সিটি নির্বাচনে ভোট হয়েছে ইভিএমে। এটা নতুন এবং ইতিহাসে এবারই প্রথম এই নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে ইভিএমে সম্পন্ন হয়েছে এবং সকল দলের অংশগ্রহণে উৎসব ও আমেজে ফলাফল ঘরে উঠেছে। জন উত্তাপ এবং ভোটের গরপরতা হিসেবে যে নিন্মগামিতা তা আগামীর অশনী সংকেতও হতে পারে। জনবিমূখ যদি ভোট হয়ে পড়ে তাহলে বাংলাদেশের সকল নির্বাচনই জনশুণ্য হবে তবে দলীয় প্রচারনা এবং সমর্থকদের আনাগোনায় হয়তো মান বাচানো যাবে; তা আর কতদিন টিকে থাকবে তাও বলা মুশকিশ। দিন দিন জনমনে ভোট ভাটা পড়েছে এবং শতকরা হাড়ে তলানীর দিকে এগুচ্ছে। তাই এখনই হাল ধরার সময় এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে ভোটের উন্মাদনায় মাতোয়ারা করে তুলতে হবে। নেতা এবং প্রার্থী ও দলীয় সুফলভোগ এমনকি সুবিধাভোগীরাই বেশী বেশী সরব থেকে মাঠ গরম করে রেখেছিলেন। প্রকৃত ভোটার বা দলীয় সমর্থক ও স্বচ্ছ স্বভাবের কর্মীদের অনুপস্থিতি ভোট নি¤œগামিতাকে উৎসাহিত করেছে এবং আগামীর জন্য এক প্রতিবন্ধক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপনে সহযোগীতা করেছে। তবে সরকার এবং নির্বাচনী দলগুলো ডিজিটাল প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে একটু বেশী। তাই জনগণ কেন্দ্রীক যে প্রচারনা ঘরে ঘরে বা ভোটারের দ্বারে দ্বারে পৌঁছা অন্তত এবার এটা সম্ভব হয়নি। এই অপূর্ণতাও ভোটার উপস্থিতির আনুপাতিক নি¤œগামিতার কারন। তবে আমাদের প্রার্থী, নেতা ও কর্মীরা এমনকি ভাড়া করা কর্মীরা লোক দেখানো প্রচারণায় ব্যস্ত হয়েছে একটু বেশী। তবে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি দিয়ে বা কর্মী দিয়ে ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনার যে ঐতিহাসিক রীতি ছিল তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। এবারের ভোট পূর্ব ভোটারের ভোটার স্লিপটি যথাসময়ে ভোটারের কাছে পৌঁছায় নি, যা ভোটবিমুখতার একটি কারনও হতে পারে। এই দুর্বলতার পিছনে কি কারণ তা অজানাই রয়ে গেল।
আরেকটি বিষয় ছিল যে, ভোট কেন্দ্রে সাহায্যকারী। ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ায় অনেক সাহায্যকারী ছিল প্রতিটি বোথে। এই সাহায্যকারীরা যথেষ্ট সাহায্য করেছে যাতে করে শিক্ষিত ও ভোট পাগল ভোটারের অস্বস্থির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে সাহায্যকারীরা বিশেষ করে স্থানীয় কমিশনারের ওকালতিও করেছেন এমনকি ভোটদানে নিজেদের স্বাক্ষরও রেখেছেন। তবে যাই হউক নির্বাচন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং আগামীতে নিরপেক্ষ ভোট দানের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং ভোটাধিকার প্রয়োগে সক্রিয় থেকে অধিকার আদায় করতে আগ্রহী হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলিও যার যার অবস্থান থেকে স্ব স্ব ভুমিকা পালনে যতœশীল দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনভাবেই