অন্যায় করে না বা ক্ষমতা দেখায় না এমন কেউ কি আছে? প্রতিকার…

হত্যা শব্দটি শুনতে যেমন খারাপ ঠিক তেমনি দেখতেও খারাপ, যা দেশের সংবিধান স্বীকৃত এবং আইন দ্বারা অপরাধ হিসেবে গণ্য এমনকি সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে এবং তাঁর আইন দ্বারা অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যারয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্র হত্যা স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র হত্যাসহ আরো যেসকল হত্যা সংঘটিত হয়েছে তার কোনটিতেই আমার, আপনার, সবার কাছে হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পর্শী। আমরা কেউই এই হত্যাকে সমর্থন করি না এমনকি এই ধরণের হত্যা শুনতে ও দেখতে কামনা করি না। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে যেন এই ঘটনার বাস্তবতা বার বার ফিওে আসে আমাদেও সামনে।
আবরার থেকে শুরু তওে পুর্বে সংঘটিত সকল হত্যার কি ন্যায় বিচার হয়েছে? তবে কিছু কিছু হত্যা মামলার বিচার হয়েছে আবার কিছু কিছু প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। আবার কিছু কিছু প্রমানের আভাবে তামাদি হয়েছে।

তাজুল ইসলাম॥ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব (আশরাফুল মাকলুকাত)। এই শ্রেষ্ট্র্রত্ব দিয়ে খোদা তায়ালা মানুষকে ক্ষমতা ব্যবহার করে পৃথিবীকে নিজেদের শাষনের অধিনে আনতেই নিয়োজিত করেছেন। মানুষকে ব্যবহার করেই তিনি এই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। তবে এইখানে ব্যতিক্রম হলো যে, সৃষ্টিকর্তার আদর্শ, ইচ্ছা, আকাঙ্খা ও অভিপ্রায় থেকে সরে গিয়ে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের ইচ্ছামাফিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ্য হয়ে আজ নিজ নিজ সার্ম্রাজ্য ঘরে তুলেছেন। তাই এই নিজ নিজ সা¤্রাজ্যের পতন ও বিপর্জয় আমাদের দেখতে হচ্ছে অহরহ। আমাদের দৃষ্টিসীমায় এখন ক্ষমতা ব্যবহারের দৃশ্যায়ন বিরাজমান। তবে কারো ক্ষমতা দেখানো মঙ্গলের জন্য আবার কারা ক্ষমতা দেখানো অমঙ্গলের জন্য। ন্যায়ের মানদন্ডের কাটায় এখন ক্ষমতা দেখানোতে অন্যায়ের পাল্লাই ভারি। এই ভারি পাল্লাকে হালকাতে পরিণত করা সময়ের প্রথম দাবী। এই দাবীকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কিভাবে আমরা ক্ষমতা দেখাই: কেউ সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে; কেউবা আবার উচ্চ পর্যায়ের কারো আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে অথবা আস্কারা পেয়ে। কেউবা আবার দলীয় পদের দোহাই দিয়ে; অথবা পদের দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে। কেউবা আবার ঘনিষ্ট সহচর, বন্ধু অথবা পরিচিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে। কেউবা আবার আত্মীয়তার সম্পর্ককে পুজি করে। কেউবা আবার রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কেউবা আবার প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে। বিভিন্নভাবে আমরা ক্ষমতা দেখাই এবং কার্যসিদ্ধ করে থাকি।
