সারাদেশ ঘুরে এসে সচিত্র প্রতিবেদনে বাংলাদেশের লকডাউনের বিস্তারিত আলোচনান্তে তুলে ধরা হলো। ধারাবাহিক এই লিখায় স্ব স্ব উদ্যোগে সত্য উপস্থান করাই আমাদের লক্ষ্য। সরকারের আন্তরিকতা এবং সফল পদক্ষেপ বাংলাদেশকে রক্ষায় যথেষ্ট ছিল কিন্তু জনগণ সরকারের ঐসকল পদক্ষেপকে সহযোগীতা এবং স্ব স্ব জীবন গুরুত্বপূর্ণ ভেবে পালন করলেই হতো। কিন্তু এখানেই বিপত্তি। কিছু মানুষ শতভাগ চেষ্টা করে সরকারের পদক্ষেপকে সহযোগীতা করে যাচ্ছে আর কিছু মানুষ বিভিন্ন ছুতোয় অমান্য করে নিজের এবং সামাজিক জীবনে মরণঘাতির ভিভিষিকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছাচারিতায় ঘা ভাসিয়েছে। সরকারের ভালবাসা এবং আন্তরিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে। ভাবনাটা এমন যে, করোনা নামক মহামারির কোন অস্তিত্ব নেই অথবা বাংলাদেশ করোনামুক্ত আছে। তাই মাঝে মাঝে ঢাকা শহরের বাজারে এবং রাস্তাÑঘাটে মানুষের পদচারণায় তিল ধারণের ঠাই পাওয়া যায় না। সাংবাদিক এবং প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিতদের গারি ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকা পড়ে থাকতে হয়। এমন অবস্থা এই কঠোর লকডাউন সময়ে হবে তাতো মেনে নেয়া যায় না।
তবে গত কয়েকদিন অঘোষিতভাবে জনগণ লকডাউন ভেঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে দৈনন্দিক কাজে কর্মে নেমে পড়েছে। তবে জনগণের স্বেচ্ছাচারিতায় মনে দু:খ হয় এবং সরকারকে বলতে ইচ্ছা করে কেন এবং কাদের প্রয়োজনে এতকিছু করে যাচ্ছেন। যার যার জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিয়ে সামনে এগিয়ে যান উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক কর্মকান্ডকে সামনে নিয়ে। কিন্তু তাও বলতে পারি না কারণ সরকার এবং আমিতো নির্বোধ ও অবিভেচক নই। মানবিক গুণ সম্পপ্ন এবং দায়িত্বশীল প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব এই বিপদে প্রতিটি মানুষকে রক্ষায় ভুমিকা রাখা। সরকার এর দায়িত্ব দেশের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া এবং বহি শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা এমনকি মৌলিক চাহিদার যোগান ও নিশ্চয়তা আর নির্ভয়ে পথ চলার ব্যবস্থা করা। তাই সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টিকর্তার দায়িত্বটুকু সরকার আর বিবেক প্রসুত সচেতন মানুষগুলোরই নিতে হবে। সেই কারণেই এই নির্বোধ আম জনতাকে রক্ষায় ভালবাসার পরশ দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
যারা লকডাউনকে সফল করতে চেষ্টা করছেন কেউ ঘরে থেকে, কেউ রাস্তায় সাধারণ মানুষকে ঘরে ফিরাতে এবং দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন দায়িত্ব সততা এবং আন্তরিকতার সহিত পালন করে। সেইসকল মানুষদের মনেও মাঝে মাঝে একটি বোধ কাজ করে যে, আমরা কেন ঘরে আবদ্ধ থাকব, আমরা কেন ওদেরকে ঘরে ফিরাতে বার বার চেষ্টা করবো, আমরা কেন ওদেরকে সেবা দিব, আমরা কেন ওদেরকে খাবার দিব, আমরা কেন ওদের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করতে যাচ্ছি। সেই ভেবেও কেউ কেউ আবার ঐ নির্বোধ মানুষদের সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে জীবনের চাহিদার কমতি নেই এবং এই চাহিদার যোগান দিতে গিয়েও লক ডাউন বিঘিœত হচ্ছে। বিশেষ করে দোকানে কাচা বাজারে রাস্তায়, টিসিবির পন্য ক্রয়ে এমনকি রিলিফ বিতরণে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা হচ্চে না। কিছু কিছু জায়গার এর প্রতিফল দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লংগিত হচ্ছে এই আদেশ। এই কথা আমি আপনি সকলেই জানি এবং বের হলেই দেখি। তাই এর থেকে বের হয়ে সামাজিক দুরুত্ব ও লকডাউনকে পুরোপুরি বাস্তবায়নে আরো কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সেইদিকে প্রশাসন এবং সরকার মনযোগী হয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে।
