প্রশান্তি ডেক্স \ চিরচেনা পৃথিবীর চেহারা প্রতিমুহূর্তে বদলে যাচ্ছে। দেশে-দেশে মানুষের জীবন-যাপনের প্রণালীও বদলে যাচ্ছে। বাড়ছে বহুমুখী বিপদ এবং তৈরি হচ্ছে বিপদ মোকাবিলার পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি। সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির লং আইলান্ড জুইশ হাসপাতালের আইসিইউ থেকে ডা. মঙ্গলা নরসিমহানের কাছে গত শুক্রবার একটি জরুরি কল এলো। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৪০ এর কোটার এক ব্যক্তির অবস্থা শোচনীয়, তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া দরকার কি না তা দেখতে আইসিইউতে এই চিকিৎসককে ডাকা হল। নারসিমাহ বলেন তার সহকর্মী চিকিৎসকদের বলেন, ‘আমি আসতে আসতে রোগীকে পেটের ওপর শোয়ানোর চেষ্টা কর এবং দেখ তাতে কাজ হয় কি না। এই ভিন্নধর্মী উপায়েই কাজে দিয়েছে করোনাভাইরাস রোগীকে বাঁচাতে। নারসিমাহর আর আইসিইউতে যাওয়ার প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসকরা গুরুতর অসুস্থ করোনাভাইরাস রোগীদের পেটের ওপর শুইয়ে (উপুড় করে শোয়ানো) ফল পাচ্ছেন, এটা তাদের ফুসফুসে অক্সিজেন চলাচল বাড়িয়ে দেয়। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের অলাভজনক হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক নর্থওয়েল হেলথের ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ডা. নরসিমহান বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে আমরা অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছি, একশভাগ সত্যি। তিনি বলেন এটা খুবই সাধারণ একটি কাজ এবং আমরা দারুণ উন্নতি দেখছি। প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই আমরা এটা চেষ্টা করে দেখতে পারি। করোনাভাইরাস রোগীদের প্রায়ই মৃত্যু হয় এআরডিএস বা অ্যাকিউট রেসপিরেটোরি ডিসট্রেস সিনড্রোমে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য অসুখেও এই সিনড্রোমে রোগীদের মৃত্যৃ হয়। সাত বছর আগে নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে ফরাসি চিকিৎসকদের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, এআরডিএসের রোগী যাদের ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তাদের উপুড় করে রাখা হলে মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকে। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা এআরডিএস রোগীদের উপুড় করে রাখায় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এখন করোনাভাইরাস রোগীদের ক্ষেত্রে তারা এই কৌশলের প্রয়োগ দ্বিগুণ করেছে এবং তা ফল দিচ্ছে। লং আইল্যান্ড জুইশ হাসপাতালে যখন ওই রোগীকে পেটের ওপর শোয়ানো হয়, তখন তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন হার (রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা) বেড়ে ৮৫ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ হয়ে যায়। ভেন্টিলেটর সাপোটের রোগীদের সাধারণত দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা উপুড় করে রাখা হয়। বাকি সময়টা পিঠের ওপর ভর করে শোয়ানে হয় যাতে চিকিৎসকরা সামনের দিক থেকে দেখে তার চিকিৎসা দিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ছয় লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার ৬৪৪ জনের। ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধু নিইউয়র্কে। এ রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। ৩৬ হাজার ৯৪৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ।