অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে বাঁচিয়ে প্রাণ গেল চিকিৎসকের

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল’- ভয়ঙ্কর ডাক্তার বিরোধী পাবলিক প্রপাগান্ডাকে নিজের জীবনের বিনিময়ে মিথ্যা প্রমাণ করে গেলেন ডাক্তার আববার আহমেদ। অপারেশন টেবিলে থাকা মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচিয়ে , অপারেশন সফল , সুসম্পন্ন করেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। এক্ষেত্রে মানবপ্রেমী ডাক্তার বাস্তবে নিজের অসুস্থতা স্বত্ত্বেও অপারেশন করতে এসেছিলেন। সে দায়িত্ব পালন করে রোগীর জীবন রক্ষা করেন। তারপর নিজেই প্রয়াত হলেন। রোগীকে বাঁচিয়ে তুললেও বাঁচলেন না তিনি । অপারেশনের শেষ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। প্রয়াত এই মহান জীবনদরদী ডাক্তার হলেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আবরার আহম্মেদ। ২০ অক্টোবর বরিশাল নগরীর বান্দ রোডস্থ রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে অপারেশনকালে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। কিন্তু চিকিৎসকের মহান দায়িত্ব পালনের পবিত্র ব্রত পালন করতে গিয়ে তিনি তা সহকর্মীদের বুঝতে দেন নি। সুন্দর ভাবে অপারেশন করে রোগীর পূণর্জীবন দান করেন। তারপর অসুস্থতা বোধের কথা সহকর্মীদের জানালে তাৎক্ষনিক তাকে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই এই মহান মানবসেবীর মহাপ্রয়াণ ঘটে। এ এক পবিত্র মৃত্যু। নাক-কান-গলা বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবরার আহমেদ ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এর ২৬ তম অধ্যক্ষ ছিলেন। এর আগে দীর্ঘ সময় তিনি একই মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ে বুশরা আবরার ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক এবং ছোট মেয়ে প্রকৌশলী রাইসা আবরার আমেরিকায় থাকেন। দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ডাক্তার আবরার আহমেদে জানাযা শেষে সড়ক পথে ঢাকায় ধানমন্ডি ৬ নম্বরে তার নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। ডা. আবরার আহমেদ এর একান্ত সহকারী ফরিদ হোসেন জানান, ‘আবরার আহমেদ বরিশাল নগরীর সদর রোডস্থ শাহজাহান চৌধুরীর বাড়িতে বসবাস করতেন। গত শনিবার রাত থেকে তিনি ডায়েরিয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন। তার মধ্যে সকালে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এক রোগীর অপারেশন করেন নিবিড় দায়িত্বশীলতায়। ৩ ঘন্টা ব্যাপী অপারেশনের শেষ পর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। কাজ শেষ করেন। তাপর তিনি বুকে হাত দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীদের সহায়তা চান। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্বজনরা জানান, ‘ডা. আববার আহমেদ’র এর ঠিকানা কুমিল্লায়। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ৫ম বর্ষে থাকাবস্থায় সেখান থেকে তিনি বদলি হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে আসেন। ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে শেবাচিমে ৪র্থ ব্যাচ হিসেবে ইন্টার্ন কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে শেবাচিম হাসপাতালের বিভিন্ন পদের দায়িত্ব পালন তিনি। চাকুরি জীবনের এক পর্যায়ে তিনি শেবাচিম হাসপাতালের ইএনটি’র আরএস ছিলেন। সেই থেকেই বরিশালে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে বরিশালে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর খবর পেয়ে শেবাচিম হাসপাতালের সাবেক ও বর্তমান সকল পর্যায়ের চিকিৎসক , সাধারণ উপকারভোগী মানুষ হাসপাতালে ছুটে যান তাকে শেষ বিদায় জানাতে। এই মানবসেবীর প্রয়াণে বরিশালে সর্বস্তরে কান্নার রোল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.