তবে আমি মনে করি জনগণ এখন করোনার সহজলভ্যতাকে বুঝতে পারেনি। বরং করোণাভিতির কারণে নিজেদেরকে ঘুটিয়ে রাখছে আর কেউ কেউ করোনাকে পাত্তা না দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন অকার্যকর অবস্থায় পর্যবসীত হচ্চে। তাই আরো কঠোর কি ভুমিকা নেয়া যায় তা নেয়া হউক অথবা লকডাউন পুরোপুরি উঠিয়ে জনগণ করোনার বাস্তবতা মুখোমুখি হতে দেয়া হউক। তাহলে হয়ত বাংলার জাতি হারে হারে টের পারে এর বিস্তৃতির ভয়াবহতার। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে দেখা গেল কোথাও যেন সামাজিক দুরুত্ব নেই, করোনার সচেতনতা নেই, দোকানপাট খুলে দেদারছে ব্যবসা করছে, তবে মোবাইল কোর্টের ভয়টা ব্যবসায়ীদের মনে কাজ করছে। রাস্তা-ঘাটে গাড়ির চাপে যাতায়তে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে (বিশেষ করে অটো রিক্সা, সিএনজি, মাইক্রো, ব্যবসায়ী এম্বুলেন্সসহ আরো মনুষ্যচালিত জান)। জনগণ তাদের সকল কাজকর্ম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আরো বেগবান গতিতে করে যাচ্চে। সামাজিক দুরুত্বের পরিবর্তে মারপিট করে যাচ্ছে। জটলা সৃষ্টি হচ্ছে এবং লোক সমাগমে সকল কাজই নিবিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি ব্যাপর হলো সারা পৃথিবীতে যেখানে ধর্মীয় এবাদতে জমায়েত নিষিদ্দ এবং স্ব স্ব উদ্যোগে স্ব স্ব বাড়িয়ে ধর্মীয় এবাদত সম্পন্ন হওয়ার কথা সেখানে কিনা এবাদতখানাই ৪০০;৫০০. ১০০০ মানুষের মোলাকাত। বিশেষ করে গতকাল জুম্মার নামাজের জন্য সকল মানুষ সামাজিক সচেতনতা বা দূরত্ব ভঙ্গ করে মসজিদ গিয়ে নামাজ আদায় করে করোনাকে স্বাগতম জানিয়ে বংশ বিস্তারে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে। এই যদি হয় আমাদের শিক্ষা এবং জ্ঞানের ব্যবহার তাহলে আর কিইবা করার থাকে। যেখান থেকে ইসলামের উৎপত্তি এবং যেই মক্কাকে এবং মদিনাকে ঘীরেই ইসলামের ঘুর্ণায়মান চাকা সচল সেই মক্কা ও মদিনাকে এমনকি তাদের দেয়া বিধানকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে করোনা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আমাদের ধর্মভীরু মানুষ এবং কতিপয় আলেম। এখন বের হতে না পারলে মনে হয় সরকারের নেয়া সকল পদক্ষেপই অকার্যকর হয়ে পড়বে। তাই প্রতি শুক্রবার বিশেষ করে মসজিদ পুলিশ পাহাড়া বসানো হউক। যে সকল এলাকায় সরকার এবং প্রশাসনের বিধি নিষেধ অমান্য করা হচ্ছে বিশেষ করে সেইসকল এলাকায়। বাজারে পুলিশ দেয়া হউক, দোকানেও নির্দিষ্ট সময় খোলা এবং পুলিশি পাহাড়া বসানো হউক, তাহলে হয়ত বাজার দোকান এবং মসজিদ বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে সামাজিক দুরুত্ব কার্যকর করা সম্ভব হবে। নতুবা করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া দূরহ হয়ে পড়বে।
কোথাও কোথাও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তথ্য গোপন করে সাধারণ মৃত্যু বলে দাফন করে মাটি দেয়া হচ্ছে; আর এই তথ্য গোপন মাটি দেয়ার কারণে করোনা সম্প্রসারিত হতে উৎসাহ পাচ্চে। করোনার লক্ষণে মৃত্যুবরণ করলেই আইইডিসিআর এর নির্দেশনা অনুযায়ী দাফন এবং মাটি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই নিয়ম যারাই অমান্য করবে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনতে হবে অথবা সচেতন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধুবাদ জানাই আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কারন তারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে নিজের জীবন বাজী রেখে করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সকল প্রচেষ্টা সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। শহরে ঢোকা এবং শহর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাজধানী কেন্দ্রীক চেকপোষ্ট কার্যক্রম ফলপ্রসুভাবে পালন করছে। তবে ভৈরব নরসিংদি, বিশ্বরোড, আড়াই হাজার, গাবতলি, কাচপুর, টঙ্গিসহ অন্যান্য এলাকায় সন্তোজনক তদারকি এবং সঠিক দায়িত্ব পালিত হচ্ছে। তবে মফস্বল এলাকায় উপজেলা এবং জেলা পর্যায়েও যদি এই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেত তাহলে হয়ত আরো কার্যকর এবং ফলপ্রসু হতো। অনুরোধ রাখছি কর্তৃপক্ষের কাছে যাতে ঢাকাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে সারা দেশে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়।
মাঠপর্যায়ে প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপকরণ দেয়া গেলে হয়তো আরো কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহি হবে এবং সরকার দেয়া এবং জনগণ ও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে সকল দায়িত্ব আন্তরিকতার সহিত পালনে কার্যকর হবে। ধারাবাহিক এই লকডাউন হালচাল চলবে এবং দেশের সচিত্র চিত্র তুলে ধরে আপনার আমার সকলের নিরাপদ নিশ্চয়তা বিধানে অবধান রাখতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।