অন্যের উপর দায় চাপিয়ে ফাকা আওয়াজ বা ঘরে বসে থাকলে হবে না। কেউ এসে নির্বাচিত করে দিয়ে যাবে না বা কেউ এসে অধিকার আদায় করে দিয়ে যাবে না বরং অধিকার নিজেদেরই আদায় ও অর্জন করে নিতে হবে এমনকি নির্বাচীত হওয়ার জন্য যা যা করণীয় তার সবটুকুই করতে হবে। নিজেদের ভুলের কারণে অথবা অযোগ্যতার কারণে এমনকি জনগণের অনিহার কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর দায় চাপানো যাবে না। এমনকি নির্বাচনকে বর্জনও করা যাবে না। বরং নির্বাচনকে মেনে নিয়ে আগামীর জন্য সংশোধিত হয়ে ভুল ত্রুটি বিশ্লেষণে নিশ্চিত বিজয়ের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। জনগন এবং প্রার্থীর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিকল্পে কাজ করতে হবে। পরাজিত হয়েও দেশ এবং জনসেবা করা যায় আর সেই সেবার ধারাবাহিকতায় আগামীর বিজয় নিশ্চিত। তাই আবোল তাবোল না বকে এমনকি অন্যোর উপর দায় না চাপিয়ে (নাচতে না জানলে উঠোন বাকা) বরং নিজেদের ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করুন এবং নতুন করে পরিকল্পনা আটুন যাতে করে সকল প্রতিকুলতাকে পাশ কাটিয়ে বা জয় করে নির্বাচনের নিশ্চিত বিজয় ঘরে তোলা যায় সেই দিকে অগ্রসর হউন। এর বাইরে কিছু করা বা বলার চেষ্টায় জনবিমুখতা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই হবে না। নির্বাচন পরিবর্তীতে হরতালের রেওয়াজ প্রায় বিলুপ্তির পথে কিন্তু সেই বিলুপ্ত লাশটিকে নিয়ে টানাটানি না করে নতুন ইতিবাচক অগ্রগামী কোন পদক্ষেপে এগুনোই হলো আগামীর ক্ষমতার সিড়ি। কিন্তু এর ব্যক্তিক্রমে দেওলিয়া হওয়ার উপক্রমিক চিন্তা ও এর বহি:প্রকাশ দৃশ্যমান।
দেশ পরিচালনায় ক্রমোন্নতির স্বাক্ষরের পাশাপাশি বক্তব্যে এবং জ্ঞানের ধারাবাহিকতায়ও বিশ^বরেণ্য হয়ে উঠেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গর্ব ও প্রশংসা করা ছাড়া আর কিই বা আছে। গত সর্ম্বধনায় ইটালিতে যে ভাষা ও ঐতিহাসিক শব্দ চয়ন করেছেন তা ইতিহাসে এই প্রথম কারো দ্বারা প্রকাশিত হলো। জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা সম্পর্কে সুস্পষ্ট যৌক্তিক এমনকি সত্য ও ইতিহাস নির্ভর সঠিক কথাটিই বলেছেন। যা এতোদিন জাতির কাছে অজানাই ছিল বা জানলেও কানে আওয়াজ তোলার মত নয়। আরেকটি কথা অতি মধুর ও আত্মার উপলব্দিতে পরিপূর্ণ “সবাই আমাকে ছেড়ে গেলে বা ত্যাগ করলেও রেহেনা আমাকে ছেড়ে যাবে না বা ত্যাগ করতে পারে না”। কি মধুর সম্পর্কই-না এই দুইবোনের। তাদের চাওয়া-পাওয়া এমনকি একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও গভীর ভালবাসা যেন দুটি দেহে একটি প্রানের সঞ্চার মাত্র। এই পারিবারিক সম্পর্কের দৃষ্টান্ত বাঙ্গালী আগামীর জন্য অনেক সাহায্য ও সহযোগীতা করবে বলে বিশ^াস। