করোনায় আক্রান্ত দেশ

অবশেষে করোনায় আক্রান্ত হলো আমাদের প্রীয় মাতৃভূমী বাংলাদেশ। আর আক্রান্তের কারণও আমরাই। আমরা যারা দেশ থেকে বিলাসী জীবনের আশায় দেশ মার্তৃকাকে বিসর্জন দিয়ে অন্যদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছি তারা আবার বিপদে ফিরে এসেছি ত্যাগ করা দেশে এক মরণঘাতী ভাইরাস নিয়ে। এসেই ক্ষান্ত হননি বরং আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-পড়শিকে ঐ ভাইরাস উপহার দিয়ে এক নিরানন্দ ভিভিষিকাময় পরিস্থিতি ও পরিবেশ তৈরী করেছে। যা এখন সরকার এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
কোথায় নেই করোনার আতঙ্কাক্রমন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, পারিবারিক জীবনে, কর্মময় জীবনে, রাষ্ট্রিয় জীবনের সর্বক্ষেত্রেই এই করোনাতঙ্ক। আমরা দেখেছি, স্বাস্থ্যসেবায়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও অফিস আদালতে, কল-কারখানায় এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়ে। মানুষ নিজ ঘরেও এখন আর নিরাপদ নয় বলে মনে করে থাকেন। এই আতঙ্কের অপর নাম অতিরিক্ত ভিতী। তাই এই ভিতি থেকে বের হওয়া এখন জরুরী। সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভিতির টনিক থেকে বের করে আনাই এখন বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার চেয়েও বেশী আতংকের ও ভয়ের ছিল ডেঙ্গু কিন্তু সেই ডেঙ্গুতে এত ভীতির সঞ্চার হয়নি। কিন্তু করুনায় বিশ্বব্যাপী এক মরনাতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আক্রান্ত এবং মৃতের এবং সুস্থ্যহয়ে উঠার হারের আনুপাতিক তুলনা করলে দেখা যায় ভিতীর কোন কারণ নেই। তবে এটি একটি ছোয়াছে রোগ তাই এই ছোয়াছে অবস্থান থেকে কিভাবে নিজেকে এবং অন্যকে রক্ষা করা যায় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে অনুসরণ ও চর্চা করা দরকার।
আমাদের আকাঙ্খীত জন্মশতবার্ষিকেতেও ছিল করোনা আতঙ্ক; তাই অনুষ্ঠানের পরিধি সংকোচিত করে জন অনাড়ম্বর বিহীন সতর্কতার সাথে পালিত হয়েছে অনুষ্ঠানটি। কিন্তু আনন্দের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রকাশের অভাব বিরাজমান ছিল একমাত্র করোনা আতঙ্কে। আমরা এখন যেখানেই যাই না কেন সেই করোনা আতঙ্কের মধ্যেই নিত্যদিনের জীবন যাপন করে থাকি। তবে এই আতঙ্ক মুক্ত করতে দরকার আমাদের সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ। আমরা জানি এই রোগে আক্রান্ত হলে বয়ষ্করা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এমনকি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু সেই আমরাই এই জীবানু বহন করে এনে আমাদের প্রীয়জনদের জীবন বিপন্ন করছি। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের দেশে করোনাকে মোকাবেলা করার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে এমনকি আমাদের জনগণেরও দায়িত্বহীনতার অভাব রয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে সামরিক শাসন দরকার যেমন কারফিউ। তাহলে হয়ত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আরেকটি বিষয় মানুষপটে ভেসে উঠে যে, লক ডাউন বা ষাটডাউন। আসলে শৃঙ্খলিত জীবনে এবং জাতিতে এই শব্দ দুটি প্রযোজ্য এবং আশানুরূপ ফল বয়ে আনবে কিন্তু আমাদের এই বাঙ্গালী জীবনে এই শব্দের কোনটিই কোন কাজ আসবে না বরং কঠোর শাষনের ভীতিই পারে উক্ত অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে।
