প্রশান্তি ডেক্স ॥ শোকের তীব্রতা যতো, তার চেয়ে বেশি উত্তাপ বিক্ষোভের। আবরার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গতকালই বুয়েটসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। চার দফা দাবিতে আজ সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। সাধারণ শির্ক্ষার্থীদের এ চার দফা দাবি হলো, দ্রুত খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও আজীবন বহিষ্কার, আবাসিক হলগুলোতে র্যা গের নামে ও ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিতকরণ, আগের ঘটনাগুলোর বিচার, নিহত আবরার ফাহাদের মামলার ব্যয়ভার বহন এবং তার পরিবারকে ব্যয় চালানোর মতো খরচ প্রদান। আজ দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও সংহতি সমাবেশ করবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। আবরার হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে দুদিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আগামীকাল ৯ অক্টোবর বুধবার দেশের সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে সংগঠনটি। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেশের সব থানা, পৌরসভা ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ হবে। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল কর্মসূচী সফল করতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল বুয়েটের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন প্রবেশপথ বন্ধ রাখা হয়। নিরাপত্তা বজায় রাখতে ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান করছে। গতকাল দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে ঢাবি ক্যাম্পাসে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। রাজু ভাস্কর্য থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মিছিলে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। এ সময় তিনিসহ অনেকেই বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ‘আবরার হত্যার পেছনে ছাত্রলীগের অতিমাত্রায় ভারতপ্রেম প্রেরণা জুগিয়েছে। দেশপ্রেমিক আবরারের ভারতবিদ্বেষী স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তাকে খুন করা হয়েছে।’ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এরপর মিছিলটি ঢাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বুয়েট ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘জানি বিচার হবে না, তবুও বিচার চাই’, ‘বিজেপির দালালরা; হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, আবরার হত্যাকারিদের ফাঁসি চাই’, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হলে হলে দখলদারিত্ব; বন্ধ করো, করতে হবে’ প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল মোতালেব জুয়েল অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। গতকাল বিকেলে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এ সময় সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।গতকাল দুপুরে এ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে মানববন্ধনে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। এতে বিভিন্ন বিভাগের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামপন্থি বেশ কয়েকজন শিক্ষক যোগ দেন। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। আবরার হত্যার বিচার চেয়ে ৩০ মিনিট পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। বেলা ৩টার দিকে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে আবরার হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউশ সানি। গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাতে খবর পাওয়ার পরই আমি সেখানে যাই। শুনেছি কয়েকজন তাকে ওই রুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাদের নাম বলছে সে হিসেবে যারা মারধরে জড়িত সেখানে ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতাও ছিলো।’ছাত্রসমাজের পাশাপাশি সব শ্রেণীপেশার মানুষ ফুঁসে উঠেছেন আবরার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে। সামাজিক গণমাধ্যমে ফেসবুকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত রোববার রাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল বুয়েট ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ১৯ জনকে আসামি করে গতকাল রাতে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন তার বাবা বরকতুল্লাহ। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।