ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল বিরম্ভনার একটি হলো মোবাইল বিরম্বনা। এইতো সেদিন মন্ত্রীর প্রোগ্রামে পকেট মারে খোয়া গেল মোবাইল ফোন। তারপর কত কাহিনীর পর আবার উদ্ধারও হলো সেই পকেট মারের মাধ্যমে খোয়া যায় ফোন সেটটি। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তাতো হলোই। কি ক্ষতি হলো জানেন… তাহলো ডাটাগুলো,সফটওয়ারগুলো এমনকি মূল্যবান কিছু প্রমান গুছিয়ে রাখা ছিল যে ফোনে তাও ফরমেটের মাধ্যমে উধাও করা হলো। মিথ্যা এবং সত্যকে আলাদা করার এমনকি বিচারকের বিচারের রায়ে সহযোগীতা করার মত প্রমানাদি লোপাট হলো। নিয়তির নির্মম পরিহাসে পর্যবসিত হলো আমার আগামীর নিয়তি।
মোবাইল হারানোর পর ঢাকায় ফিরে একটি মোবাইল (আই ফোন) ক্রয় করা হয় যমুনা ফিউচার পার্ক এর গেজেট এবং গিয়ার নামক দোকান থেকে। ৭/৭/১৯ তারিখে ক্রয় করা হয় নতুন ফোন সেটটি এবং পুনরায় ডাটা উদ্ধার যতটুকু সম্ভব হয়েছে ততটুকু করে এমনকি নতুন উদ্যমে আবার ব্যবহার করা আরম্ভ করি। তবে কন্ট্রাকগুলো পুনরুদ্ধার না হওয়ায় নতুন করে ২২শত নাম্বার টাইপের বিরম্বনায় পড়লাম। তখন সিদ্ধান্ত হলো একজন লোক নিয়োগ দিব ঐ নাম্বার টাইপের জন্য। কিন্তু নিয়োগের পূর্বেই আনুমানিক ২৩দিন ব্যবহারের পর ফোন সেটটি উত্তেজনায় উত্তেজীত হয়ে মাথা গরমে হার্ট এর্টাকে পরিণত হয়। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। অতিরিক্ত গরম হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আমার প্রয়োজনীয় ফোন সেটটি। কি যে অসহায়ত্ব বোধ করি তা ভাষায় বোঝানোর কোন উপায় আমার কাছে নেই। তারপরও আশা নিয়ে ছুটে যায় যমুনার জি এন্ড জি তে; সেই দোকানের ম্যানেজারকে ফোন করে জানানো হয় ফোন সেটটির অসুস্থতার খবর। তিনি বলেন নিয়ে আসেন আই সেন্টারে দিব এবং সমস্যার সমাধান করে দিব। ফোন সেটটির ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টির ফলে নতুন ফোন সেট পাওয়ার কথা ছিল সাথে সাথে, যা বিক্রয়পূর্ব আলোচনাতে বলেছিল কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস সামনে আসছে উন্মুক্তভাবে।
মাঝখানে একটি কথা বলা অতিব জরুরী। সেই হারানো ফোনটি ফিরে পাওয়ার পর আমি আমার প্রীয়তমা স্ত্রীকে ব্যবহার করতে দিয়ে দিই। আর তিনি তার সীম নতুন করে উত্তোলন করে ব্যবহার শুরু করেন। কিন্তু আমি যখন পুনরায় ফোন বিরম্বনায় পড়ি তখন আর রুচিতে এমনকি বিবেক বাধ সাধে এই ভেবে যে, একবার তাকে দিয়েছি এখন আর সেই ফোন ফিরে নেব না বা অল্প কয়েক দিনের সমস্যা এমনিতেই সামলে নেব। কিন্তু নিয়তির সেই নির্মম পরিহাসে এখন আরো জটিল অবস্থার মধ্যদিয়ে দিনগুজার করছি। কারো সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ভিষম ঝামেলায় অবতির্ণ হয়েছি। কি আর করার মেনে নেয়া ছাড়া আর উপায় কি?
