জনমত ও উন্নয়ন

জনমত ও উন্নয়ন দুটি শব্দ সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী। প্রকৃতপক্ষে এই দুটি শব্দ হওয়ার কথা ছিল একে অন্যের পরিপূরক। তবে উন্নত বিশে^ এবং বিশে^র বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে এই দুটি শব্দ সমার্থক শব্দ হিসেবেও চিহ্নিত বা পরিচিত। তবে আমাদের মত অনুন্নত দেশে এমনকি জোড়া তালির গনতান্ত্রিক দেশে অথবা অস্থিতিশীল নেতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার মাঝে এই দুটি শব্দ সম্পূর্ণ অর্থহীন বা এর বিলুপ্তী সাধন যুক্তিযুক্ত। তবে এর প্রসার এবং ব্যপক ব্যবহার প্রচলিত থাকলে হয়তোবা একদিন এই দুটি শব্দ একীভ’ত হয়ে দেশের ভীতকে আরো মজবুত করে তুলবে এমনকি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রসরতা ও জীবন মানের সর্বিক উন্নয়ন গতি ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হবে এবং এর স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে।
অনেকের ধারনা বা মত হলো উন্নয়ন এবং অগ্রগতি সাধিত হলেই জনমত বৃদ্ধি পাবে বা ঘটবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমার মতামত সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ ভিন্ন মতাদর্শী বা মতাবল্বীরা কিন্তু উন্নয়ন এবং অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য জনমত বা নিজের মত পরিবর্তন করেন না। বরং ঐসকল উন্নয়ন এবং অগ্রগতিকে স্বব্ধ করে দেয়ার জন্য মরিয়া থাকেন। কারণ তাদের নিজস্ব একটা মত ও পথ রয়েছে। যা দিয়ে তারা নিজেরা নিজেদের স্বার্থ এবং কোন কোন গোষ্টির স্বার্থ রক্ষা করে থাকেন। ঐ গোষ্ঠিগুলো সবসময় ভদ্রবেশে বা শ্রদ্ধবেশে বন্ধুসূলভ কাজ বা আচরণের মাধ্যমে সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়। যা জাতি ও দেশ এবং দল হাড়ে হাড়ে টের পায় এমনকি এর ক্ষতিকর দিকগুলোকে পুষিয়ে বা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময়, শ্রম, মেধা, রক্ত এবং অর্থ বিসর্জন দিতে হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে জনমত গঠন খুবই কঠিন বিষয়। দলীয় বা উন্নয়ন এমনকি আদর্শ দিয়ে জনমত গঠন করা সম্ভব নয়। বর্তমানে বহুধা বিভক্ত জাতিকে একত্রিত করা দূরূহ তবে সামনে হয়তোবা হতেও পারে। বঙ্গবন্ধু করেছিলেন এবং তাঁরই কণ্যা চেষ্টা করে যাচ্ছেন; কিন্তু ঐ চেষ্টায় বা সাধনায় সাধারণ মানুষজন বৃহত্তর ঐক্যে শরীক হলেও দলীয় লেবাসধারীরা বা বহুধাবিভক্ত গোষ্ঠীস্বার্থ্য রক্ষাকারীরা কোনদিনও সাম্যের ঐক্যে সড়িক হয়নি এমনকি হবেও না। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো ইতিহাস বিকৃত করা বা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে পাল্টে দিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপদান করা। যার মধ্যে দিয়ে তারা নিজেরা এমনকি তাদেও প্রভুরা লাভবান হয়ে ফায়দা লুটে বাঙ্গালী জাতির বারোটা বাজাবে ও বাজিয়েছে।
