়, এবং বিশাল সমাবেশ করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এলাকায় ৫০,০০০ এর বেশি অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করাও হয়। কাশ্মীরে আটক ৪ হাজারেরও বেশি স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ হাজার ১শ জন কাশ্মীরী নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় বাহিনী। যাদের উপত্যকার বাইরে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জেলে আটক রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২২ দিনে ৬০৮ জনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জননিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে আটককৃতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে স্থানীয় পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মূলত তরুণদের টার্গেট করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের দৃষ্টিতে ‘বিপজ্জনক’ ব্যক্তিদেরই আটক করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা, হুররিয়ত নেতা, বিভিন্ন নাগরিক ও ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা প্রশাসন যাদের ‘বিপজ্জনক’ মনে করেছেন, তাদেরই গ্রেফতার করছে ভারতীয় বাহিনী। সরকারিভাবে আটকের সংখ্যা প্রকাশ না করায় প্রশাসনিক সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানায়, আটকের প্রকৃত সংখ্যা ৪১০০ রও অনেক বেশি। বিভিন্ন থানার লক আপ ভরে যাওয়ার পরে বহু তরুণকে নিরাপত্তা বাহিনীর শিবিরগুলিতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তিতে রাজি নন কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী জম্মু কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহ কেউই রাজি হননি শর্ত মেনে মুক্তিতে। তাই তিন সপ্তাহ পরও তাদের বন্দিদশা কাটল না। উল্টো বাড়ল তাদের বন্দিদশার মেয়াদ। আগস্ট মাসের প্রথমেই ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র। আর তখনই এ দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বন্দি করা হয়। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সাবেক এ দুই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নিজে দেখা করতে গিয়েছিলেন জম্মু কাশ্মীরের বর্তমান রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। তিনি তখন প্রস্তাব দেন অজ্ঞাত স্থান থেকে তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যদিও শর্ত দেন বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও, সমর্থকদের নিয়ে কোনো সভা সমাবেশ করতে পারবেন না তারা। স্বাভাবিক ভাবেই এমন শর্ত মানতে রাজি হননি মেহবুবা এবং ওমর। অবশ্য এরপর কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয় তাদের আরও বেশ কয়েকদিন বন্দি রাখার। যদিও সত্যপাল মালিক দাবি করেছেন, তেমন কোনো প্রস্তাব নিয়ে তিনি মেহবুবা এবং ওমরের সঙ্গে দেখা করেননি। কারণ হিসেবে তার ব্যাখ্যা, কাউকে আটক করা বা ছাড়ার সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল নেন না। এদিকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মেহবুবা এবং ওমরকে প্রথমে শ্রীনগরের হরি নিবাস প্যালেসে রাখা হয়ছিল। কিন্তু সেখানে দু’জনের মাঝে মধ্যেই কলহ বাধছিল। ফলে পৃথক গেস্ট হাউসে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে ওমর আবদুল্লাহর বাবা তথা আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লাহও দাবি করেছিলেন তাকেও গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাক ভারত যুদ্ধের আশঙ্কা চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাক ভারত যুদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমদ। গতকাল বুধবার রাওয়ালপিন্ডিতে একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। খবর ডন ও জিয়ো নিউজের। পাক ভারত যুদ্ধের আশঙ্কা করে শেখ রশিদ বলেন, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় ১০টির মতো যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরের সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখছি এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হতে পারে। এ জন্য সব মতভেদ ভুলে এখন একসঙ্গে চলতে হবে। শেখ রশিদ আহমদ আরও বলেন, নব্য হিটলার নরেন্দ্র মোদির কারণে গত ২৩ দিন যাবত কাশ্মীর থেকে বারুদের গন্ধ আসছে। তুরুণদের সংগ্রামই কাশ্মীরিদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে সেখানে গণভোটের ব্যবস্থা করতেন। পাক রেলমন্ত্রী বলেন, ভারতের ২৫ কোটি মুসলমান এখন পাকিস্তানের দিকে চেয়ে আছে। কাশ্মীরী জনগণের সঙ্গে এখনই আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। অন্যথায় ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। কাশ্মীর সীমান্তে ভারত পাকিস্তানের গোলাগুলি নিহত ২ কাশ্মীর সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই ভারত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে চলছে গোলাগুলী। এবার গোলাগুলির ঘটনায় আজাদ কাশ্মীরে দু’জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। এ অবস্থায় জম্মু কাশ্মীরের পাশাপাশি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের বাসিন্দারাও। ফলে নয়াদিল্লির সঙ্গে আবারও আকাশ পথ বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইসলামাবাদ। এদিকে, কাশ্মীরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু উল্লেখ করে এনিয়ে পাকিস্তান সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
জম্মু কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদে মঙ্গলবারও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের মুজাফারাবাদে বিক্ষোভ হয়। এতে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তারা ভারতের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর মধ্যেই ফের অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘন করে কাশ্মীর সীমান্তে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নয়াদিল্লির দাবি, ইসলামাবাদ আগে হামলা চালালে তারাও পাল্টা জবাব দিয়েছে। আর পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় বাহিনীর হামলায় আজাদ কাশ্মীরে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। এ অবস্থায় ফের ভারতের সঙ্গে আকাশ পথ পুরোপুরি বন্ধের পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান। দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ফাওয়াদ হোসেন বলেন, আফগানিস্তানে ভারতের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থাও করতে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।