ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের কাঠেরপুল এলাকায় অবস্থিত আজগর আলী দাখিল মাদ্রসার সুপার মো. আবদুর রহমান সরকার মানিকের বিরুদ্ধে দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) বিকেলে আটককৃত সুপারকে নিয়ে মাদরাসায় যান দুদক টিম। সেখানে গিয়ে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেন। ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগে গ্রেফতার ও দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাত ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেনের অভিযোগ সহ ৬ মামলা হয়েছে সুপারের বিরুদ্ধে।
গত সোমবার (২ডিসেম্বর) উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভ’ইয়া জীবন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলমের নিকট সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন ক্ষুব্দ এলাকাবাসী। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভ’ইয়া জীবন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই মাদরাসায় যান। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে ১০৬ নাম্বারে কল করে সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি দুদককে অবহিত করেন। তারই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুদকের কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) মো.শফিকুল ইসলাম ও মো.সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম আসেন মাদরাসায়। প্রথমে তারা এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে বিকেলে তদন্ত টিম মাদরসায় যান। এ সময় উৎসুক ক্ষুব্দ জনতা মাদরাসা মাঠে অপেক্ষা করছিলো এবং সুপারের বিচারের দাবিতে মিছিল করে। কমিটি বিহীন প্রতিষ্ঠান চালানো, সভাপতির সই জাল করে টাকা উত্তোলন, নারী কেলেঙ্কারী, অবৈধ কাজের সাথে জড়িত সহ মাদ্রাসার ৫০টি গাছ বিক্রি করে টাকা আতœসাতেরও সত্যতা খুজে পান তদন্ত টিম। এসময় মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা সাবেক বিএনপি সাংসদ মিয়া আবদুল্লা ওয়াজেদ’র সাথে কথা বলেন দুদক টিম। তিনি জানান; বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত তাঁর সাথে যোগাযোগ করেনা সুপার। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় যাবতীয় কাগজপত্র জব্দ করে নিয়ে আসেন তদন্ত টিম এবং পুলিশের নিকট জমা দেন। সুপার আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৬টি মামলা রুজু করেছেন ওই এলাকার অভিভাবক এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। মামলার বাদিরা হলেন; কুটি ইউনিয়নের রানিয়ারা গ্রামের আবদুর রহিম মিয়ার ছেলে অভিভাবক বাবুল মিয়া (৪৫) হুমায়ূন মিয়ার ছেলে সাবেক শিক্ষার্থী মো.হাসান মিয়া(২০) এবং রানিয়ার বিষ্ণুপুর গ্রামের মাজহারুল ভ’ইয়ার ছেলে মো ওমর ফারুক (২০), মাদরাসার শিক্ষকদের পক্ষে সহকারী সুপার মো.শাহজাহান মিয়া। একই গ্রামের ওয়াহাব মিয়ার ছেলে জানু মিয়া (৫০) তার মেয়ের শ্লীলতাহানীর অভিযোগে একটি শ্লীলতাহানীর মামলা রুজু করেছেন। উল্লেখ্য গত সোমবার অভিযুক্ত মাদরসা সুপার আবদুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে অভিভাবক এবং এলাকাবাসী অভিযোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন । ওই দিন বিকেলেই তাকে তার মাদরাসা অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল কাউছার ভূইয়া বলেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়, নারী কেলেঙ্কারী, ১০ বছর কমিটি না করে সাবেক সভাপতির সই জাল করে টাকা আতœসাৎ, সরকারি ৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করা সহ অসংখ্য অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে । তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সার্বিক নির্দেশনায় এই উপজেলায় সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন একযোগে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। এই উপজেলা হবে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত উপজেলা।
কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন, মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এই মাদরাসার পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। সহকারী সুপার মো.শাহজাহান মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পরিচালনা করবে।
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ লোকমান হোসেন জানান; অভিযুক্ত সুপার আবদুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে ওই এলাকার অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও মাদরাসার শিক্ষক ৬টি মামলা রুজু করেছেন। তবে ৫টি মামলা রেকর্ড করে আমরা দুদকের মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। অভিভাবক জানু মিয়ার রুজুু করা তার কন্যা ওই মাদরসার শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানী মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।