করোনা আতঙ্কে মানুষের মনে দূরভূত হচ্ছে ভালবাসা, সামাজিক মেলা-মেশা, বাঙ্গালীর দীর্ঘদিনের প্রচলিত রিতি ও নীতির, ধর্মীয় অনুভুতির এমনকি সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাকলুকাতের সকল গুনাবলির। আমরা এখন দেখছি এই করোনাকে নিয়ে রাজনীতিও হচ্ছে এমনকি বিভিন্নজন বিভিন্ন ফায়দা লোটার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যেমন করোনার ছোবলে নিত্যপণ্যের বাজার দিশেহারা; যেমন, চাউল, ডাল, আলু থেকে সকল পন্যেই এখন করোনা আক্রমণ করেছে। তাই মানুষ দ্বিগুণ দামে মজুত করছে করোণাবিহীন খাবাররূপী বিষপন্ন। যা আগামীতে আরো ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করতে পারে। তবে এখনই যদি লাগাম টানা না হয় তাহলে হয়ত এই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও ভোগ্যপন্য মহামারি রূপ লাভ করবে আর সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তরান্বিত হতে বাধাপ্রাপ্ত হবে।
সেলফ্ কোয়ারেন্টাইন বলতে যা বুঝায় তা খুবই ভয়ংঙ্কর বিপদের কারণ বটে। তবে রাষ্ট্রপতির নির্দেশীত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ছিল এই জাতির জন্য সঠিক এবং প্রযোজ্য। বেশীরভাগ মানুষ কোয়ারেন্টাইন মাানে না বা বুঝে না; বরং তারা নিস্বার্থভাবে বিলিয়ে যাচ্ছে করোনার বিজ। আর অনেকে সেলফ্ কোয়ারেন্টাইনে আছেন কিন্তু তা ফলপ্রসু নয়, কারণ ঐ লোকটি তার পরিবারের সঙ্গে কোন না কোনভাবে মিশছেন এবং সেই পরিবারের লোকজন সমাজের সকল স্তরেই মিশছে। আবার কোন কোন মানুষ তাঁর কাজের লোকের সঙ্গে মিশছে এবং সেই কাজের লোক কাজ শেষে তার পরিবারের সঙ্গে এবং সমাজের সকল স্তরে মিশে ভাইরাসকে সংক্রমিত হতে সহায়তা করে যাচ্ছে। তাহলে এই সেলফ্ কোয়ারেন্টাইনের গুরুত্ব কোথায় এবং কি প্রয়োজন এই সেফল্ কোয়ারেন্টাইন নামক নাটকের। তবে এই অবস্থা থেকে এখনই যদি বের হয়ে না আসে তাহলে আরো ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে এই স্বাধীন জাতীর স্বাধীনতা ভোগের ক্ষেত্রে। সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন বন্ধ করুন এবং প্রাতিষ্ঠানীক কোয়ারেন্টাইনে মনোযোগ দিন এবং প্রত্যেককে সেল্ফ থেকে বের করে নিয়ে আসুন।
আতঙ্কের ভিতিতে মানুষ স্বাভাবিক জিবন যাত্রায় বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটে এমনকি দুরপাল্লার ভ্রমণেও নানাবিধ বিপত্তী যুক্ত হয়েছে। চিকিৎসায়ও বিরম্বনার স্বীকারে মানুষ নাকাল এখন। শহর ছেড়ে মানুষ ফিরে যাচ্ছে গ্রামে; কিন্তু যেখানে শহরেই এই করোনার চিকিৎসা যথেষ্ট অভাব সেখানে গ্রামে গিয়ে কিভাবে চিকিৎসার নিশ্চয়তা এবং বিজ ছড়ানোর কাজের গতিকে মোকাবেলা করবে। গ্রামের সহজ সরল মানুষজনকে এই ভাইরাসে বিপন্ন করা ছাড়া কি কোন ব্কিল্প থাকবে? বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে কথা বলে যাচ্ছেন যা সমন্বয়হীনতারই পরিচয় বহন করে। যা দেখে বোধসম্পন্ন মানুষজন হতাশ এবং ভয়াবহতার আগাম দৃশ্য অবলোকন করেন। গত তিনমাসের প্রস্তুতি একেবারেই নাজুক ছিল যা পরিসংখ্যান এবং চিকিৎসা ও পরিক্ষার ফলের বাস্তবতা বলে দেয়। এই রোগের পরীক্ষা এবং চিকিৎসা নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালে সিমাবদ্ধ না রেখে সাড়া দেশে ছড়িয়ে দেয়া আশু প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রতিটি উপজেলাই এই রোগের চিকিৎসা এবং পরিক্ষার ব্যবস্থা করা হউক। