বা আ ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নেতাদের ত্যাগের রাজনীতির মন্ত্র দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আমাদের সবাইকে এ কথাটা মনে রাখতে হবে- ভোগে নয় ত্যাগেই হচ্ছে মহত্ব। কী পেলাম কী পেলাম না, সে চিন্তা না। “কতটুকু মানুষকে দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, কতটুকু মানুষের কল্যাণে কাজ করলাম, সেটাই হবে রাজনীতিবিদের চিন্তা-ভাবনা। আমাদের যুব সমাজকে আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে চাই।” যুবলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের জন্য ওই নেতাদের দায়ী করে কংগ্রেসের উদ্বোধন অধিবেশনে বক্তৃতা দেন সংগঠনটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। শেখ হাসিনা বলেন, “একটা দেশ গড়ে তুলতে হলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আমাদের যুব সমাজের মেধা, তাদের শক্তি, তাদের মননকে কাজে লাগানো। একজন রাজনীতিবিদ যে হবে, তার জীবনের সেই আদর্শ থাকতে হবে।” বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে যুবলীগের নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। আদর্শের মধ্য দিয়েই কিন্তু একটা সংগঠন যেমন গড়ে উঠে, দেশকেও কিছু দেওয়া যায়। এই কথাটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। “উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই সংগঠন গড়ে ওঠে নাই। সংগঠন গড়ে উঠেছে নির্যাতিত মানুষ, শোষিত মানুষ, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করবার লক্ষ্য নিয়ে। সেই আদর্শ থেকে কখনও যদি কেউ বিচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে দেশকে কিছু দিতে পারে না।” শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্নীতি করে টাকা বানাতে পারে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী করে অনেক টাকা বানাতে পারে। এই টাকা দিয়ে হয়ত জৌলুস করতে পারে, চাকচিক্য বাড়াতে পারে। কিন্তু সেটা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা যায় না। তাতে সম্মান পাওয়া যায় না।” লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে একজন রাজনীতিক কীভাবে আদর্শ নিয়ে চলতে পারেন, তা জানার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যেসব প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, তা নিয়ে করা প্রকাশনাগুলোও পড়ার পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা পারলাম। কেন পারলাম? আমরা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছি দেখেই পেরেছি।” মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ সততার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবেলার কথাও বলেন তিনি। “আমাদের উপর অনেক বদনাম দিতে চেয়েছিল। এক পদ্মা সেতু নিয়ে যখন অভিযোগ এনেছিল বিশ্ব ব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম যে নিজের অর্থায়নে করব এবং আমরা আজকে তা প্রমাণ করেছি নিজস্ব অর্থায়নেও আমরা করতে পারি। সততার শক্তি হচ্ছে সবচেয়ে বড়।” এই প্রসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দেখা গেল একটা ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে পারে না, এদিকে নোবেল প্রাইজ পায়, অথচ একটা ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়ে না। “সেই পদ কেন বয়সের কারণে ছাড়তে হল, সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পদ্মা সেতু বন্ধ করার জন্য আমেরিকায় গিয়ে ধরনা দিল। তারা আমাদের উপর দোষ দিলো দুর্নীতির। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম এবং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি।” বিগত সংসদ নির্বাচনের সমালোচনার জবাবে ২০০৮ সালের ভোটে বিএনপির ফলাফল স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “সেই সময় বিএনপি-জামাত জোট মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল। তারা নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলে। তাহলে ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন করেননি। বিএনপি যদি এতই জনপ্রিয় সংগঠন হয়ে থাকবে, তাহলে মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল কেন? ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো কথা নেই।” দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিকার কালো মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বন্দিত্বের যে তুলনা বিএনপি নেতারা করেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বিএনপি নেত্রী, যিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে, তার তুলনা করে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে। আমি মনে করি, এতে নেলসন ম্যান্ডেলাকে অপমান করা হচ্ছে। কারণ নেলসন ম্যান্ডেলা তার জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে কারাগারে ছিলেন। দুর্নীতি করে কারাগারে যাননি। “এই ধরনের একজন নিকৃষ্ট, যিনি ক্ষমতায় থাকতে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। একবার না বারবার চেষ্টা করেছে হত্যাকান্ড চালাতে যারা অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে এদেশের সমাজকে ধ্বংস করেছে।” খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যার ছেলে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ২১ শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে সাজা প্রাপ্ত, মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। “তাদের সাথে এই ধরনের আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের তুলনা এরা কোন মুখে করে, সেটা আমার প্রশ্ন।” বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “তারা দেশের জন্য কিছুই করতে পারেনি। খুন করা, মানুষের উপর নির্যাতন করা, অত্যাচার করা এটাই তারা করতে পেরেছে। “বিএনপির আমলটাই ছিল জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস, বাংলা ভাই সৃষ্টি, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং এই ধরনের নানা ঘটনা। সমস্ত বাংলাদেশ সারা বিশ্বে তাদের সম্মান হারাল। পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হল বাংলাদেশ।” যুবলীগের এই কংগ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান চয়ন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন খসরু ও সাহারা খাতুন,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ ও এনামুল হক শামীম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ।