প্রশান্তি ডেক্স॥ সম্ভাব্য অভিবাসী, প্রবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ সবাইকে অভিবাসন-সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যসেবা দিতে হটলাইন চালু করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ব্র্যাক। নম্বরটি হলো- ০৮০০০১০২০৩০। এ নম্বরে ফোন করে বিনা খরচে অভিবাসন-সংক্রান্ত সব তথ্য জানা যাবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও অভিবাসন-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যসেবা পাওয়া যাবে +৯৬১০১০২০৩০ নম্বরে ফোন করে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফোন করে সরাসরি তথ্যসেবা পাওয়া যাবে। এ সময়ের বাইরে ফোন করলে সেটি রেকর্ড রাখা হবে। পরবর্তীতে কলদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং টেকসই পুনরেকত্রীকরণ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ হটলাইনের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। এ সময় আইওএম বাংলাদেশের মনিটরিং, এভালুয়েশন, এ্যাকাউন্টেবিলিটি ও লার্নিং বিভাগের প্রধান ফিনিয়াস জেসি এবং ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে প্রত্যাশা প্রকল্পের আওতায় এ হটলাইন চালু করা হয়। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আইওএম বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে। হটলাইন উদ্বোধনের আগে আলোচনায় ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, তথ্য হচ্ছে সূযের্র আলোর মতো। তথ্য জানলে মানুষের কাছে সবকিছু দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। তখন জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। কিন্তু যারা বিদেশে গেছেন বা যেতে চাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। ৯৫ ভাগ মানুষই জানেন না, তারা কোন এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা আরও বলেন, মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের খবর আসে। বিষয়গুলো সমাধানে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এ ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স রয়েছে। তবে একথাও মনে রাখতে হবে সরকারের একার পক্ষে সবকিছুর সমাধান সম্ভব নয়। আমরা সমস্যা যেখানে আছে সেটা স্বীকার করি। সমাধানও করতে চাই। বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণও অভিবাসন প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এ ব্যাপারে সরকারি, বেসরকারি সংস্থাসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পত্যাশা প্রকল্পটি বিদেশ ফেরতদের জন্য একটি সমন্বিত পদক্ষেপ। সরকার এ ধরনের কাজের সঙ্গে আছে। ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক আকারে পুনরেকত্রীকরণ নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য বিদেশ ফেরত কর্মীদের মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণের জন্য প্রত্যাশা প্রকল্প কাজ করছে। তথ্য পাওয়া সহজ করতে এ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের এপ্রিলে হটলাইনটি চালুর কাজ শুরু হয়। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফিনিয়াস জেসি বলেন, পুনরেকত্রীকরণ অভিবাসন প্রক্রিয়ারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ প্রবাসে থাকেন। এদের মধ্যে বিদেশে যারা ভালো করতে পারেন না কিংবা সমস্যার কারণে ফিরে আসেন তারা মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব মানুষের জন্য টেকসই পুনরেকত্রীকরণ জরুরি। বিশেষ করে যারা অনিয়মিতভাবে বিদেশ গিয়ে ফেরত আসছেন তাদের গল্পগুলো অনেক করুণ। এসব মানুষের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান। তিনি বলেন, প্রতিদিন কত মানুষ বিদেশ যাচ্ছে সে তথ্য সরকারের কাছে থাকলেও কতজন ফিরে আসছেন সে তথ্য নেই। ফলে বিদেশ ফেরত কর্মীদের চিহ্নিত করে তাদের সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত আসা অভিবাসনেরই অংশ। কাজেই তাদের কথাও ভাবতে হবে। তবে নিরাপদ অভিবাসন এবং টেকসই পুনরেকত্রীকরণের কাজটি কারও একার নয়। এজন্য সরকারি বেসকরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবার একযোগে কাজ করতে হবে। অভিবাসন খাতের নানা সমস্যা সমাধানে অনুষ্ঠানে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post