সাংবাদিকদের কেউ আর ‘সাংঘাতিক’ বলার সাহস পাবে না: প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান

প্রশান্তি কক্সবাজার প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে ॥ অপসাংবাদিকতা রোধ করতে সাংবাদিকদের ডেটাবেজ তৈরী করা হচ্ছে। প্রকৃত সাংবাদিকরা ডেটাবেজের আওতায় আসলে আর কেউ সাংবাদিকদের কটাক্ষ করে সাংঘাতিক বলার সাহস পাবে না।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কক্সবাজারের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ একথা বলেন। তিনি বলেছেন, সারাদেশের সাংবাদিকদের ডাটাবেজ করা হচ্ছে। ডাটাবেজের কাজ শেষে সবাইকে সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। প্রেস কাউন্সিলের পরিচয়পত্রের বাইরে সাংবাদিকতা করার আর সুযোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সব সাংবাদিককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। এই পেশাকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি।
গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে কক্সবাজার সার্কিট হাউজের কনফারেন্স হলে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাংবাদিকদের আইন পড়তে হবে, জানতে হবে। সঠিক তথ্য ছাড়া সংবাদ করা যাবে না। মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এমন সংবাদ যেন না হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, কে কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী, সেটা বিবেচনা না করে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করা দরকার। তাহলে পেশার মান বাড়বে। সবাই সমৃদ্ধ হবেন।
পত্রিকার মালিকপক্ষের উদ্দেশে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, সাংবাদিক-কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। আর্থিক বিষয়টি নিশ্চিত না করে পত্রিকার মালিকানা দাবি উচিত নয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও অধিকারের কথা সংবিধানে লেখা আছে। যা অন্য কোন পেশার ব্যাপারে তেমন নাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দূরদৃষ্টি দিয়ে প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বাঙ্গালীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির জনক খুবই আন্তরিক ছিলেন। নিজেই সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার হাত ধরেই ১৯৭৪ সালে প্রেস কাউন্সিলের যাত্রা। তিনি বলেন, সংবাদপত্র রঙিন কিন্তু সাংবাদিকদের ভাগ্য রঙিন নয়। আইন আছে, অধিকার বাস্তবায়নে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। সে জনই সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাব রয়েছে।
পত্রিকার মালিকদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা বলেন, যারা বেতনভাতা দেবেন না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আন্দোলন করতে হবে। তাতে আমাদের সর্বোচ্চ সমর্থন থাকবে। সাংবাদিকদের জন্য আইন আছে। তা বাস্তবায়নে নিজেদের সচেষ্ট থাকতে হবে। যেসব মিডিয়া হাউজ ওয়েজবোর্ড ফলো করে না; সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা দেয় না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারী বিজ্ঞাপন কিভাবে পায়? দেখতে হবে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। যে রাষ্ট্রে সাংবাদিকতা যত নিরাপদ ও স্বাধীন হবে সেই রাষ্ট্র তত এগিয়ে যাবে, সমৃদ্ধ হবে। সারাদেশের সাংবাদিকদের ডাটাবেজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রেস কাউন্সিল থেকে কিছু নীতিমালা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট পেলে ডাটাবেইজে স্থান হবে। দেয়া হবে একটি পরিচয়পত্র। তখন সত্যিকার সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হবে।
ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত কেউ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে প্রেস কাউন্সিল থেকে সহায়তা দেয়া হবে। কোড অব ইথিকস ভঙ্গ করলে পরিচয়পত্র বাতিল ও ডাটাবেজ থেকে তাকে ডিলিট করে দেয়া হবে। সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসা হবে।
সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে এই পেশায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, সংবাদ হতে হবে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ট। বিভ্রান্তিকর কোন সংবাদ করা যাবে না। সংবাদের প্রয়োজনে কোন সরকারি কর্মকর্তার কাছে গেলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। যারা তথ্য দিতে গড়িমসি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কিভাবে সাংবাদিকতা করতে হবে তার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহ আলম। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা।
কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব জিএম আশেক উল্লাহ, এডভোকেট আয়াছুর রহমান, প্রথম আলোর কক্সবাজার অফিস প্রধান আবদুল কুদ্দুস, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক আনছার হোসেন, বাংলাদেশ অবজারভারের প্রতিনিধি ফরহাদ ইকবাল, ইউএনবির প্রতিনিধি দিপক শর্মা দীপু প্রমুখ।
কক্সবাজারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ করা হবে। তার জন্য ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.