ভূমি নিবন্ধন খাতে দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার

প্রশান্তি ডেক্স॥ ভূমির দলিল নিবন্ধন সেবা জনগুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম উৎস হলেও সেবার যুগোপযোগী মান উন্নয়নে আইনি, পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনটি মনে করে, ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে সেবার মান আগের চেয়ে না বেড়ে বরং কমেছে। ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির উপস্থিতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। আর এক্ষেত্রে সরকার ও সেবাগ্রহীতা উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত। ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে। গত সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডি মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম ডেপুটি ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) শাম্মী লায়লা ইসলাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) নিহার রঞ্জন রায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এলাকা বিশেষে ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় ধরন অনুযায়ী এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ ও নিয়মবহির্ভূত লেনদেন হয়। দলিল নিবন্ধনে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা, দলিলের নকল উত্তোলনে ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, দলিল নিবন্ধন প্রতি দলিল লেখক সমিতিকে দিতে হয় ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা। ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতিও। অধিকাংশ সাব রেজিস্ট্রার অফিস পুরনো ও জরাজীর্ণ। কাজের পরিধির তুলনায় লোকবল অপ্রতুল। আবার এই নিয়োজিত লোকবলের জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফরম, বিভিন্ন রেজিস্ট্রার, ইনডেক্স ও রেকর্ডরুমের ব্যবস্থা নেই। আর্থিক বরাদ্দ কম, ঘোষণার পরও হয়নি ডিজিটালাইজেশন। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ শেষে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারু জ্জামান বলেন, রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে মেয়র, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর সুপারিশের প্রয়োজন হয়। নকলনবিশ হিসেবে নাম তালিকাভুক্তকরণে ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা, নকলনবিশ থেকে মোহরাব হতে ২ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা, মোহরাব থেকে সহকারী পদে ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা, দলিল লেখকদের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা, দলিল লেখকদের দলিল লেখক সমিতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা এবং সাব রেজিস্ট্রার বদলির ক্ষেত্রে ৩ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূত ঘুষ ও লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। ড. ইফতেখার বলেন, ২০১৭ ২০১৮ অর্থবছরে নিবন্ধন অধিদফতরের অধীনে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৪২৮টি দলিল নিবন্ধিত হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১২ হাজার ৪৩২ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার ৭শ৩১ টাকা। এ সেবাখাতটিকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সেবার মানোন্নয়ন, তদারকি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত ও দলিল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহীতাকে হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব হলে এই রাজস্বের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা(নির্বাহী)অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক(রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান

Leave a Reply

Your email address will not be published.