প্রত্যেকটি মানুষের দেহেই প্রাণ সঞ্চার করেছেন মহান আল্লাহ। প্রত্যেকটি মানুষকেই তিনি জ্ঞান বুদ্ধি, বিবেক বিবেচনা বোধ এমনকি ভাল-মন্দ উপলব্দি করার বোধশক্তিও দিয়েছেন। তাই শরীরে ব্যাথ্যা পেলে অনুভুব করতে এবং সেই অনুযায়ী বলতে পারছে। কিন্তু এই জীবনের অস্থায়ী মালিকানাও মাবুদ আল্লাহ দিয়েছেন মানুষকে। প্রত্যেকটি মানুষ এই মালিকানা নিয়ে জীবন সুন্দরভাবে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করে থাকেন বা যাচ্ছেন। অস্থায়ী জীবনের স্বাধ ভোগ করছেন। জীবন রক্ষার জন্য বা প্রয়োজনে বিভিন্ন উপকরণ বা উপাদান গ্রহণ করছেন। জীবন রক্ষায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশ্রয় বা স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। দৈনিক আহার এবং শারিরীক ব্যায়াম করে যাচ্ছেন। এই জীবনকে নিয়েই নানান কথা; নানান প্রতিকুলতা, জটিলতা এবং পরিশেষে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে স্থায়ীভাবে জীবনের প্রস্থান ঘটছে।
নিত্যদিনের খবরাখবরে বা দৈনন্দিন দৃশ্যমান ঘটনার আবহে প্রশ্ন জাগে জীবনতো আমার তাহলে রক্ষা করার দায়িত্ব কার? যিনি সৃষ্টি করেছেন সর্বপ্রথমে তাঁর কিন্তু অস্থায়ী ভাবে জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনা বোধ ও বিবেক কে ব্যবহার করে জীবন রক্ষার দায়িত্ব আমার। যেহেতু জীবনের মালিক একটি মানুষ তাই ঐ মানুষটিকেই তার জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে… ধরুন রাস্তায় পার হচ্ছি গড়ির ঝটলা ভেদ করে; তখন একটি বারের জন্যও ভাবিনা এই জীবনকে রক্ষা করতে হবে…. শুধু ড্রাইভারদের উপর জীবন রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে গতিময় জীবনে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কখনো কখনো এর ব্যত্যয়ও ঘটে যার পরিণত হয় স্থায়ীভাবে প্রস্থান। জীবন রক্ষায় স্ব উদ্যোগে কোন ভুমিকা না রেখে বরং ডাক্তার, কবিরাজ, খনকার, পীরদের উপর দায় চাপিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ। কোন সমস্যা হলেই ডাক্তার দেখবে এবং ডাক্তার জীবন রক্ষা করবে? এই মনোভাবের ব্যবহার বহুলাংশে ব্যবহৃত হচ্ছে। সমস্যা হওয়ার আগে থেকে এর প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সমস্যার অন্তরালে হাবুডুবু খাচ্ছে মানুষ।
সামাজিক ও রাষ্ট্রিয়ভাবেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মানুষ তার নিজের জীবন রক্ষায় বিন্দু মাত্র সচেতন হয়ে দায়িত্ববোধ চর্চায় এমনকি কথা ও কাজে প্রকাশ করছেন না। চলমান করোনা মহামারির কথাই ধরুন। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষায়; পক্ষান্তরে মানুষ সেই চেষ্টায় সহযোগীতা তো করেইনা বরং নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে প্রতিযোগীতা অব্যাহত রেখেছে। সরকারের নেয়া ব্যবস্থায় আমী, পুলিশ, র্যাব, আনছার, স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার এবং সহায্যকারীগণ প্রতিনিয়ত নিজের জীবন রক্ষার পাশাপাশি অন্যের জীবন রক্ষায় জীবন বাজি রেখে যাচ্ছেন। কিন্তু যাদের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তারাতো নিজের জীবন রক্ষায় স্ব স্ব দায়িত্বটুকু পালন করছেন না। বরং সরকারের বিধি নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজস্ব মনগড়া অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে যাচ্ছেন।
তাই প্রশ্ন হলো জীবনতো আমার; আর রক্ষা করার কাজে প্রথমেই আমাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তারপর সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার ও রাষ্ট্রের দয়িত্ব। তবে বতমানে রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থা একযোগে কাজ করছে কিন্তু আমি বা আমরা ঐ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি না? কেন?? এর উৎসমূলে এখনই আঘাত করা দরকার। আমি + সমাজ ব্যবস্থা + রাষ্ট্র যদি একযোগে এগিয়ে যেতে পারি তাইলেই সাফল্য শতভাগ নিশ্চিত। আসুন আমরা আমাদের স্ব স্ব জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের দেয়া সাবজনীন বিধিনিষেধগুলো পালন করে এগিয়ে যাই। করোনাকে এমনকি এরচেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই ভিভিষীকাময় দিনগুলোর চেয়ে করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাসটি আমাদের জন্য বিন্দুমাত্র ভয়ঙ্কর নয়। সুতরাং স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিভিষীকাময় তীব্র ভয়ঙ্কর দিনগুলি অতিক্রম করে ছিনিয়ে এনেছি এই বাংলাকে… আর সেই জাতি এবং জাতিস্বত্তার প্রবাহে করোনাকেও বিতারিত করে দ্বিতীয়বার বিরত্বের বিরত্বগাথা দৃশ্যমান রাখবো পৃথিবীর বুকে। এই হউক আমাদের প্রত্যয়দৃপ্ত অঙ্গিকার। সরকারের দেয়া বিধি নিষেধ পালন করুন এবং করোনাকে বিতারণে নিজের ভুমিকা সমুজ্জ্বল রাখুন। জীবন আমার তাই আমাকেই রক্ষা করতে হবে এই নিতিতে এবং রীতিতে ফিরে আসুন।