প্রশান্তি ডেক্স ॥ ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির ওপর বাংলাদেশ নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্বিপাক্ষিক-বহুপাক্ষিক সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সৌজন্য সাক্ষাতে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন এসব কথা বলেন। ভারতের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকে। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্র-ম্যাক্সিকোর মধ্যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সুতরাং এ চ্যালেঞ্জের মধ্যেই কাজ করতে হবে। এনআরসি ও সিএএ প্রাথমিকভাবে ভারতের অভ্যন্তীণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি যে অস্থিরতা ছিল, তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। আশা করি শান্তি পূর্ণভাবে বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের অন্য যে বিষয়গুলো রয়েছে, তা যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। রোহিঙ্গা সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে নতুন পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক আরও বাড়ছে। আগে আমরা শুধু দ্বিপাক্ষিক পথে সমাধানের চেষ্টা করেছি। এরপর বহুপাক্ষিক পথে চেষ্টা করেছি। আর সম্প্রতি জবাবদিহিতা ও বিচার নিশ্চিতের পথে এগিয়েছি। এগুলো সবই একসঙ্গে জরুরি। এর প্রতিটি পদক্ষেপ একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। আর এগুলোকে কীভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারবো, আর আমাদের মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গারা যাতে নিজ বাসস্থানে সসম্মানে ও স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে পারে। তিনি বলেন, এটি মাথায় রেখে বাকি যে পথগুলো রয়েছে, তা নিয়ে কাজ করছি। কেউ হয়তো বলবে যে এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও বিচারের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, যেমন আমাদের জন্যও। তবে আমাদের এক্ষেত্রে আলাদা কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন আস্থা তৈরির বিষয়। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা যারা অত্যাচারিত হয়েছে বা নিগৃহীত হয়েছে, তারা যদি দেখে যে, যারা এর জন্য দায়ী তাদের কিছু হয়নি, তাহলে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে আগ্রহী হবে না। সেই কারণে আস্থা তৈরির প্রেক্ষাপটে জবাবদিহিতা ও বিচার দরকার রয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এক্ষেত্রে আইসিজে (আন্তর্জাতিক বিচার আদালত) একটি প্রক্রিয়া। মিয়ানমার নিজেও বেশ কিছু প্রক্রিয়া নিয়েছে। জাতিসংঘেও দেখেছেন যে সম্প্রতি তৃতীয় কমিটির সে রেজুলেশনটি পাস হলো, সেখানে আইআইএমএম প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তারা বাজেট পেয়েছে। ফলে প্রতিটি জবাবদিহিতা এবং মানবাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি। জাতিসংঘের বিশেষ যে দূত রয়েছে এ বিষয়ে তার কার্যালয়কেও আরও বেশি কাজ দেয়া হয়েছে এ নিয়ে। সবগুলো পদক্ষেপের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কীভাবে শিগগিরিই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়। তিনি আরও বলেন, এর বাইরেও আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন চীনের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের আলোচনা রয়েছে। এটি চীনের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ কিছুটা বর্ধিত করা। এটি দ্বিপাক্ষিকের পাশাপাশি ত্রিপাক্ষিকও বটে। আর বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ অধিবেশনসহ অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনগুলো রয়েছে তাতে আমরা কাজ করছি। আর সাধারণ মানুষের মাঝেও আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। রোহিঙ্গাদের ভাসানচর জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে একটি প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তা নিয়ে প্রস্তুতিও চলছে।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post