প্রশান্তি ডেক্স ॥ মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি দুটোই বেড়েছে। দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন এক হাজার ৯০৯ ডলার, যা টাকার সমপরিমাণে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৪০ টাকা গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অস্থিরতা বিরাজ করছে দ্রব্যমূল্যের বাজারে। শাকসবজি (আলু, পোটল, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ, শসা) ও মসলাজাতীয় (পেঁয়াজ, রসুন ও আদা) ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছে। তাই নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ ভাগ, যা গত অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৪৭ ভাগ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ ভাগ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ ভাগ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে। এতে বাড়তি মূল্যস্ফীতির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬৮ ভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘নভেম্বরের মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই পরিষ্কার, আমরা গোপন করিনি। একনেক সভায় আমরা মন্তব্য করেছিলাম, মূল্যবৃদ্ধির প্রধান নায়ক হলো পেঁয়াজ। নতুন পেঁয়াজ নামার পরে স্থির হবে, মূল্য কমবে বলে আমার আশা।’ তিনি বলেন, ‘পাঁচ-সাত বছর ধরে দেখে আসছি, যে মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, ওই মাসে অটো খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে। আবার যে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ে, ওই মাসে খাদ্যে কমে। এটা ঘরে বসে সরেজমিন ধরনের হয়ে গেছে কি না? সরকারের যে লক্ষ্য, সেটা যেন স্থির থাকে, সে অনুযায়ী বিবিএস কাজ করছে কি না?’ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এটা আপনার ধারণা। এটাকে আমি সম্মান করি, তবে একমত নাও হতে পারি। তাছাড়া আমরা সেক্টর অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি দিচ্ছি না, এটা বাড়ছে, স্বীকার করি।’ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সঙ্গে বিবিএসের দেওয়া মূল্যস্ফীতির মিল নেই বলেও সাংবাদিকরা জানান। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে নভেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উপ-খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে শতকরা ৬ দশমিক ৪১ ও ৫ দশমিক ৩৭ ভাগ, যা গত অক্টোবরে ছিল যথাক্রমে শতকরা ৫ দশমিক ৪৯ ও ৫ দশমিক ৪৫ ভাগ। গ্রামীণ পর্যায়ে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ১ ভাগ, যা অক্টোবরে ছিল শতকরা ৫ দশমিক ৩৬ ভাগ। নভেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উপ-খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে শতকরা ৬ দশমিক ৫৪ ও ৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, যা অক্টোবরে ছিল যথাক্রমে শতকরা ৫ দশমিক ৫৬ ও ৪ দশমিক ৯৬ ভাগ। শহর পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ ভাগ, যা অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৬৭ ভাগ। নভেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উপ-খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১১ ও ৬ দশমিক ১৩ ভাগ, যা অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৩১ ও ৬ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ। গত এক বছরের (২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত) চলন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল শতকরা ৫ দশমিক ৫৯ ভাগ বলে জানিয়েছে বিবিএস। প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ শতাংশ এদিকে মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি দুটোই বেড়েছে। দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন (২০১৮-২০১৯ অর্থবছর) এক হাজার ৯০৯ ডলার, যা টাকার সমপরিমাণে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৪০ টাকা। এই অর্থবছরের ৮ মাসে মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার বা এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় মাথাপিছু আয় ৩৮০ টাকা বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ডলারে সমপরিমাণ হলেও টাকার অংকে বেড়েছে। গতবছরে এই অংক ছিল এক হাজার ৭৫১ ডলার। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। গতবছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় দেশে পরিচালিত সব প্রকল্পের বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় একই হলেও টাকার হিসাবে ৩৮০ টাকা বেড়েছে। নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভা সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের চূড়ান্ত মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছর কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ, বর্তমানে তা হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। তবে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ০২ শতাংশ, গতবছর একই সময়ে ছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, গতবছর একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ৭ প্রকল্প অনুমোদন এদিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় ৯ হাজার ২৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ১ লাখ এবং ঋণ সহায়তা আসবে ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে সরকারের ২১তম একনেক সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা হয়। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধন)’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের চারটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘কক্সবাজার জেলার রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক (এন-১০৯ ও ১১৩) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প, ‘ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাসাড়া পর্যন্ত জেলা মহাসড়ক (জেড-৮২০৩) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প, ‘ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭০৪) কুষ্টিয়া শহরাংশ চারলেনে উন্নীতকরণসহ অবশিষ্টাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প এবং ‘নাগেশ্বরী-কাশিমপুর-ফুলবাড়ী-কুলাঘাট-লালমনিরহাট জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা, মাদারীপুর ও রংপুর জেলার তিনটি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) (প্রথম সংশোধন)’ অনুমোদন দেয়া হয়।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post