অপরাধী যেই হোক, শাস্তি পেতেই হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অধিকার পাইনি আমার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার চাইতে বা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় আমরা’ লিখিত বিশেষ প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন মানবাধিকার রক্ষায় সরকার আইনের শাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধী যেই হোক শাস্তি তাকে পেতেই হবে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সব থেকে যেটা প্রয়োজন মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য- আইনের শাসন নিশ্চিত করা। যেই অপরাধী হোক, অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে- এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিতে ১৯৭৫ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, হত্যাকারীরা দম্ভ করে বলতো তাদের কেউ বিচার করতে পারবে না। কারণ তাদের ‘ইনডেমনিটি’ (দায়মুক্তি) দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার মায়ের কী অপরাধ ছিল বা আমার দুই ভাই? তারা তো মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তাদের নবপরিণীতা বধূদের কী অপরাধ ছিল? আমার ছোট্ট ভাইটি ১০ বছরের। কী অপরাধ ছিল রাসেলের?’ দায়মুক্তির পর হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ভোট চুরি করে দুইজন খুনিকে পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য হিসেবে বসানো হয়েছিল। এক খুনিকে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে বসানো হয়েছিল। আরেক খুনিকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হয়েছিল।’ হত্যাকান্ডের পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরার পরও বিচার চেয়ে মামলা করতে পারেননি বলে কষ্টের কথা তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ফিরে এসে মামলা করতে গিয়েছি। বলেছে, আপনি মামলা করতে পারবেন না। কারণ তাদেরকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। ঠিক এইভাবেই এই দেশে পরিবর্তন আনা হয়েছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। আমি অধিকার পাইনি আমার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার চাইতে বা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে। আমার অপরাধটা কী ছিল? আমার মতো আরও যারা আপনজন হারিয়েছিল তাদের অপরাধটা কী ছিল?’ তিনি বলেন, যারা এভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল বা যারা লালন-পালন করেছিল বা যারা খুনিদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছিল। তারাও কি একই অপরাধে অপরাধী ছিল না? ‘অন্যায় অবিচার যারা প্রশ্রয় দেয় সেই দেশে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে- এটা খুবই স্বাভাবিক। সেই অবস্থা থেকে দেশকে এবং জাতিকে সম্পূর্ণ ফিরিয়ে নিয়ে আসা… আমরা সেই কঠিন কাজটাই করে যাচ্ছি।’ মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো সমাজকে ধ্বংস করে, নষ্ট করে। এ নিয়ে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরাতে আলোচনা চলছে। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.