প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পূণরুপে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পানি সমস্যার সমাধান হয় না, সীমান্তে হত্যা হয় তার কোনো বিচার হয় না, একটা কথাও বলতে পারে না। সব অর্জন ফিরিয়ে আনতে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিল মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
তিনি বলেন, আমরা এখান থেকে উঠে দাঁড়াতে চাই। আমরা অতীতে উঠে দাঁড়িয়েছি। এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির সমস্যা। পুরো জাতি আজকে পরাধীন হয়ে যাচ্ছে, সমগ্র জাতি আজকে অর্জনগুলোকে হারাচ্ছে। তাই আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সোচ্চার হতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে, সব অর্জন ফিরিয়ে আনতে হবে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে চেতনার ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছিল সেই চেতনা আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬৮ বছর পরেও অর্জন করতে পারিনি। সেটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, একটি একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা ও একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন সময় তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করার জন্য সংগ্রাম করেছে। তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য।মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আমাদের দুর্ভাগ্য, ৬৮ বছর পরে গণতন্ত্রের জন্য চিৎকার করতে হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের, যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই ত্যাগের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছেন। এখনও যে তিনি কারাবরণ করে আছেন, সেটাও গণতন্ত্রের জন্যে। তাকে আজকে অসুস্থ অবস্থায় অন্ধকার কারাগারে পড়ে থাকতে হয়েছে। মনে হয়, এই ৬৮ বছর সম্পূণরুপে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়নি, আমরা এই ৬৮ বছরে সংগ্রাম করতে করতে আমরা একটা রাষ্ট্র পেয়েছি, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ যারা লড়াই করে ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে, একটা স্বাধীন পতাকা নিয়ে এসেছে। তারা পরাজিত হবে বলে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আজকে গণতান্ত্রিক যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সে আন্দোলন দেশনেত্রীর মুক্তির মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে।সরকার পরিকল্পিতভাবে সকল অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করে দিয়ে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আজকে অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। দুর্নীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে পত্রিকা খুললেই দেখবেন, বেসিক ব্যাংকের এমডি ১১০ কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন। আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিচার হয়, সাজা হয় ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলার জন্য। ১১০কোটি টাকায় বাড়ি বানিয়েছেন, শত শত কোটি টাকা তিনি লুটপাট করে নিয়েছেন, দুদক তাকে দেখতে পায় না। তাকে এখন পর্যন্ত একটি নোটিশও করা হয়নি। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা তিনি বলেন।ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থা কোন জায়গায় নিয়ে গেছে। আজকের পত্রিকা খুললেই দেখবেন, একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে এসেছে। তুলে নিয়ে তাকে থানার মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এটা আমরা আগে কখনও শুনতে পাইনি। এখন এই সরকারের আমলে দেখছি। এখন নারীদের কোনো সম্মান নেই, মানুষের কোনো সম্মান নেই। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়াবহ একটা ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।এছাড়াও আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বনিভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ জলবায়ু বিষযয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারাণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।