জামালপুরে চুরি হয়েছে গরীবের ৩৩ হাজার কেজি চাল

প্রশান্তি ডেক্স \ গত এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বস্তা চুরি করা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। যার পরিমাণ প্রয় ৩৯ হাজার ৩৫০ কেজি। জাতীয় দৈনিক বিজনেজ স্ট্যানডার্ড-এর অনলাইন বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত সাংবাদিক হোসাইন শাহীদের করা একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লকডাউনের পর স্থবির হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। এ সব মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় অসহায় দুস্থদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় এসব মানুষের পেটে অন্ন যোগাতে চেষ্টা করছে সরকার। তবে এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের একটা অংশ গরীবের চাল বিতরণে অনিয়ম করছে। চুরি করে বিক্রি করছে অনত্র। আর ময়মনসিংহ বিভাগে এই চাল চুরির দৌড়ে এগিয়ে আছে জামালপুর জেলা। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গত এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বস্তা চুরি করা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। যার পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার ৩৫০ কেজি। এই চালের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮১০ টাকা। এর মধ্যে জামালপুর জেলা থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৫৫৪ বস্তা চাল। যার পরিমাণ ৩৩ হাজার ২১৫ কেজি। এ সংক্রান্ত মামলায় এর আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬০ টাকা। চাল চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় মামলা হয়েছে ছয়টি। এজাহারভুক্ত হয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের খুঁজছে পুলিশ। জামালপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হক জানান, স¤প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় তারা সতর্ক হয়েছেন। চাল বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সব কার্যক্রমে বাড়ানো হয়েছে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা। পাশাপাশি জেলার হতদরিদ্রতে একটি ‘নির্ভুল তালিকা’ করছে জেলা প্রশাসন। পূর্বে বিতরণের আগের দিন চাল সরকারি গুদাম থেকে ওঠানো হতো। এখন প্রতিদিনের চাল ওইদিন সকালে গুদাম থেকে ছাড় করা হয়। এতে চাল সরানোর আর কোনো সুযোগ থাকছেনা। বাকি তিন জেলা ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনায় তিনটি চাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। একটি করে মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এসব ঘটনায়। এর মধ্যে শেরপুরে ৩৩ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। যার ওজন ৯৯০ কেজি এবং মূল্য ৪৩ হাজার টাকা। এ মামলায় মানিক মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানায় ৯২ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। চালের ওজন ৪ হাজার ৫৯ কেজি এবং এর মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৫০ টাকা। এই মামলায় আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে পাঁচ বস্তা চাল উদ্ধারের ঘটনায় তিন অভিযুক্তের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া, ত্রিশালের বইলর বাজারের ডিলার আব্দুল খালেকের গুদাম থেকে চলতি মাসের ২ তারিখে ১৬ বস্তা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল জব্দ করা হয়। এসময় ডিলার আব্দুল খালেকের অনুপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ত্রিশালের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ডিলারশিপ বাতিল করেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, এমন ক্রান্তিলগ্নে যারা গরীবের জন্য বরাদ্দের চাল নিয়ে কারসাজি করে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। পাশাপাশি সামাজিকভাবেও এদের বয়কট করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানোর আহŸান জানান তিনি। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি ব্যারিস্টার হরুন অর রশিদ বলেন, “ত্রাণের চাল অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চুরি হওয়া মালামাল জব্দ, আসামি গ্রেপ্তারকরাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা এ সব বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.