সমালোচনা ও সত্য

Vector-Smart-Object-1-300x127[1]সমালোচনা একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত কম বেশী সকলেই। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধমর্, রাজনীতি, সংগঠন এমনকি কর্মক্ষেত্রে, হাটে-বাজারে, চায়ের ষ্ট্রলে সর্বত্রই যেন সমালোচনা। ইদানিং নতুন করে যুক্ত হয়েছে- রাজনৈতিক সমাবেশ, মিলাদ-মাহফিল, দোয়া-মোনাজাত থেকে শুরু করে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে সমালোচনা নেই। তাই সমালোচনার জবাবে আবার মিথ্যার জবাব যুক্ত হয়ে এক অরাজকতা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে সমালোচনা ও সত্য যেন পরস্পরের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সমালোচনা ও সত্যকে একত্রিত করা যায় তাহলে হয়ত আগামীর জন্য কল্যানকর হবে এবং বাসযোগ্য পৃথিবী হবে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা এমনকি নিরাপত্তার অভয়ান্য।
যেখানে সমালোচনা সেখানেই মিথ্যার অরাজকতা বিরাজ করে। সত্যকে পাশ কাটিয়ে সমালোচনা মিথ্যাকে বাস্তবায়িত করে এমনকি কখনো কখনো সত্যকে প্রকাশ করার জন্যও সমালোচনাকে ব্যবহার করা হয়। তাই এই সমালোচনার দুটি দিকই (ইতিবাচক ও নেতিবাচক) বিরাজমান রয়েছে তবে আমার মনে হয় সত্যকে দৃশ্যায়মান রাখার জন্য কোন সমালোচনার প্রয়েজন হয় না। সত্য সব সময়ই প্রকাশ হয়েছে এবং হবে। সত্যকে কোনভাবে ধামা-চাপা দিয়ে রাখা যায় না। যা ইতিহাস ও বাস্তবতায় নিরীখে গর্বকরে বলা যায়। আমাদের এই উদীয়মান সমাজে এখন ব্যাধি হয়ে ছড়িয়ে যাওয়া সমালোচনাকে লাগাম টেনে ধরতে হবে নতুবা এর বিস্তার সামনের স্বাভাবিক অগ্রগতিকে অস্বাভাবিক রূপে বাস্তবতার সঙ্গে দৃশ্যমান রাখতে সমান্তরাল সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং স্বাভাবিক সার্বিক সুচকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন সমালোচনাও এগিয়ে যাচ্ছে; তাই সমালোচনার ইতি টানা আবশ্যক। সমালোচনার সঙ্গে অতীতকেও যুক্ত করা হচ্ছে যা কুৎসীত এবং অবচেতন মনের প্রলাপ মাত্র। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ^ স্বীকৃতি একের পর এক অর্জীত হচ্ছে এমনকি ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে সেখানে ইতিবাচক বা নেতিবাচক সমালোচনা নি:স্প্রয়োজন। যারা এখনো গর্দবাকৃতির চেহারা বা দেহাবশেষ নিয়ে দাড়িয়ে হাসি বা কান্নাচ্ছলে সমালোচনা করছেন তাদের বিবেক বোধ এমনকি জ্ঞানের চর্চার পরিধি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ ঐ পেছনের কালাম দ্বারা আর সামনে এগুনো সম্ভব না এমনকি নতুনকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কাহিনাী শুনিয়ে ফায়দা হাসিল করা যাবে না। যুগ বদলিয়েছে, চাহিদায় নতুনত্ব যোগ হয়েছে, দৃষ্টিসীমায় রঙ্গিন বাস্তবতার ছোয়া লেগেছে, আকাঙ্খায় যোগ হয়েছে উন্নয়ন এবং ইতিবাচকতার এক নতুন মাত্রা, নেতিবাচকতা এখন নিলিপ্ত ও মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তাই আমাদেরকে/ নিজেদেরকে বদলাতে হবে এবং নিজেদেরকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক নতুনত্ব যোগ করে সমালোচনা পরিহার করতে হবে।
তবে অভ্যাস বদলাতে সময় প্রয়োজন; তাই সকল ইতিবাচকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং নেতিবাচকতাকে পরিহারকল্পে স্ব স্ব ভুমিকা এবং চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। ইতিবাচক সমালোচনার ক্ষেত্রে যেন সত্যকে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দিয়ে কর্ম সম্পাদন এমনকি চর্চার অগ্রগতি সাধিত করতে হবে। এখানে সমালোচনার ক্ষেত্রে উল্লেখিত স্থানসমূহকে পবিত্র থেকে পবিত্রতর করার নিমিত্তে স্ব স্ব ভুমিকা জাগ্রত চর্চায় প্রদর্শন করতে হবে। তবে যদিও কখনো আমাদের মুখ ফসকিয়ে সমালোচনা বের হয়ে আসে তখন অবশ্যই ঐ সমালোচনায় সত্যকে প্রাধান্য দিয়ে সামষ্টিক ও সার্বিক স্বার্থনির্ভর কল্যাণ নিহিত রাখতে হবে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দৃশ্য ও অদৃশ্যমান কোন কিছুকে নিয়ে সমালোচনা করা সমিচীন হবে না। কারণ অতীন নয় বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এগিয়ে যাওয়ায় বাধাসমূহের মোকাবেলায়ও সমালোচনা মুখর থাকা যাবে না। বরং সমালোচনার উর্ধে উঠে কর্মকে প্রাধান্য দিয়ে, পরিকল্পনাকে রূপদান করে বাস্তবায়ন করার নিমিত্তে নিয়োজিত থাকতে হবে। কোনভাবেই অবচেতন মনের কান্ডারী হয়ে নেতিবাচকতার হাল ধরে সমালোচনা মূখর থাকা যাবে না।
আমাদের চলমান ধারাবাহিকতায় যে সমালোচনার তকমা বিরাজমান তার দূরীকরণের নিমিত্তে নিয়োজিত থেকে আত্মসমালোচনা মত্ত থাকা আবশ্যক। প্রত্যেকে আমরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে নিজের সমালোচনা করে সমালোচনা নামক ব্যাধিকে দূরীভ’ত করতে হবে। নিজের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকলে এবং উপলব্দিতে জাগ্রত রাখলে অপরের সমালোচনা বন্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা কাজে লাগে। আমরা নিজের সমালোচনার স্বাধ আস্বাধন করলে ভবিষ্যতের সমালোচনা বন্ধ হতে সহায়তা করবে। এই আত্মসমালোচনাই সমালোচনা নামক ব্যাধি নির্মূলে টনিক হিসেবে কাজ করবে। সরকার দেশ ও জাতি নিয়ে গর্ব করার সময় এখন এবং সমালোচনা পরিহার করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রিয় বা জাতিয় ঐক্যের বহি:প্রকাশের সময় এখন। এখন সময় হলো সুযোগ এবং উন্নয়ন সুফলকে উপভোগ করার। অন্যের জীবনে আশির্বাদস্বরূপ হয়ে প্রকাশ হওয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.