আওয়ামী লীগেই জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৫ শতাধিক

প্রশান্তি ডেক্স॥ শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আওয়ামী লীগের যে অনুপ্রবেশকারীর নাম জমা পড়েছে, তারমধ্যে ৫০০ জনের বেশি জামায়াতের নেতাকর্মী। এরা জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে এসেছে এবং আওয়ামী লীগার হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আওয়ামী লীগের বদনাম করছে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই তালিকাটি দলে সাংগঠনিক কমিটিকে দিয়েছিলেন এবং তারা যাচাই বাছাই করে এর সত্যতা পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে তালিকা আছে সে তালিকাতে পাঁচ শতাধিক জামায়াতের মধ্যে ১২১ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ের কমিটির হয় নেতা অথবা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
এদের মধ্যে ৭৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রতীকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও উপজেলা চেয়ারম্যান।
আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে জামায়াতীরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেছেন যে, এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা। কারণ আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের অবস্থান সাংঘর্ষিক। সাধারণত অন্যান্য দল থেকে আওয়ামী লীগে অন্য দলের লোক যে আসে না তা নয়। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগে জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ বা অন্যান্য বামদল থেকে প্রচুর নেতাকর্মী এসেছে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কারণ জাসদ, কংগ্রেস পার্টি বা অন্যান্য বামদলগুলোর একটি আদর্শিক নৈকট্য রয়েছে। তাছাড়া জাসদ বা সিপিবি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গেই কাজ করেছে। এই বাস্তবতায় জামায়াত কীভাবে আওয়ামী লীগে ঢুকলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, এটা আমাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা। তাছাড়া ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের যারা এমপি হয়েছেন তারা নিজেদের অবস্থান সংহত করতে দলে জামায়াত এবং বিএনপির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, জামায়াতের যারা প্রবেশ করেছে তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু অভিযোগ ছিল। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ২০১১ সাল থেকে যখন আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে শুরু করে তখন থেকেই জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান শুরু হয়। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে মূলত তিনটি কারণে জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘটনা ঘটেছে।
প্রথমত:- তারা যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছে তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছে।
দ্বিতীয়ত:- আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী তাদের নিজস্ব বলয় তৈরি করার জন্য এবং দলে বিভক্তি তৈরির জন্য অন্যদল থেকে লোক এনেছেন। সেখানে তারা বাছবিচার করেননি।
তৃতীয়ত:- জামায়াত পরিকল্পিতভাবে জামায়াত আওয়ামী লীগের অবস্থানকে নষ্ট করার জন্য এবং আওয়ামী লীগের বদনাম ঘটানোর জন্য আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে।
যে কারণেই আওয়ামী লীগে প্রবেশ করুক না কেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জামায়াতভুক্ত আওয়ামী লীগ গঠন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং দলের সাধারণ সম্পাদককে ইতিমধ্যে এই তালিকা প্রদান করেছেন। যারা জামায়াত আছেন কোনমতেই যেন দলের মধ্যে তাদের স্থান না থাকে তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। প্রধামন্ত্রীর নির্দেশনার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটি এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগে জেলা পর্যায়ে, স্থানীয় পর্যায়ে যে সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হবে সেই সম্মেলনগুলোতে পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত যেসমস্ত জামায়াত আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে তাঁদেরকে চিহ্নিত করা হবে এবং তাঁদেরকে বের করে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামী কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ শুদ্ধরূপে আত্মপ্রকাশ করবে বলে ওই নেতা নিশ্চিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.