প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ টিকে থাকার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো জাপান, চীন, বাংলাদেশ ও ভারত। গত সোমবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সুনির্দিষ্ট সময় পরপর প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতায় বদলে যায় জলবায়ু। মানুষ সৃষ্ট কারণেই এ স্বাভাবিক বদলের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে, বিশ্ব বহুদিন থেকে এক আকস্মিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শিল্পবিপস্নব পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। উষ্ণায়নের কারণে গলছে হিমবাহের বরফ, উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ঋতুচক্র। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি, স্থানচ্যুত হচ্ছে মানুষ। অভিবাসী কিংবা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে তারা। এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই সামনের কাতারে। গত অক্টোবরের শেষে বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যে পরিমাণ মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে এতদিন আশঙ্কা করা হতো, বাস্তবে এ সংখ্যা তার প্রায় চার গুণ বেশি। ওই গবেষণায় বলা হয়, ধারণার চেয়েও দ্রম্নতগতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বন্যাকবলিত হবে। গত সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব ওই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এ মুহূর্তে যে গতিতে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে তার চেয়ে কম গতিতে তা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকার। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো না গেলে বিশ্বের টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেন তিনি। গুতেরেস বলেন, নাটকীয়ভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো দক্ষিণ এশিয়া, জাপান, চীন, বাংলাদেশ ও ভারত। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সরকার, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীদের মতো অনুযায়ী এ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত গত তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখা সম্ভব করতে হলে ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের কার্বন নিরপেক্ষ হতে হবে আর পরবর্তী দশকের মধ্যে নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে ৪৫ শতাংশ। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতির প্রয়োজন বলে উলেস্নখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধ করা দরকার। ভবিষ্যতে কয়লাভিত্তিক নতুন পাওয়ার পস্নান্ট বন্ধ করা দরকার।’ এর আগে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশি শিশুদের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু নদী ভাঙনের এলাকা কিংবা এর কাছাকাছি থাকে। ৪৫ লাখ শিশুর বসবাস উপকূলীয় এলাকায়, সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের হুমকিতে থাকতে হয় তাদের। তাছাড়া খরার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৩০ লাখ শিশু। এসব ঝুঁকির কারণে গ্রাম এলাকার মানুষ শহরের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে। আর সেখানে যাওয়ার পর নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিশুদের। তাহলো জোরপূর্বক শ্রম কিংবা বাল্যবিবাহের ঝুঁকি। অভাবের তাড়নায় অনেকে শিশুশ্রমে লিপ্ত হচ্ছে। ভরণপোষণ চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক মেয়ে শিশুকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে পরিবার।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post