সমঝোতায় মুক্তি চান না খালেদা জিয়া দিকনির্দেশনা পেতেই ৭ এমপির সাক্ষাৎ

প্রশান্তি ডেক্স॥ পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক কোনো ‘সমঝোতা’ কিংবা ‘আপসকামিতা’র মধ্য দিয়ে কারাবন্দিত্ব ঘোচাতে চান না বেগম খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদনেরও তিনি ঘোরবিরোধী। অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন, একমাত্র আইনি পথেই তার মুক্তি প্রাপ্য। পরপর দুই দিনে বিএনপির সাত সংসদ সদস্য কারবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে তার এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার সাথে হঠাৎ করে সাত এমপির সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এই সাক্ষাৎকে সমঝোতার অংশ হিসেবে বলার চেষ্টা করছেন। তবে বিএনপিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েই এমপিরা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো রহস্য কিংবা সমঝোতার বিষয় নেই। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তির বিষয়টি নতুনভাবে দলীয় এমপিদের মাধ্যমে ফোকাস করতেই এই সাক্ষাতের উদ্যোগ।
বিএনপি চাচ্ছে- নতুন করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আগে দলীয় যেসব পথ খোলা আছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলে বিএনপির যারা বন্ধু কিংবা শুভাকাক্সক্ষী রয়েছেন, তাদের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি তুলে ধরা হচ্ছে। একই সাথে কিছু কর্মসূচিও নেয়া হবে; যাতে করে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। বিএনপির সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যোগ দিয়েছি। অন্য দিকে দীর্ঘ দিন ধরে পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ বেগম জিয়ার সাথে দেখা করতে পারছিলেন না। এ কারণে আমরা সংসদ সদস্যরা উদ্যোগী হয়ে নেত্রীর সাথে দেখা করেছি। এই সাক্ষাতের সাথে সমঝোতার কোনো বিষয় কিংবা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সাথে আমরা একসাথে পার্লামেন্টে বসছি, প্রতিনিয়ত দেখা হচ্ছে, সেহেতু এই স্পেসটাকে আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমরা বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আরো সামনে অগ্রসর হবো। এ ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে, আমরা আগামীতে তাও নেবো।
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সমঝোতার কোনো প্রশ্নই এখানে নেই। আমরা সাতজন এমপি আমাদের নেত্রীর সাথে দেখা করে তার দোয়া ও দিকনির্দেশনা পেতে চেয়েছিলাম। যার অংশ হিসেবে আমরা প্রথমে স্পিকারের সাথে কথা বলি। স্পিকার আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে পার্লামেন্টে আমাদের কথা হয়। তিনি আবেদন করতে বলেন। আবেদনে আমাদের সব এমপির স্বাক্ষর রয়েছে। যেহেতু একসাথে চারজনের বেশি দেখা করার অনুমতি নেই, সে কারণে আমরা দুই ভাগে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করি।
রুমিন ফারহানা অত্য কড়া ভাষায় বলেন, আপস শব্দটি বেগম খালেদা জিয়ার অভিধানে নেই। যারা এসব প্রচার করছেন, তারা আসলে দুঃস্বপ্ন দেখছেন। বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ, কিন্তু তার মনোবল এখনো অটুট। এক-এগারোর সময় তিনি বলেছিলেনÑ ‘এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই।’
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হেঁটে জেল খানায় গেছেন। অথচ তিনি এখন দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেন না, একা কোনো পোশাক পরতে পারেন না, কিছুই খেতে পারেন না। সরকারকেই এই দায় নিতে হবে। তবে অসমর্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে একাধিক শর্তের কথা ভাবছে। এর মধ্যে রয়েছে- বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রাউন্ডে মুক্তি পাবেন কিন্তু তাকে বিদেশে চলে যেতে হবে। অথবা এক-এগারোর সরকারের সময় রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে পারবেন না উল্লেখ করে তারেক রহমানকে যেভাবে আদালত মুক্তি দিয়েছিল, সেভাবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো নিশ্চয়তা তারা পাচ্ছে না।
বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে আবারো আদালতের দ্বারস্থ হবেন বিএনপির আইনজীবীরা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট হাইকোর্ট বিভাগে। প্রথমে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আশা করছি, এই দুই মামলায় জামিন পাবেন বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ছয়তলায় চিকিৎসাধীন। বিএনপির অভিযোগ, সুচিকিৎসা না দিয়ে খালেদা জিয়াকে সরকার মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
বিএনপির সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা পালাঁমেন্টে যোগ দিয়েছি। অন্য দিকে দীর্ঘ দিন ধরে পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ বেগম জিয়ার সাথে দেখা করতে পারছিলেন না। এ কারণে আমরা সংসদ সদস্যরা উদ্যোগী হয়ে নেত্রীর সাথে দেখা করেছি। এই সাক্ষাতের সাথে সমঝোতার কোনো বিষয় কিংবা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সাথে আমরা একসাথে পার্লামেন্টে বসছি, প্রতিনিয়ত দেখা হচ্ছে, সেহেতু এই স্পেসটাকে আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমরা বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আরো সামনে অগ্রসর হবো। এ ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে, আমরা আগামীতে তাও নেবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.