আজ রাত ৩.৩০ মিনিটে আমি একটি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নে দেখার সময় ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করছি সকাল হলেই ফোন দিব এবং প্রীয় অভিভাবককে এই বিষয়ে সচেতন করে দিব ও আল্লাহর দরবারে দোয়া করি যেন স্বপ্ন সত্যি না হয়। আল্লাহ যেন ওনাকে দীর্ঘায়ু করেন। কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই ফোন পাই যে, ওনার আম্মাজান আমার আশ্রয়ের অভয়াশ্রম শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন ভোর ৩:৪৫ মিনিটে। সংবাদটি শুনে আমি একটু স্তম্ভিত হয়ে যায় এবং চিন্তা করি এটাই কি আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। মহান রাব্বুল আল-আমিনের কাছে মোনাজাত করি এবং ছুটে যাই ওনার বনানীর বাড়িতে। গিয়ে দেখি পরিচিত জন সবাই মেইন গেইটের বাহিরে দাড়িয়ে বিভিন্ন কথা বলছেন। আমিও সেখানে দাড়িয়ে ছিলাম দুই ঘন্টা এবং দু একটি কথা বলি। কিন্তু জনাব হক সাহেবকে কিছুই বলা হলো না কিন্তু দেখা হলো সবার সঙ্গে দেখাতেই যেন আমার ভিতরকার শুন্যতা ও হাহাকার করা হৃদয়টা চৌচির হয়ে গেল। আমার শেষ ইচ্ছাটাও পূর্ণ হলো না; আমার ইচ্চা ছিল খালাম্মা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরবেন এবং আমি ওনার সঙ্গে দেখা করে কথা বলে একটু হালকা হবো এবং আগামী দিনের জন্য ওনার আশির্বাদ নিয়ে আসব। কিন্তু সেই ইচ্ছায় এখন গুড়েবালি।
আমি জনাব আনিছুল হক সাহেবের সামনে কথা বলার শক্তি হারিয়ে শুকনো গলায় কিছু বলতে গিয়ে স্বর বের হচ্ছিলনা । তাই আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বাসায় ফিরে এলাম। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিলাম যে, ওনার জানাজায় অংশ গ্রহন করব এবং বনানী করবস্থানে দাফনে অংশ নিব। এটা আমার আত্মার অধিকার। জনাব জাহানারা হক আমার মাথায় হাত বুলিয়েছিলেন এবং আমাকে নিয়ে ভবিষ্যৎবানি করেছিলেন; যা আজ সবই পূর্ণ হলো কিন্তু আমার শেষ ইচ্ছাটা অপূর্ণই রয়ে গেল। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতে তোমার সঙ্গে রাখ এবং আগামী দিনে ওনার সঙ্গে জান্নাতে দেখা করে শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করার সুযোগ দাও।
আমার স্বপ্নটা ছিল : আমি মোহাম্মদপুর থানায় গেলাম; কাজ শেষে বের হয়ে বাসার ফেরার পথে দেখলাম একটি পাবলিক আক্রমন। এগিয়ে গেলাম, দেখলাম মানুষ এলোপাথারি ভাবে মারছে এবং একটি লোক আহত হয়ে মাগো মাগো বলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যাচ্ছে না; এমনি সময় আমি এগিয়ে গেলাম এবং গিয়ে ওনাকে কোলে তুলে আমার গাড়িতে করে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলাম এবং মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে স্বপ্ন থেকে জেগে উঠলাম। এই মানুষটিই ছিলেন আমার প্রীয় অভিভাবক জনাব আনিছুল হক সাহেব।
আমি শৈশব থেকেই ওনার পরিবারকে ভালবাসি এবং ওনাদের সঙ্গে আমার একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই এমন হলো। রক্ত বলে কথা। আল্লাহ ওনার প্রতি আমার এই ভালবাসা আরো বাড়িয়ে দাও এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই পরিবারের পাশে থেকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে সাহায্য করো।
পরিশেষে বলতে চাই মহান আল্লাহ তুমি আমাদেরকে কবুল করো এবং মাননীয় আইন মন্ত্রীর প্রাণপ্রীয় আম্মা এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাবেক প্রধান আইনজীবি জনাব মরহুম সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেবের স্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহানার হক আজ রাত ৩.৪০ মিনিটে ইন্তোকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিওন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি কসবা থানার পানিয়ারূপ গ্রামের বাসিন্দা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তথা বাংলাদেশের গর্ব। আল্লাহ তাঁর মৃত্যুতে সন্তান ও পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং অসংখ গুণগ্রাহীদের শোক সহ্য করার তৌফিক দান করুন।
হে আল্লাহ! আপনি মরহুমাকে ক্ষমা করুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান করবকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিস্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিস্কার করেছেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।