চাকরি বাঁচাতে দ্বিগুণ কাজে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা

প্রশান্তি ডেক্স॥পোশাক শিল্প কারখানাগুলো নিয়োগ বন্ধ রাখায় বেড়েছে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা। কাজের সন্ধানে কারখানাগুলোর ফটকে ঘুরছেন বেকার শ্রমিকরা। অন্যদিকে চাকরি বাঁচাতে দ্বিগুণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন কারখানাগুলোতে নিয়োজিত শ্রমিকরা। মজুরি ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনবল নিয়োগে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে কারখানাগুলো। শিল্পাঞ্চল ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। তবে চলতি বছর কাজের মৌসুম শেষ হওয়াও একটি বড় কারণ বলে মনে করছে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।পুরনো বেকার শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে গ্রাম থেকে আসা নতুন শ্রমিকরা। নতুন শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা না থাকায় কাজও মিলছে না। আর পুরনো শ্রমিকদের মধ্যে যারা ঈদ কিংবা অন্য কোনো কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা ফিরে এলেও পুরনো কাজ ফেরত পাচ্ছেন না।শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, আগে কাজ ছেড়ে কয়েক মাস বাড়ি থেকে এলেও শিল্পাঞ্চলে কাজ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন কাজ ছেড়ে দিলেই আর কাজ পাওয়া যায় না। যখন কোনো শ্রমিক কাজ ছেড়ে যায়, তখন কোম্পানিগুলো অল্প শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদনের নীতি গ্রহণ করে।কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদনের এই প্রচলন শুরু হয় মূলত এ বছরের জানুয়ারি থেকে। ওই সময় থেকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা কার্যকর হয়। এরপর থেকেই অধিকাংশ কারখানা শ্রমিক নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন শুরু করে। কোনো শ্রমিক কাজ ছেড়ে গেলেই ওই পদে আর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো বেকার এক শ্রমিক আয়েশা আক্তার। সেলাইয়ের কাজে পারদর্শী। তিনি বলেন, ‘ভাবছিলাম ঈদের পর সহজে একটা চাকরি পাওয়া যাবে। কিন্তু ঈদের পরেও লোক নিচ্ছে না। আজ এই কারখানায় তো কাল ওই কারখানায় ঘুরছি। কিন্তু চাকরি পাচ্ছি না।’রবিউল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘ঢাকা ইপিজেডের দু একটি কারখানায় কিছু শ্রমিক নিচ্ছে। পাঁচজন শ্রমিক নিলে ২০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। যারা অতিরিক্ত কাজের টার্গেট পূরণ করতে পারছে শুধু তারাই কাজ পাচ্ছে। টার্গেট পূরণ করতে না পারলে বের করে দেয়া হয়।’শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কারখানার প্রধান ফটকে ‘কর্ম খালি নেই’ নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চাকরিপ্রত্যাশীদের চাপ সামলাতে এমন নোটিশও কাজে আসছে না। নোটিশ দেখার পরও বেকার শ্রমিকরা কাজের আশায় প্রতিদিনই কারখানার সামনে ভিড় করছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি পোশাক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর পর থেকে নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আগে সুইং অপারেটররা একজন করে সহযোগী পেতেন। এখন কোনো সহযোগী দেয়া হয় না। আগের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনকার লক্ষ্যমাত্রাও দ্বিগুণ।গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, নিয়োগ যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত কাজের চাপে বর্তমানে শ্রমিকরা নিষ্পেষিত। একজন শ্রমিককে দিয়ে দুজনের কাজ করানো হচ্ছে। বেতন বাড়ানোর পর থেকে এই অসাধু উপায়টি অবলম্বন করছে মালিকপক্ষ। চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত কাজ করছেন শ্রমিকরা। এজন্যই মূলত চাকরি পাচ্ছেন না বেকার শ্রমিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.