তবে যাদের কোন মহলের সঙ্গেই যোগসূত্র নেই এমনকি সমাজে নিগৃহীত ও অসহায় তারাও কিন্তু ক্ষমতা দেখায়। কথা হলো তারা কিভাবে দেখায়: তারা তাদের আশে পাশের লোকদের উপর ক্ষমতা দেখায়। কখনো কখনো সমাজের কোন ক্ষমতাবান অথবা বিত্তবান লোকের ছত্রছায়ায় থেকে ক্ষমতা দেখায় এবং পাপে নিমজ্বিত হয়। কখনো কখনো ভালমানুষের লেবাস ধারন করে সমাজের নিয়ামকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে তাদের করুণায় থেকে ক্ষমতা দেখায় ও অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো সামর্থের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত কিছু করার লক্ষে ক্ষমতা দেখায়। কখনো কখনো অন্যের পরামর্শে অর্থের প্রয়োজনে ক্ষমতা দেখিয়ে অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ে। স্বশিক্ষা এবং ভাল’র চর্চার অভাবে অথবা সামাজিক নেতিবাচক বিপর্যয়ের কারণে অর্থের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে থাকে। এভাবেই আমাদের সমাজের সকল স্তরেই পর্যায়ক্রমে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। কেউই বলতে পারবে না যে, আমি ক্ষমতা দেখায়নি বা অন্যায় করিনি। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে এবং তা রয়েছে বলেই পৃথিবীর ভারসাম্য এবং স্বকীয়তা এখনও টিকে আছে। তবে ক্ষমতা এবং অন্যায় এখন একসূত্রে গেঁথে গেছে। তাই এর যোগসূত্রীতায় ছেদ ঘটাতে হবে। দুটিকে আলাদা করে আলাদা আলাদা রূপদান করতে হবে। তাহলেই ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এর ফলে সৃষ্ট পাপের আসক্তি কমে আসবে।
আমাদের সমাজে ও রাষ্ট্রের মধ্যে যে ক্ষমতা কেন্দ্রিক অপব্যবহারের চর্চা বিরাজমান রয়েছে তা কিন্তু একদিনে হয়নি। বরং হয়েছে স্বাধীনতার পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চার অব্যাহত দৃশ্যায়নের ফলে। যা আজও দৃশ্যমান। তবে এর লাগাম টেনে ধরে ইতিবাচক ভাবমূর্তির চর্চা এবং ইতিবাচক মঙ্গলায়নের লক্ষে সাবজনীন কর্মকান্ড বিরাজমান রেখে নতুন দিনের, নতন সৃজনশীল কর্মের এবং ধারাবাহিতার লক্ষে চলমান ইতিবাচক চর্চাকে অব্যাহত রাখলে আগামীর ফলপ্রসু কল্যাণ সুনিশ্চিত।
কাজ শুরু হয়েছে এবং এর শেষও করতে হবে। তাই সকলেই শুভলগ্নে শুভসুচনায় ঐক্যবন্ধ থেকে চলমান কর্মচাঞ্চল্যকে এগিয়ে নিতে যার যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন। আমরা যা দেখছি এবং শুনছি এমনকি ভবিষ্যতে আরো যা দেখবো সবই হবে জাতির আগামীর কল্যাণের তরে। ভয়ের কারন নেই এমনকি হতবম্ব হওয়ারও দরকার নেই; যা প্রয়োজন; যা যা করণীয় তাই হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে; এইক্ষেত্রে সফলতায় পৌঁছা পর্যন্ত ধৈর্য্যধরে অপেক্ষা করতে হবে। চলমান কার্যক্রমকে সহযোগীতা করতে হবে। নেতিবাচক ব্যক্তিস্বার্থ্যকে জলাঞ্জলী দিয়ে ইতিবাচক রাষ্ট্রীয় স্বার্থ্য বা জনস্বার্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে স্ব স্ব ভুমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