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেœ কোয়ান্টেরাইন ব্যবস্থা চালু করা হউক এমনকি আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড দ্রুত চালূ ও প্রস্তুত রাখা হউক। যাতে করে আক্রান্ত এবং এর পরিবার উভয়ই নিরাপদ ও নিরাপত্তায় থেকে অন্যদেরকে রক্ষায় ভুমিকা রাখতে পারে।
ধর্মীয় ব্যবসায়ীরা এখন কোথায়? ওয়াজ ও মাহফিল করে এই করোনাকে বিতারিত করুন। তবে কিছু কিছু জ্ঞানপাপী এই করোনা নিয়ে যে সকল বক্তব্য দিচ্ছেন তা মিথ্যার রাজ্যে বসবাসকারী বোকাদের জন্য। তবে এই ধরণের কথা বলা থেকে বিরত থাকুন এবং নিজে ও অন্যকে রক্ষায় ভুমিকা রাখুন। আল্লাহ জ্ঞান দিয়েছে আর সেই জ্ঞানের পরিপূর্ণ ও উপযুক্ত ব্যবহারে তৎপর হয়ে এগিয়ে আসুন। করোনার সঙ্গে কেউ যুদ্ধ করে না এমনকি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে কেউ শহীদ হবে না বরং ঐ জ্ঞানপাপিদের ভুল ওয়াজে মানুষ শহীদ হতে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন না। ধর্মযুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলেই শহীদ হন যা ইতিহাস ও হাদীস কালামে স্বীকৃত। তবে ধর্মের দ্বন্ধ থেকে বের হয়ে এসে খোজ করুন কোথায় আছে করুনা থেকে মুক্তির বার্তা। তবে পুর্বের নবীদের কিতাবে দেখেছি কিভাবে আল্লাহর ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বা পাকরূহে পূর্ণ হয়ে রোগ জিবানুকে ধমক দিয়ে বিতারিত করেছেন, অসুস্থ্যকে সুস্থ্য করেছেন, মৃতকে জীবন দিয়েছেন, নদীকে শান্ত করেছেন, বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে ঐ কিতাবগুলো স্বাক্ষ্য দেয় যে, ঐ আশ্চয্য কাজ এখনও চলমান এবং আল্লাহ ভক্তরা তা করে যাচ্ছেন। তাই আসুণ ঐ মানুষগুলোকে খুজে বের করি যাতে এই করোণাকে খোদার ক্ষমতায় ধমক দিয়ে পৃথিবী থেকে বিতারিত করতে পারি। মানুষকে নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা দিয়ে সুখ ও শান্তিতে জীবন অতিবাহিক করার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
আসুন সকলে মিলে করোণার বিরুদ্ধে খোদার পাকরূহকে ব্যবহার করি; খোদার শক্তিকে ব্যবহার করি এবং করোনামুক্ত বিশ্ব গড়ি। করোনায় আতঙ্কের প্রয়োজন নেই বরং খোদার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হই, ন্যায়, সততা এবং সৌন্দয্য বৃদ্ধিতে কাজ করি। মানব কল্যাণের তরে নিবেদিত হয়ে আল্লাহর রাজ্য বিস্তার ও আল্লাহর অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করি। “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি; সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, অপকারের জন্য নয়, সেই পরিকল্পনার মধ্যে দিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।” ” আমার লোকেরা, যাদের আমার বান্দা বলে ডাকা হয় তারা যদি ন¤্র হয়ে মুনাজাত করে ও আমার রহমত চায় এবং খারাপ পথ থেকে ফেরে, তবে বেহেশত থেকে তা শুনে আমি তাদের গুনাহ্ মাফ করব এবং তাদের দেশের অবস্থা ফিরিয়ে দেব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published.