প্রশান্তি ডেক্স ॥ মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন চলছে। টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা। এতেও কোনো সমাধান না আসায় এবার দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছে খুলনায় আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বাবারা যখন দাবি আদায়ে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তখন ঘরে বসে থাকতে পারেনি তারা। তাই দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে রাস্তায় নেমে মিছিল করে পাটকল শ্রমিকদের সন্তানরা। এ সময় তারা ‘আমি শ্রমিকের সন্তান, আমার বাবা না খেয়ে মরতে বসেছে, আমার বাবাকে বাঁচাও’, ‘পাট শিল্প ধ্বংস হলে সোনার বাংলা ধ্বংস হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আলতাফ হোসেনের ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে তসলিম হোসেন বলে, আমার বাবা দাবি আদায়ে অনশন করছে। পাঁচদিন না খেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের ঘরেও তেমন কিছু নেই। গতকাল সবাই বই উৎসব করেছে। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি। তার মতো একই কথা বলে ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিক রাশেদুল হাসানের ছেলে মিতুল, আলিম জুট মিলের নওশাদের ছেলে তিতাশ। তারাও দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছে। এদিকে পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে খুলনা বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবলায়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সঙ্গে পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য খুলনা থেকে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি দল খুলনা থেকে রওনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের উল্লেখযোগ্য পাটকল খুলনায়। খুলনার সাতটি পাটকলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। প্রতিটি পাটকলেই শ্রমিকদের মজুরি ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বাদে বাকি ৭টি পাটকলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ পাটকলগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে চালু থাকা ওই দুটি পাটকলে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। পাটকলগুলোতে প্রতিদিনের উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের খুলনার যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, সাতটি পাটকলের প্রায় ২০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এ অনশনে অংশ নিয়েছেন। টানা অনশনে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা শরীরে স্যালাইন নিয়েই স্ব-স্ব মিলের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post