প্রশান্তি আর্ন্তজাতিক ডেক্স ॥ ব্যাপক উত্তেজনা দিল্লিজুড়ে। ক্রমশ আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ দাঁড়িয়েছে জনে। চলমান এ সংঘষের সময় তোপের মুখে পড়েছে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা। তাদেরই একজনকে প্যান্ট খুলে, তিনি হিন্দু না মুসলিম সেই পরিচয় নিশ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। দেশটির দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমস এ নিয়ে একটি অনলাইন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ ভিআইপি সমাগম সত্ত্বেও দিল্লিতে হিংসার রমরমা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে বিবরণ পাওয়া গেছে সাংবাদিকের কলমে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলন কেন্দ্র করে দিল্লিতে হিংসার নিশানায় পড়ল এবার সংবাদ মাধ্যম। গত মঙ্গলবার গুলিবিদ্ধ হলেন এক সাংবাদিক। বেধড়ক মারধর করা হল আরও দুই সংবাদকর্মীকে। গত সোমবার উত্তপ্ত এলাকায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়ে কোনও রকমে রেহাই পেলেন আরও এক বাঙালি সাংবাদিক। এদিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে হামলাকারীদের গুলিতে জখম হয়েছেন জে কে ২৪ঢ৭ নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক আকাশ। তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। এ ছাড়া জ্বলন্ত মসজিদের ছবি তুলতে গেলে প্রচুর মারধর করা হয় এনডিটিভি চ্যানেলের দুই সাংবাদিক অরবিন্দ গুণশেখর ও সৌরভ শুক্লাকে। গত সোমবার ওই এলাকাতেই ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার টাইমস অফ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন, যা পড়লে শিউরে উঠতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, উত্তেজনাপূর্ণ জাফরাবাদ অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলা মুখে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তার সহকর্মী সাংবাদিক। অনিন্দ্য লিখেছেন,গত সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি মৌজপুর মেট্রো রেল স্টেশনে পৌঁছতেই এক হিন্দু সংগঠনের সদস্য তার কপালে তিলক এঁকে দিতে তৎপর হন। আপত্তি করলে তাকে শুনতে হয়, ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তাহলে অসুবিধা কীসের? এর ১৫ মিনিট পরেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়ছুঁড়ি শুরু হয় এবং ‘মোদি’ মোদি স্লোগানের মাঝে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়। জানা যায়, স্থানীয় একটি বাড়িতে আগুন লেগেছে। সে দিকে এগোতে গেলে একটি শিব মন্দিরের কাছে অনিন্দ্যকে বাধা দেন একদল। অগ্নিকান্ডের ছবি তুলতে যাচ্ছেন জানতে পেরে তারা সাংবাদিককে বলেন, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তাহলে ওখানে কেন যাচ্ছেন? আজ হিন্দুরা জেগে উঠেছে। বাধা পেয়ে ঘুরপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গেলে তাকে ঘিরে ফেলে হাতে লাঠি ও লোহার রডধারী একদল। তারা সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন তার সহকর্মী সাক্ষী চাঁদ। রুখে দাঁড়তেই সেখান থেকে চম্পট দেয় সশস্ত্র দলটি। তবে একটু পরেই অনিন্দ্য বুঝতে পারেন, তার পিছু নেওয়া হয়েছে। অনুসরণকারীদের মধ্যে এক তরুণ এগিয়ে এসে তাকে সতর্ক করে, ‘ভাই, তুই একটু বেশি চালাকি করছিস। তুই হিন্দু, না মুসলিম?’ তারা সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করলে হাতজোড় করে অনেক অনুনয়ের পরে কিছু হুমকি দেওয়ার পরে রেহাই দেওয়া হয় চিত্র সাংবাদিককে। নিজের দফতরের অপেক্ষমান গাড়ি খুঁজে না পেয়ে একটি অটোরিকশা ধরে তথ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনিন্দ্য। কিন্তু অটোচালক মুসলিম হওয়ায় তাদের মাঝপথে থামিয়ে ঘেরাও করে চারজন সশস্ত্র যুবক। কলার ধরে দুজনকে অটো থেকে নামিয়ে মারধরের উপক্রম করে দুষ্কৃতীরা। নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এবং অটোচালক যে নির্দোষ, সে কথা জানিয়ে অনেক অনুনয়ের পরে ছাড়া পান অনিন্দ্য ও তার সঙ্গী চালক।