বই নিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে এল ঘরে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল মেধাবী ছাত্রী রেশমি আক্তার হিমু (১০)। সে এবার তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলো তিন নম্বর ক্রমিকে। পড়তো নগরীর পতেঙ্গার কাটগড় মীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে বলে নতুন বই নিতে স্কুলে যাবে। মা তার চুল বেণী পাকিয়ে পরিপাটি করে তৈরি করে দেন। ফুরফুরে মেজাজে দুই বান্ধবীর সাথে স্কুলের পথে পা বাড়ান। কিন্তু গতকাল সকাল ১১টার দিকে কাটগড় এলাকায় ঘাতক ট্রাকের চাপায় চিরতরে নিভে যায় হিমুর প্রাণপ্রদীপ। সেই সাথে নিভে গেলো তাকে ঘিরে বোনা দরিদ্র পিতার স্বপ্নও। হিমুর পরিবারের এখন চলছে শোকের মাতম। নতুন বই নিয়ে আর ঘরে ফেরা হলো না তার। নিহত হিমু কাটগড় মহিলা কলেজের পার্শ্ববর্তী আলী মিয়া সুখানী বাড়ির মোহাম্মদ শাহানুর এবং বুলু দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই বোনের মধ্যে হিমু সবার বড়। গত বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতাল এলাকার পরিবেশ। একমাত্র আদরের মেয়েকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান পিতা মোহাম্মদ শাহানুর। বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন-এই মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। তাকে বলেছিলাম-যত কষ্টই হোক, তোকে অনেক লেখাপড়া শিখাবো। আমি এখন আমি কাকে নিযে বাঁচবো। এতটুকু বলেই তিনি হাসপাতালের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। হিমুর চাচা সাইফুল আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুপুরে আমার ভাতিজির এক সহপাঠী বাসায় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এসে বলে- হিমু একসিডেন্ট করেছে। আমি সাথে সাথে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে সে রাস্তায় কাতরাচ্ছে। দ্রুত একটি সিএনজি নিয়ে মেডিকেলের দিকে ছুটে যাই। যাওয়ার পথে সে পানি খেতে চাইলে আমি তাকে পানি খাওয়াই। দুপুর একটার দিকেই হাসপাতালের পৌঁছার পরে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে গতকাল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর হিমুর চাচার সাথে ট্রাক চালকও সিএনজিযোগে হাসপাতালে আসেন। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে কথা হয় ট্রাক চালক আবদুল খালেকের সাথে। তিনি বলেন, পতেঙ্গা কাটগড় এলাকার ইস্টার্ন রিফাইনারির মোড়ে বাম পাশের ট্রাক পিছনে পার্কিং করতে গিয়ে অসতর্ক অবস্থায় স্কুলছাত্রীটি চাপা পড়ে। কোনো গাড়ি চালক ইচ্ছে করে কাউকে চাপা দেয় না, এটি একটি দুর্ঘটনা বলে তিনি দাবি করেন। জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, গতকাল দুপুরের দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্কুলছাত্রী হিমুকে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.