রংপুর প্রতিনিধি॥ জাতীয় পাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে এরশাদ পরিবারেরই তিন সদস্য এরশাদ পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ ওরফে সাদ, ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও এরশাদের বোন সাবেক সংসদ সদস্য মেরিনা রহমানের মেয়ে মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পার নাম আলোচনায় রয়েছে।
এছাড়া পাটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারাও মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন। এর মধ্যে গত রোববার এ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমদিকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে গণসংযোগ অব্যাহত রাখলেও গত রোববার তফসিল ঘোষণার পর পরই নড়েচড়ে বসেন পাটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। খোদ এরশাদ পরিবারের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে।
গত সোমবার রাতে সদর উপজেলার পালিচড়া ও পাগলপীর এলাকায় মনোনয়ন দাবিতে বিক্ষোভ শেষে ছোট ভাই সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বড় ভাই আসিফ শাহরিয়ারের সমর্থকরা। তাদের দাবি, সাদ বহিরাগত, তাকে রংপুরের কেউ চেনে না। এমনকি সাদ নিজেও রংপুর বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এছাড়াও সাদ এরশাদের ডিএনএ পরীক্ষারও দাবি উঠে নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে।
তাই বহিরাগত কেউ প্রার্থী হলে কঠোরভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরেও নগরীতে বিক্ষোভ করেছেন আসিফ শাহরিয়ার ও তার সমর্থকরা। এ সময় সাদকে রংপুরের মাঠিতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন তারা। এদিকে পাটির এক শীর্ষ নেতাও উপনির্বাচনে স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে আসিফের অনুসারী পালিচড়া ইউনিয়ন জাতীয় পাটির সাবেক সভাপতি মতিন মিয়া ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হানুর রহমান রায়হানের নেতৃত্বে এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় জাতীয় পাটির অপর একটি পক্ষ প্রতিবাদ করলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উত্তেজনা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে রংপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পাটির সদস্য সচিব মাসুদার রহমান মিলন বলেন, আসিফ শাহরিয়ারের সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমরা দলের মহাসচিবকে অবহিত করেছি।
তবে সাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসিফ বলেন, রংপুর-৩ আসনের মানুষ সাদকে গ্রহণ করবে না বলেই হয়তো ক্ষুব্ধ কর্মী সমর্থকরা তার কুশপুত্তলিকা দাহ করতে পারে। তাই বলে আমাকে কেন দায়ী করা হবে?
এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগরীর সেনপাড়াস্থ স্কাইভিউ বাসভবনে জমায়েত হতে শুরু করেন আসিফের সমর্থকরা। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় আসিফ শাহরিয়ার তার বক্তব্যে বলেন, স্থানীয় ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থী করলে জাপার তৃণমূল নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না। বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এবার আর ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হবে না। যাকে কেউ চিনেই না, তাকে কেন মানুষ ভোট দেবে।
এরশাদ পরিবারের একমাত্র উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে দাবি করে আসিফ বলেন, আমি জাতীয় পার্টির রংপুর জেলার সদস্য সচিব ও রংপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য ছিলাম। এরশাদ পরিবারের একমাত্র সদস্য হিসেবে আমি রংপুরে থাকি। কিন্তু পার্টির সুবিধাভোগী কিছু দালাল এবারও বহিরাগত কাউকে মনোনয়ন দেয়ার পায়তারা করছেন। আমরা কোনোভাবেই এটা মেনে নেব না। আশা করছি, দল ঠিক রাখার জন্য এবং সাদের ডিএনএ পরীক্ষার যে দাবি বিভিন্নভাবে উঠেছে তা বিবেচনা করে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
স্থানীয়ভাবে প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর মহানগরের সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এই আসন একটি সম্মানিত আসন। এই আসেন যাকে খুশি তাকে প্রার্থী দেয়া যাবে না। রংপুরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন একজনকে প্রর্থী করতে হবে।
তিনি বলেন, এটা ১৯৯৬ সালের প্রেক্ষাপট নয় যে, যে কাউকেই প্রার্থী করলে হবে। আমাদের রংপুরের সাধারণ মানুষ কোনো বহিরাগতকে চায় না।
সাদ এরশাদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার জেতার প্রশ্নই আসে না। তাকে চাপিয়ে দিয়ে যারা এ আসনে নির্বাচন করতে চান, তারাই যেন মাঠে কাজ করেন। জাপার তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নেই। আমরা এ আসনের জন্য একজন পরিচ্ছন্ন মানুষকে চাই।
স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে রংপর থেকে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম সম্পাদক ও মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর এবং কেন্দ্রীয় জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ জনগণসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ রয়েছে, যাদেরকে মানুষ চেনে এমন একজনকে মনোনয়ন দেয়া হোক।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৯ সেপ্টেম্বর, যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৫ অক্টোবর।