নোয়াখালীবাসীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। নোবিপ্রবি, মাইজদী শহর ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনীসহ মোট ৩০টি কেন্দ্রে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ৩০টি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৮৫টি আসনের বিপরীতে ৬৮ হাজার ৬৬০ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। প্রতি আসনের বিপরীতে ৫৩ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় লড়ছেন। সএদিকে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীসহ সব মিলে প্রায় দেড়লাখ লোকের সুবিধার্থে জেলার বিভিন্ন স্থানে খোলা হয়েছে তথ্য সহায়তা কেন্দ্র ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প। এসব কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়োজিত রয়েছে। একই সঙ্গে যানজট, যাতায়াত ও নিরাপত্তা বিষয়েও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতাসহ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য করা হয়েছে খাবার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে নোয়াখালীবাসীর আতিথেয়তায় খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, চৌমুহনীর চৌরাস্তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত চিরচেনা নোয়াখালী ভিন্ন এক রূপ ধারণ করেছে। এ যেন অতিথি বরণ করার সমস্ত আয়োজন। কোনো ভিআইপি আসলে রাস্তা-ঘাটের যে পরিস্থিতি দেখা যায় সে রকমই একটি পরিবেশ। পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহনের চালকও সজাগ। রাস্তার দুই পাশে বেশ কয়েকটি তথ্য বুথ। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক যুবকরা রয়েছেন। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্কয়ার একেবারে যানজটমুক্ত। গাড়িগুলো দূরে দাঁড়িয় যাত্রী ওঠা-নামা করছে। একজন লাইনম্যান প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার সামনে এসে বলছেন কোনো বাড়তি ভাড়া নেয়া যাবে না। মাইজদী নতুন বাস স্ট্যান্ড থেকে রাস্তার দুই পাশে বেশ কয়েকটি বাস দেখা গেল। বাসগুলোর সামনে স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ছবি সংম্বলিত পোস্টার লাগানো। তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এ ভর্তি পরীক্ষায় যাতে শিক্ষার্থীরা ফ্রিতে এবং নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারেন তার জন্য ৬০টি বাস দিয়েছেন। বাসগুলো থেকে কন্ট্রাকটর আওয়াজ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার জন্য যারা যারা যেতে চান উঠে পড়ুন। আজ ভাড়া লাগবে না। তথ্য বুথ থেকেও কিছুক্ষণ পরপর মাইকিং করা হচ্ছে। কথা হলো বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তারা জানান, দেশের অনেক স্থানে গিয়েছেন। নোয়াখালীর মানুষের মতো এত অতিথিপরায়ন মানুষ আর কোথায় দেখনেনি। তাদের ধারণা ছিল নোয়াখালীর মানুষ একটু খারাপ। কিন্তু সেই ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেল ভর্তি পরীক্ষার সময় আসার কারণে। থাকা-খাওয়ার সব আয়োজন স্থানীয়রা করেছেন এটি ভাবতেই অবাক লাগে। তারা আরও জানান, গাড়ি থেকে নামার পর একেবারে থাকার জায়গা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, আবার রাতে সেখানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সকল প্রকার মানুষ যেভাবে তাদের খোঁজ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার। এটি অনুকরণীয় হয়ে থাকবে অন্যান্য জেলার জন্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সন্তনরা লেখাপড়ার সুযোগ পেলে ধন্য হবেন তারা। এখানে তাদের ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে থাকবে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, গত এক মাস ধরে ভর্তি পরীক্ষায় জন্য অনেক জেলায় গেছেন তারা। কিন্তু নোয়াখালীর মানুষের আতিথেয়তায় যে গুন তারা দেখেছেন এটি তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. দিদারুল আলম জানান, পরীক্ষাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু এ পরীক্ষায় আগতদের জন্য এমপি থেকে শুরু করে রিকশাচালক পর্যন্ত যে মানবিকতা দেখিয়েছন তা শুধু নোয়াখালী নয়, গোটা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
তিনি আরও বলেন,পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হচ্ছে। কোথায় কোনো সমস্যা নেই। অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.