প্রশান্তি ডেক্স্। ২১ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের সম্মেলনের পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। ৮১ সদস্যের এই কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ৭৪টি পদে নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন। এবারের কমিটিতে তেমন কোনো চমক নেই। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আগের কমিটির কোনো না কোনো পদে ছিলেন। দলের সভাপতিমন্তলীর সদস্যপদে নতুন ঢুকেছেন শাজাহান খান। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই আলোচনাই হচ্ছে, শাজাহান খানই এবারের কমিটির মূল চমক। সাবেক এই মন্ত্রী ও শ্রমিকনেতা প্রথমবারের মতো কমিটিতে ঢুকে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হয়েছেন। তবে এসব ছাপিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আলোচনা ছিল, এবারের কমিটিতে বর্তমান মন্ত্রিসভার সাত সদস্য এখন পর্যন্ত জায়গা পাননি। অনেকের মনেই প্রশ্ন, তাহলে কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য আনতে চাইছেন? ভবিষ্যতে কি যাঁরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন, তাঁরা সরকারে থাকতে পারবেন না? এবারের কমিটিতে জায়গা না পাওয়া এবং বিগত কমিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা সাত মন্ত্রীর মধ্যে আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বিগত কমিটিতে অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তিনি ছিলেন আইনবিষয়ক সম্পাদক। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী; তাঁরা তিনজনই ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, তিনি আগের কমিটিতে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আর মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরাও নেই কমিটিতে। ইন্দিরা আগের কমিটিতে মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব ছিলেন। এ ছাড়া আগের কমিটির সদস্য বর্তমান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানও বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। বিগত কমিটিতে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের ১৪ জন সদস্য ছিলেন। ৯ জন না থাকলেও বাকি ৫ জন ইতিমধ্যে কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (সভাপতি), সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (সাধারণ সম্পাদক), কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক (সভাপতিমন্ডলীর সদস্য), শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক)। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের পরে দলের ২০তম কাউন্সিলের পর গঠিত কমিটিতে থাকা অনেক মন্ত্রীকে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে জায়গা দেওয়া হয়নি। ফলে বিগত ৭৭ সদস্যের কমিটিতে মাত্র ১৪ জন মন্ত্রী ছিলেন। এবার তা আরও কমল। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আছে। এ সময় দলের চারটি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। চারটি কাউন্সিলে গঠিত কমিটিগুলোর মধ্যে এবারের কমিটিতে সবচেয়ে কম মন্ত্রী থাকছেন।
দল ও সরকারকে আলাদা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি নেত্রী শেখ হাসিনা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছেন কি না—এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির চারজন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আছে, এমনটা তাঁরা শোনেননি। এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। তবে সাত মন্ত্রীর কমিটিতে না থাকা নিয়ে তাঁদের এমন ধারণাই হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, আগের কমিটিতে থাকা মন্ত্রীরা দলের নানা কাজে সক্রিয় ছিলেন। কয়েকজন তো বেশ ভালো কাজ দেখিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দলে বিভেদ সৃষ্টি, বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা বা অন্য কোনো ‘অপরাধের’ কোনো ঘটনা নেই। তাই মনে করা হচ্ছে, দলীয় সভানেত্রী হয়তো মন্ত্রীদের সংখ্যা কমিটিতে কমাতে চান বা দায়িত্বশীল পদে রাখতে চান না।
যে সাতটি পদে এখনো নেতাদের নাম ঘোষণা হয়নি, তার মধ্যে একটি সাংগঠনিক সম্পাদক, একটি কোষাধ্যক্ষ, তিনটি সদস্য ও দুটি সম্পাদক পদ রয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মাহবুব উল আলম হানিফ। আগের কমিটিতেও একই পদে ছিলেন তিনি। এই নেতা বলেন, কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অন্যান্য পদে সভাপতিই নিয়োগ দেন। বর্তমান সরকারে মন্ত্রীরা নানা কাজ করছেন। তাঁরা দলের জন্যও নিবেদিত। সবাইকে বিভিন্নভাবে কাজের সুযোগ করে নেওয়া হচ্ছে, দলের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিও করা হচ্ছে। এসব কারণে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কমিটি কেমন হবে, তা নির্ধারণ করছেন।