প্রশান্তি ডেক্স ॥ চিকিৎসার জন্য নিজের ফ্ল্যাটও বিক্রি করলেন এন্ড্রু কিশোর। রাজশাহীর ছেলে এন্ড্রু কিশোর নিজের শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। মাঝে মধ্যে ঢাকা শহরের কোলাহল ছেড়ে সেই বাড়ি গিয়ে থাকতেন। অবশেষে ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পেতে ফ্ল্যাটটিও বিক্রি করেছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন এন্ড্রু কিশোরের এক ঘনিষ্ঠজন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থ অবস্থায় গত ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত তার তিনটি সাইকেলে ১২টি কেমোথেরাপি সম্পন্ন হয়েছে এবং গত ২৬ নভেম্বর থেকে কেমোথেরাপির পরবর্তী সাইকেল শুরু হয়েছে। আরও তিনটি সাইকেলে ১২টি কেমোথেরাপি দিতে হবে বলে জানান চিকিৎসকরা। এখন চলছে সেই কেমোথেরাপি। প্রত্যেকটি কেমোর জন্য লাগছে ৯ লাখ টাকা। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ চিকিৎসা আরও প্রায় আড়াই থেকে তিন মাস চলবে। এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় এক কোটিরও বেশি টাকা খরচ করেছে তার পরিবার। প্রয়োজন আরও অনেক টাকা। জানা গেছে, এন্ড্রু কিশোর প্রথমত তার চিকিৎসার জন্য কারো কাছে হাত পাততে চাননি। নিজের জমানো টাকা দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু অবশেষে আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। কারো কাছে সহযোগিতা না চেয়ে নিজের ছোট্ট ফ্ল্যাটটিও বিক্রি করে দেন। ঢাকার তুলনায় রাজশাহী শহরে ফ্ল্যাটের দাম কম। ৩০ লাখ টাকার মতো দাম পেয়েছেন এই ফ্ল্যাটের। এখন সম্বল বলতে আছে তার মিরপুরের ফ্ল্যাটটি। সিঙ্গাপুর হাসপাতাল থেকে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার বাজেট দেওয়া হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এরই মধ্যে শিল্পীর পরিবার খরচ করেছে এক কোটি টাকারও বেশি। প্রয়োজন আরও অনেক টাকা। এই শিল্পীল পাশে দাঁড়িছেন অনেকেই। কিংবদন্তি এই শিল্পীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অবশেষে সংগ্রহ হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। বিষয়টি গত সোমবার নিশ্চিত করেন এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য কণ্ঠশিল্পী মোমিন বিশ্বাস। এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন ফরিদুর রেজা সাগর, সৈয়দ আব্দুল হাদী, হানিফ সংকেত, সাবিনা ইয়াসমীন, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, জেমস, অনন্ত জলিল, মমতাজ বেগম, মেয়র আতিকুল ইসলাম, বাদল রায়, দিলারা আলো, কবির বকুল, দিনাত জাহান মুন্নি, চন্দন সিনহা, পলাশ সাজ্জাদ, দিঠি আনোয়ার, জলের গান প্রমুখ। শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন, সাউন্ডটেক, অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়া, ক্রিশ্চিয়ান হাউজিং সোসাইটিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পীর চিকিৎসা সহায়তার জন্য ১০ লাখ টাকা দেন। এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠনের আবেদন করেছেন তার স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। ‘গো ফান্ড মি’ নামের ওয়েবসাইটে এটি করা হয়েছে। এই ফান্ডেও সহযোগিতা করছেন অনেকেই। এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া শত শত গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি, সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে, পড়ে না চোখের পলক ইত্যাদি। আশার কথা হলো গুণী শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসা এগিয়ে চলছে। চিকিৎসকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সবগুলো কেমো দেওয়া হলে সুস্থ হয়ে উঠবেন এই শিল্পী। এখন শুধু বাকি টাকা সংগ্রহের অপেক্ষা।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post