প্রশান্তি ডেক্স ॥ বাংলাদেশের সড়কে যানজটের কারণে পণ্যের রপ্তানি মূল্য বাড়ছে উলেস্নখ করে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন বলেছেন, রপ্তানি প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় মসৃণ পরিবহণ অবকাঠামো তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যানজটমুক্ত সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থার পাশাপাশি সাশ্রয়ী যোগাযোগমাধ্যম রেল ও জলপথের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গত বুধবার ঢাকারর্ যাডিসন হোটেলে বিশ্ব ব্যাংকের ‘মুভিং ফরওয়ার্ড: কানেক্টিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু সাসটেইন বাংলাদেশজ সাকসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে একথা বলেন মার্সি টেম্বন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ম্যাটিয়াস হেরেরা ড্যাপে। স্বাগত বক্তব্যে মার্সি টেম্বন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই প্রতিযোগিতায় যে দেশ যত বেশি কম দামে পণ্য দিতে পারছে, সে দেশ রপ্তানি বাজারে ততই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে পণ্য পরিবহণে ‘লজিস্টিক’ সহায়তা বাড়িয়ে বিশেষ করে যানজট কমানোর মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ ব্যয় কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’ প্রায় দুই দশক বিশ্ব ব্যাংকে কাজ করে আসা টেম্বন বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগী দেশগুলো রপ্তানি পণ্য পরিবহণ অবকাঠামো উন্নয়ন করে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো মসৃণ সংযোগ অবকাঠামোতে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ খাতের যানজট রপ্তানি পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানোর খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের প্রায় ৭ শতাংশ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বর্তমান অবস্থায়ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ আছে। এ ছাড়াও বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
‘কিন্তু আমদানিকারকরা কম দামে পণ্য চায়। যে দেশ কম দামে পণ্য দিতে পারে তারা সেই দেশ থেকেই পণ্য কেনে। রপ্তানি বাড়িয়ে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কম খরচের পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটান।’ রপ্তানি পণ্যের পরিবহণ ব্যবস্থাসহ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করে বিনিয়োগ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিনে মার্সিয়া টেম্বন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে মসৃণভাবে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে মশিউর রহমান বলেন, ‘সরকার দ্রম্নত যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে নানামুখী চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ভারতের আসামে পণ্য পরিবহণের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘আমরা মনে করি, শুধু পর্যটন শিল্প নয় সকল ধরনের যোগাযোগ বিশেষ করে রপ্তানিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংযোগ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ভারত সরকার চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ওই প্রস্তাব এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সেমিনারে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে ম্যাটিয়াস হেরেরা ড্যাপে বলেন, বর্তমানে কম খরচে এবং কম সময়ে রপ্তানি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রপ্তানি সক্ষমতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। সড়ক, রেল ও জলপথ এই তিন খাতেই পণ্য পরিবহণে মসৃণ অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় পণ্য পরিবহণের সময় ও ব্যয়- দুটোই বেশি। যেমন একটি ট্রাক ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক যানজট পেরিয়ে পৌঁছালেও এতে ব্যয় হচ্ছে অনেক বেশি। ‘কারণ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ ট্রাককে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় আবার খালি ফেরত আসতে হচ্ছে। বন্দর, উদ্যোক্তা ও পরবিহণ ব্যবস্থার সমন্বয় না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে।’ পণ্য পরিবহণ সহজ করতে রেলপথ ও নৌপথের অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘পণ্য পরিবহণে টেকসই ব্যবস্থা হচ্ছে রেল যোগাযোগমাধ্যম। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল পরিবহণের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণ ব্যয় বাড়ছে। ‘এছাড়া পণ্য পরিবহণে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ব্যবস্থা হচ্ছে জলপথ। এ পথে কম খরচে ও যথাসময়ে রপ্তানি পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। তাই বাংলাদেশ সরকারকে দেশের প্রয়োজনীয় স্থানগুলো যাচাই-বাছাই করে নৌ অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’