তবে দলীয় ইমেজে ভাটা পরে এখন ব্যক্তি ইমেজে জয়জয়াকার। কারণ এই ব্যক্তি ইমেজকে কেন্দ্র করেই দল পরিচালিত হয়েছে এবং হবে। ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছে এবং ব্যক্তিকেই জয়যুক্ত করেছে এমনকি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও জাতি ঐক্যবদ্ধ্য এবং ঐ ব্যক্তিকেন্দ্রীক রাজনীতি এবং উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত করে যাচ্ছে। ব্যক্তিবিহীন দল এবং রাজনীতি একেবারে শুন্যের কোটায় যা দৃশ্যমান ইতিহাসের সাক্ষি থেকে অনুধাবন করা অতি সহজ। তাই ব্যক্তিই প্রথম এবং প্রধান উপজিব্য বিষয়। দেশ নায়ক একজনই হয় এবং তার পরিচালনায় দেশ যেমন বিশে^ স্বীকৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ঠিক তেমনি করে ঐ একই ব্যক্তির ঔরসজাত সন্তানের মাধ্যমে স্বনির্ভর বাংলাদেশ এমনকি উন্নয়নশীল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। কাজের পরিধির ব্যপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নতুন নতুন করে অর্থনীতি জাগ্রত রাখার বিভিন্ন উপাদন যুক্ত হচ্ছে। তাই দেশের শত উন্নয়ন যেমন, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, ইউনিভার্সিটি, মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, ব্যাংক-বীমা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, ব্রিজ, কালভার্টসহ সামগ্রীক উন্নতীতে বাংলাদেশ এখন সয়লাভ হচ্ছে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও উন্নতি সাধিত হয়নি জনমতের। কারণ এই উন্নয়নে জনগনের মতামত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন ছাপ ফেলতে পারে নি বরং তাদের মনো কষ্ট ও মনোবেদনার বোঝা ভারি হচ্ছে। তবে কেউ কেউ মৌখিকভাবে স্বিকার করে যাচ্ছে যে, এই উন্নয়ন বাংলাদেশ সৃষ্টির মতই এক নব আবিস্কার।
একজন বাংগালী বা বাংলাদেশী হিসেবে আমার গর্ভ হয় এই ভেবে যে, বাংলার আকাশে বঙ্গবন্ধু উদিত হয়েছিল রক্তিম এক লাভাস্বরূপ। সেই লাভায় আজ আভা হয়ে জাগ্রত রয়েছে তারই কন্যা শেখ হাসিনা। তিনিও সেই লাভাকে আরো আলোজলমল প্রাণের স্পন্ধন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অভিষ্ট লক্ষের দিকে। তবে সেই কান্ডারী এখন বিশ^ জনমতে উজ্জীবিত এবং প্রশংসিত। আর দেশীয় জনমতেও অগ্রগামী। তবে আমাদের দেশের এই উন্নতি সইতে না পেরে ভিন্ন মত ও পথের অনুসারিরা পাশাপাশি ভিনদেশী নিন্দুকরা এমনকি ক্ষমতার পালাবদলের কুশীলবরা এখন সমস্যা বিরাজমান রাখার কাজে মগ্ন। কিন্তু এই মগ্নতার মাঝেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে আর জনগণ নতুন এক উন্নয়নশীল বাংলাদেশ পাবে। তবে জানিনা তখন জনমত কি হবে। বলা যায় এই উন্নয়ন কান্ডারী জনমতের হিতাকাংখী ও দাবিদার কিন্তু তিনি যিনি জনমতের বাইরে জনবিদ্রুপকে তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যাচ্ছেন এবং এই এগিয়ে যাওয়াই হবে বাংলার ভাগ্যাকাশের নতুন উদীয়মান নব্য এক স্বপ্নের সোনার বাংলার রূপায়ন।
আমরা জনমতের জন্য উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবো এই কথা ঠিক নয় বরং দেশ মার্তৃকার তরে দেশের সকল মানুষের কল্যাণেই অন্তনীহিত থেকে কাজ করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে মনের শান্তি ও আত্মার আত্ম-উপলব্দিকে তৃপ্তিদায়ক স্বস্তি দিয়ে আরো অগ্রগতির লক্ষে কাজ করতে উৎসাহ ও রসত যোগাব। আগামীর কল্যাণের তরে জনমত ও উন্নয়নকে একসূত্রে গেঁথে তুলতে এর দায়ভার জনতার কাধে ছেড়ে দিব। উন্নয়ন ও জনমতকে কখনো একসূত্রে আবদ্ধ করবো না বরং সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্বকে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের তরে নিবেদিত রাখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.