আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ মাস পাঁচেক আগে চার লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে যান কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর যুবক মো. রুবেল। পাঁচ মাসের মাথায় গত শনিবার রাতে আরও ১১৯ বাংলাদেশি কর্মীর সঙ্গে খালি হাতে দেশে ফেরেন তিনি। রুবেলের আকামা ও ভিসার মেয়াদসহ প্রয়োজনীয় সব বৈধ কাগজ থাকার পরও সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠায়। তার মতো অন্তত ১২ হাজার বাংলাদেশিকে চলতি বছরে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব, যাদের অধিকাংশেরই ছিলো বৈধ কাগজ।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের আটক করে দেশে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আগামী মাসে দু’দেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুটি শক্তভাবে তুলে ধরবে । রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, সৌদি সরকারের অভিযোগ, তারা চাকরি না করে রাস্তায় হকারের কাজ করছে, সবজি বিক্রি করছে। সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ অভিযোগ ঠিক। তবে কর্মীরা বলছেন, তারা চুক্তি মেনেই চাকরি করছেন। তাদের এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ কম। রুবেল বলেন, গত ১০ মে আমি সৌদি আরব যাই। এক মাস পর মক্কায় আল রাইমিনা নামে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি পাই। মাসিক বেতন ছিল হাজার পঁচিশেক টাকা। ভালোই কাটছিলো তার দিন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কাজ থেকে ফেরার পর মেসের কাছের দোকানে গিয়েছিলেন সদাই করতে। সেখানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিলো- তা এখনও জানেন না রুবেল। অভিযোগ আরবিতে লেখা ছিলো। গ্রেপ্তারের পর তাকে ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে রাখা হয়, যা সফর জেল নামে পরিচিত। সেখানে সৌদি আরব দূতাবাসের কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তার বিরুদ্ধে রাস্তায় সবজি বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে। রুবেলের নিয়োগকারী কর্মকর্তাও কিছু করেননি। কারণ, এর আগেই তাকে দেশছাড়া করতে তার আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। শুধু রুবেল নন, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব থেকে ফেরা বাংলাদেশি কর্মীদের প্রায় সবার গল্প একই রকম। গত বৃহস্পতিবার ১৩০ জন ও শনিবার রাতে ১২০ জন দেশে ফিরেছেন। তাদের একজনের বৈধ কাগজ ছিলো না। বাকিদের আকামার মেয়াদ থাকার পরও পুলিশ ধরে ফেরত পাঠিয়েছে। রুবেলকে সৌদি আরবে পাঠানো ব্রাহ্মণবাড়িয়া ওভারসিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এন হুদা খাদেম বলেন, তার দেশে ফেরার বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। কর্মী বিদেশ যাওয়ার পর তার সঙ্গে নিয়োগ কর্মকর্তা বা নিয়োগকারী দেশ জোরজুলুম করলেও রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিকার করার ক্ষমতা নেই। এসব দেখতে হবে দূতাবাসকেই। নবনিযুক্ত প্রবাসীকল্যাণ সচিব মো. সেলিম রেজা বলেছেন, সৌদি থেকে কর্মীদের দেশে ফেরার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে রয়েছে। বৈধ কাগজধারী কোনো কর্মী যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। এদিকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে সৌদি সরকারের কাছ থেকে জবাব নেয়া হয়। সৌদি সরকার ভিডিও ও ছবিসহ দূতাবাসকে প্রমাণ দিয়েছে, তাদের দেশে পাঠানো বাংলাদেশী কর্মীরা ভিক্ষাবৃত্তি ও হকারের কাজ করছে। এসব ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে আর এগোনো সম্ভব হয় না। ২০১৭ সালে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ বাংলাদেশি কর্মী সৌদি যান। পরের বছরে যান দুই লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গিয়েছেন দুই লাখ ৩৪ হাজার ৭১ জন। ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরে প্রায় ১২ হাজার কর্মী দেশটি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আরও বহু কর্মী নিজ উদ্যোগে ফিরে এসেছেন। তাদের সংখ্যাটি অজানা।