গেজেট এন্ড গিয়ার দোকানের ম্যানেজারের আমন্ত্রণে দোকানে যায় এবং ফোন দিয়ে আর একটি নতুন ফোন নিয়ে আসতে চ্য়া। কিন্তু এখানেও নিয়তি বাধ সাধে আমার প্রাপ্য অধিকারে। দোকানদার সাহেব বলেন আমরা নতুন ফোন দেব কিন্তু তা রিপ্লেসমেন্টে আসার পর। এখন নতুন ফোন দেয়ার কোন বিধান নেই। ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি, সার্ভিস এইসব বিষয়ে আলাপ হয়েছে কিন্তু তারা বিচার মানি মান্দারগাছ আমার নীতিতে অবস্থান নিয়ে বসে আছে। আমি অনেক বুঝাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন বোঝ জ্ঞান এবং নীতি ও সততা আর কাজ করলো না ঐ ভোতা বিবেক সম্পন্ন ব্যবসায়ীর কাছে। বরং তাদের উল্টো বক্তব্য যে, আপনি আইফোন সেন্টারে জমাদিন তারা দেখে ব্যবস্থা নিবে; তবে যদি রিপ্লেস করতে হয় তাহলে কমপক্ষে ২৯দিন সময় লাগবে। আজ আইফোন সেন্টার ক্লোজ হয়ে গেছে ঈদের পরে আসুন। একবার ভাবুনতো বিক্রোত্তর সেবার কি এই নমুনা। গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস ফ্রি এর কি এই নমুনা। বিরক্ত হয়ে ফিরে এসেছি এবং কি আর করা ঈদের পরের আশায় বসে রইলাম। টেম্পরারি একটি ফোন সেট ব্যবহার করে যাচ্ছি কিন্তু কোন সুখ পাচ্ছি না এমনকি আমার শুভাকাঙ্খি অথবা প্রয়োজনে যোগাযোগকারীরাও আমাকে পাচ্ছে না ঠিকমত। আমি আছি মহা ফ্যাসাদে।
যেই পরামর্শ সেই কাজ; ঈদের এক সপ্তাহ পরে আবারো হাজির হলাম গেজেট এবং গিয়ারে। কিন্তু ততক্ষনে তাদের সুর আরো কর্কষ হলো। যেন আমি বিশাল এক অপরাধী আর আমার অপরাধের কোন ক্ষমা নেই। সব জারি জুরি শুনে বললাম আমার ফোন সেটটি কখন ফিরে পাব ভেবে চিন্তে বলুন। তখন তারা বললো আপনার ফোন ডাটা ডিলিট করতে হবে এবং তারপর নতুন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে। তাই আমি বললাম আমার আর দরকার নেই এখন আমাকে নতুন একটি সেট দিয়ে দিন আমি তৌবা কেটে যাচ্ছি যে আর বাংলাদেশ থেকে কোন কিছু কেনার ইচ্ছা আগ্রহ নেই এবং আকাঙ্খার সবটুকুই আজ মাটিচাপা দিচ্ছি। ম্যানেজার আমাকে বললো আগামী সপ্তাহে আসুন আজ আইফোন সেন্টার বন্ধ। তারপর নানান কাহিনীর বিনীময়ে আমার ফোন রিসিভ করে নিল এবং বলল ২৯দিন পর তারা আমাকে জানাবে কখন সেট পাব।
তারও এক সপ্তাহ পরে আমি ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করি ফোনের কি অবস্থা। তখন তারা বলে আজ আমরা গুলশান আই সেন্টারে আপনার সেট পাঠিয়েছি যদি কোন সংবাদ আমরা পাই তাহলে আপনাকে জানাব। ভাবুনতো চোরের মায়ের বড় গলার কত বিতিষ্ণা ও বিরক্তিকর আচরণ। ভাবুনতো আপনি কি গেজেট এবং গিয়ার থেকে কোন পন্য ক্রয় করার চিন্তা করছেন অথবা তাদের সেবা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন? যদি হ্যা হয় তাহলে একবার নয় সাতবার ভেবে সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজের জীবন সময় ও অর্থ রক্ষায় মনযোগী হউন।
কয়েক ঘন্টা পরে আমাকে ফোন দিয়ে বলে আপনার ফোন সেটটির স্কীণ লক খুলেদিন। আমি বললাম ফরমেট করবেন না। তারা ফরমেট করে আবারো সবকিছু শেষ করে দিল। কিন্তু আমার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজনটুকুও অনুভব করল না। যাক সেই কথা পরের বিষয় হলো বিকেল বেলায় আমি ফোন দিয়ে জানতে চাইলাম কি খবর। সে তখন বলে আপনার ফোন সেটের হার্ডওয়ারে সমস্যা রয়েছে। তাই আমরা এই সেটটি আই সেন্টারে জমা দিয়েছি এবং ৬০দিন পরে আমি সেট ফেরত পাবেন। বলুনতো নিজেকে আর কতো সামলিয়ে রাখব; ধৈর্য ধরব এবং নিজেকে সংযত আচরণে আবদ্ধ রাখব।
বলতে পারেন এই বিরম্বনার নাম কি? অথবা এই ধরণের বিরম্বনা থেকে কিভাবে বের হয়ে আসা যায় এবং আগামীর কল্যাণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঐ নোংরা ও হীন মনের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রক্ষা করা যায়। সচেতন মহলের কাছে মাত্র সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতাটুকুই তুলে ধরলাম। আমার মনের শান্তি এবং যোগাযোগ রক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের আল্লাহ তুমি হেদায়ত দান করো এবং আমাকে ধৈয্য ধরে সকলকে ক্ষমা করে অসামান্য ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে সহযোগীতা করে। যাতে সবাই আমাকে বুঝেতে পারে এবং প্রয়োজনে সকলের পাশে থেকে বরাবরের ন্যায় সহায়তা করতে পারি। আল্লাহ তুমিই সব এবং তুমিই রক্ষাকারী, লালন-পালনকারী, নাযাতদাতা ও মুক্তিদাতা। তোমার কাছেই আমার ফিরে যাওয়া ও আর্ত্মসমর্পণ করা।