নেতিবাচক সমালোচনায় কোলপ এটে ইতিবাচক সমালোচনায় নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। কোনভাবেই ভুলপথে পরিচালিত হওয়ার রাস্তায় হাটা যাবে না এমনকি যারা হাটছে তাদের পক্ষাবলম্বন ও সহযোগীতা করার মনোভাব পরিহার করতে হবে। নব উদ্যমে পুরোনো নেতিবাচক পেশীশক্তিকে বিদায় জানিয়ে নতুন দিগন্তের সুচনাকে তরান্বিত করতে হবে। এই উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বখে যাওয়াদের সুস্থ্যধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতির কল্যানের কাজে অংশীদার হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তবে একজন মানুষ কখনো খারাপ নয় বরং তার সৃষ্ট কৃতকর্মটুকুই খারাপ। খারাপ কৃতকর্মের ঐ মানুষটিকে খারাপ না বলে শুধরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ গতিশীল রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। ছোট অন্যায় আর বড় অন্যায়; দুটোই আন্যায় এবং পাপ। তাই অন্যায় এবং পাপকে বড় বা ছোট আকারে না দেখে বরং পাপ বা অন্যায় হিসেবেই দেখা উচিত।
কিভাবে এই নেতিবাচক চর্চা থেকে অব্যাহতি পেতে পারি। আসলে আমরা আমাদের স্ব স্ব কর্মের ক্ষেত্রে সততা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহার করে দায়িত্ব পালন করলে আর প্রয়োজন হয় না নেতা, কর্মকর্তা বা অধিনস্ত কারো সাহায্যের। যখনই সময়ের কাজ সময়ে হয় না বা কাজের জটলা পাকিয়ে জট সৃষ্টি হয় তখন মানুষ ছোটাছোটি করে ক্ষমতাধর কারো স্মরণাপন্ন হতে বা উপরস্ত কোন কর্মকর্তা বা প্রভাবশালী কারোর সুপারিশের জন্য। অথবা নৈতিকতাকে বাইপাস করে অনৈতিকতাকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নিতে এবং সময়ের সাথে সাথে কাজটুকু শেষ করতে। যদি আমরা দিনের কাজ দিনেই শেষ করি বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কখা এবং কাজের সমন্বয় সাধন করি তাহলে তৃতীয় শক্তির আভির্ভাব ঘটে না এমনকি কারো সন্ধান করা বা উপরস্ত কর্মকর্তার স্মরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাহলে বিপর্যয় কোথায় আমাদের অলসতা, ধীরগতি, জট পাকানোতে, অথবা ইচ্ছাকৃত সমস্যা সৃষ্টি করে অনৈতিকতাকে স্বাগত জানিয়ে রুটিনে পরিণত করাতে। আসুন আমাদের দৈনন্দিন কাজে গতিশীলতা আনয়ন করে সময়কে গুরুত্ব দিয়ে সময়মত কাজ সম্পন্ন করি তাহলে অপসংস্কৃতির অপছায়া নেতিবাচকতা, অনৈতিকতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অথবা তৃতীয় কোন শক্তির ধারস্ত হওয়ার নেতিবাচক সংস্কৃতি বিতাড়িত হবে এবং দেশ, জাতি, সমাজ ও পরিবারের সুশৃঙ্খলতা এবং নিতি ও ইতিবাচকতা মিলে সামষ্টিক থেকে সামগ্রীক কল্যানের উন্নয়ন সাধিত হবে এবং সমাজ, দেশ ও জাতির মাঝখান থেকে সকল অপবাধ ও দুর্নাম ঘুচে যাবে এবং দিশার দিশারী হিসেবে আমরা এগিয়ে যাবো সোনালী স্বপ্নের সোনার বাংলার উন্নত এবং উন্নয়নশীল মর্যাদার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে। অপসংস্কৃতির অপতৎপরতায় যা ভেসে আসছে তা ফেরত দেয়ার এখনই সময় এবং জাতির সামনে এক উর্বর সুযোগ। তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে সকলেই দল মত নির্বিশেষে এগিয়ে আসুন এবং আগামীর বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধ করতে স্ব স্ব অবদান এবং ভুমিকা রেখে নিজেকে ধন্য করে তুলুন। জয় হউক আমাদের সকলের এবং এগিয়ে যাক বাংলাদেশ চলমান ইতিবাচক গতিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.