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করার মত যে মানুষটির কর্মযঞ্জ তিনিতো আর কেউ না তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া বিশ^ বিবেক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পদচারনায় মুখরীত এখন বিশ^। বাংলাদেশের মানুষ তাকে যে সম্মান দিতে চান তার চেয়ে বেশী সম্মান দিয়ে যাচ্চেন সমগ্র বিশ^। তাই আমাদের আবার নতুন করে ভাবতে হবে যে, আমরা কিসের অভাবে এমন আচরণ করি বা সত্যকে সত্য বলতে পারিনা বা উপযুক্ত প্রাপ্যতা দিতে পারি না। তাই এখনই নিজেদেরকে শুধরিয়ে নেয়ার সময়।
দেশীর রাজনীতির আদলে গড়ে উঠেছে সংগঠন যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করে ব্যবসায়ীদের এমনকি সামাজিক কিছু সংগঠনেরও। কিন্তু আদতে ঐ সংগঠনগুলো নিজেদের আখের গুছানোর কাজেই ব্যতিব্যস্ত। যারা কেন্দ্র বা কমিটিতে থাকেন তারাই নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। এটা ইতিহাস প্রমানীত এবং যুগের হালে সাক্ষস্বরূপ। তাই ঐ সংগঠনগুলো তাদের প্রয়োজনে শুধু ব্যবহার করে যাচ্ছে সাধারনের। কিন্তু সরকারের উচিত ঐ সংগঠনগুলোকে নজরদারীতে রাখা এবং তাদের দ্বারা সুযোগ-সুবিধাদি সার্বজনীন নাকি শুধু নিজের ও নিজের পরিচিতজনের তা খতিয়ে দেখা উচিত। পক্ষান্তরে সংগঠনগুলোতে নির্বাচনও হয় তা ভাওতাবাজিতে ভরপুর এমনকি কৃত্রিম সমালোচনায় ও সম্মানখানী ঘটিয়ে পরাজিত করানোর চক্রান্ত দৃশ্যমান। তবে এই সমস্যার মাধ্যমে সাধারণ সদস্যদের ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি সাধারণ সদস্যদের কেউ কেউ ঐ চক্রান্তকারীদের চক্রান্তে পরাজিত প্রার্থী ছাড়াও ফেসে যায় অনেক নিরিহ সদস্য। তাই এইসংগঠনগুলো সরকারের বা রাষ্ট্রের অথবা ব্যবসায়ীদের কি উপকারে আসে তাও খতিয়ে দেখা প্রায়োজন।
শিক্ষা এবং শিক্ষিতের সংজ্ঞা নতুন করে দেয়া প্রয়োজন এবং যুগের দাবি। শিক্ষিতের হার এবং স্বাক্ষরতার হার নিয়েও যে ব্যাখ্যা তা ভাবার বিষয় এবং সময় এসেছে নতুন করে দেয়ার। যুগ বদলায় এবং সময় সময়ের প্রয়োজনে সবকিছুকে নতুন করে নেয়। তাই আমাদেরও নিজেদের প্রয়োজনে এবং সময়ের চাহিদায় যুগের দাবিঅনুযায়ী অগ্রগামী হওয়া দরকার। পুরনোতে পড়ে থাকা সমিচিন নয় ঠিক পুরনোকে বিষর্জন দেয়াও উচিত নয়। তাই এই দুইয়ের সমন্বয়েই কাজ করতে হবে। আগামীর প্রয়োজনে এগিয়ে যেতে হবে নতুন পুরানের সমন্বয়ে। এই সমন্বয়কেই বাস্তবায়ন ও বাস্তবরূপদান এখন প্রয়োজন আর তা প্রয়োজন ইতিবাচক ও সামষ্টিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতির দীর্ঘমেয়াদী সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনায়। আমাদের এই ভাবনায় যেন নতুনত্ব এবং বিজ্ঞান ও ঐশ^রিক বা খোদায়ী পরিকল্পনা বিদ্ধমান থাকে। শেষাংশে বলি “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি আর সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, অমঙ্গলের জন্য নয় বরং ঐ পরিকল্পনার মধ্যে দিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।”