প্রশান্তি ডেক্স ॥ দূরপাল্লার আন্তঃনগর একটি ট্রেন লোকাল যাত্রীদের উৎপাতে অসহায় দূরপালস্নার আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীরা। লোকবল সংকট এবং লোকাল ট্রেন কম থাকায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মহানগর এক্সপ্রেসে ঢাকায় আসছিলেন ৭ মাসের অন্তঃসত্তা ধানমন্ডির গৃহবধূ খাদিজা আক্তার। স্বামী সঙ্গে না থাকায় তিনি একাই সিঙ্গেল কেবিনের দুটি টিকিট কেটেছিলেন। ট্রেনটি আধঘণ্টা লেট থাকায় সাড়ে ৬টার পরিবর্তে প্রায় ৭টায় এয়ারপোর্ট স্টেশনে পৌঁছায়। স্টেশনে থামার পর হঠাৎ তার কেবিনে দু’জন পুরুষ যাত্রী গিয়ে তাকে শোয়া থেকে উঠে বসার জায়গা দিতে বলেন। তারা কমলাপুর স্টেশনে যাবেন। খাদিজা কেবিনের দুটি সিটই কেটেছেন জানালেও দুর্ব্যবহার করেন তারা। তিনি বিষয়টি ট্রেনের এটেনডেন্টকে জানান। এটেনডেন্ট যাত্রী দুজনকে অনুমতি ছাড়া কেবিনে প্রবেশ করেছেন কেন জানতে চাইলে উল্টো তার উপরে চড়াও হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ট্রেনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে রেল পুলিশের সহায়তায় ওই যাত্রী দু’জনকে গ্রেপ্তার করে কমলাপুর ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটা শুধু একদিনের ঘটনা নয়, এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। সড়কপথে দীর্ঘ যানজটের কারণে ঢাকার কাছাকাছি যেসব এলাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ আছে তারা রাজধানীতে আসা-যাওয়ায় সময় এবং অর্থ বাঁচাতে ট্রেনকে প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু উলেস্নখিত রুটে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা খুবই কম। এরমধ্যে ‘কালিয়াকৈর’ ও গাজীপুরের ‘তুরাগ’ ট্রেন দুটি দুইবার করে আসা যাওয়া করে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ রুটে ‘ভাওয়াল’ ট্রেনটি দিনে একবার চলাচল করে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে একটিমাত্র ট্রেন দিনে ১৬ বার যাতায়াত করে। আরও জানা গেছে, গাজীপুর রুট যাত্রীদের ৪৫০ টাকা ভাড়ায় মাসিক (মান্থলি) টিকেটের ব্যবস্থা আছে। ঢাকা-গাজীপুর যে কোনো স্টেশন থেকে দিনে যতবারই আসা-যাওয়া করুক না কেন, ভাড়া একই। বর্তমান সরকার ২০১০ সালে মাসিক টিকিট চালু করে। কিন্তু এই মাসিক টিকিট যাত্রীদের আন্তঃনগরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু মাসিক টিকিট এবং স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীরা আন্তঃনগর ট্রেনের এসি ও কেবিনে ঢুকে প্রতিদিনই বসা নিয়ে সিট নেওয়া যাত্রীদের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে মাসিক টিকিটের যাত্রী সংখ্যাই বেশি এবং তারা সংঘবদ্ধ হওয়ায় প্রায়শ হেনস্তার শিকার হচ্ছেন সিট নেওয়া আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীরা। তবে ‘তুরাগ’ ট্রেন প্যাসেঞ্জার্স ফোরামের আহ্বায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যুগ্ম সচিব মো. হারুন অর রশিদ বলেন, অফিস টাইমে শোভন চেয়ার কোচে পা ফেলার জায়গা থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে মাসিক বা স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটা যাত্রীরা আন্তঃনগর ট্রেনের এসি কোচ এবং কেবিনে ওঠেন। অফিস ছুটির আগে এবং পরে ঢাকা-গাজীপুর বা ঢাকা-টঙ্গী লোকাল ট্রেন দিলে আন্তঃনগর ট্রেনে চাপ কিছুটা কমবে বলে দাবি করেন। কেবিনের মহিলা যাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমিও শুনেছি। তবে দুএকটি ঘটনার জন্য সবাইকে দায়ী করা ঠিক হবে না। সরেজমিনে জানা গেছে, বনলতা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন, চিত্রা, একতা, তারকান্দি, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেসের যে ট্রেন নিয়মিত গাজীপুর থামবে বা সিগন্যালে দাঁড়ায় সেগুলোর এসি ও কেবিনে উঠে সিট ছাড়া যাত্রীরা বসা নিয়ে যাত্রীদের ঝামেলা করেন। এছাড়া এয়ারপোর্টে অফিস টাইমে যতো ট্রেন স্টপেজ দেয় সব ট্রেনেই একই ঘটনা ঘটে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক এটেনডেন্ট ও টিটিই না থাকায় এ ঘটনা বেশি ঘটছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। রেল সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনের সিটের যাত্রীদের উপরে অত্যাচার বন্ধে মাসিক টিকিট বন্ধ করতে চাচ্ছে রেল। আর নিয়মিত টিকিট চালু করলে জনপ্রতি আসা-যাওয়া বাবদ ৯০ টাকা গুনতে হবে। এতে অর্ধেক যাত্রী টিকিট কাটলে প্রায় এক কোটি টাকা আয় বাড়বে বলে রেলের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ট্রেন বাড়ানোর এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়াজাহান বলেন, কোচ ও লোকোমোটিভ স্বল্পতা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-টঙ্গী ৪ লেন ও টঙ্গী-গাজীপুর ডাবল লাইন না হওয়া পর্যন্ত কোনো ট্রেন বাড়ানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গাজীপুরের স্টপেজ বন্ধ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া কোনো আন্তঃনগর ট্রেন যাতে সিগন্যালের জন্য গাজীপুর দাঁড়াতে না হয় সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post