প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো-বায়োলজিস্ট এলিসা গ্রানাটো এবং ক্যান্সার গবেষক এডওয়ার্ড ও’নেইলকে কয়েকদিন আগেই প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। পরীক্ষামূলক এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর, সে রিপোর্ট আসতে এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন গবেষকরা। শুধু ইংল্যান্ডেই নয়, পরীক্ষামূলক করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োগ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশে। ভারতের হাইড্রোক্লোরোকুইন কিংবা জাপানের অ্যাভিগান- অনেক কিছুকেই কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক হিসেবে ভাবা হচ্ছে এবং পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। যদিও এখনও পযন্ত চূড়ান্তভাবে কোভিড-১৯ এর সঠিক ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক কোনটি, সেটি নির্দিষ্ট হয়নি। সারা বিশ্বের তাবৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন এ বিষয়ে এবং সবাই খুব আশাবাদী, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং ব্যাপকহারে এর উৎপাদন ও বাজারজাত করা যাবে। কিন্তু বৃটিশ এক চিকিৎসা বিজ্ঞানি যে সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন, তাতে করে বিশ্ববাসীর কপালে নতুন করে চিন্তার রেখাপাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাটট্রিক ব্যালান্স সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে করোনার ভ্যাকসিক আবিষ্কার হয়েই যায়, তবুও এই মুহূতে সেই ভ্যাকসিনের ওপর সম্পূর্ণ নিভর হওয়া যাবে না।’ স্যার প্যাটট্রিক ব্যালান্স জানিয়েছেন, যদি কোনো ভ্যাকসিন পরীক্ষায় সফলভাবে প্রমাণিত হয় যে, সেটা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম, তবুও এই ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলতে বহু সময় লেগে যেতে পারে। ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানি তার সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন আরও কয়েকদিন আগে। এরই মধ্যে ব্রিটেনে করোনায় মৃত্যু বরণ করেছে ২১ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি। একই সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম পরীক্ষামূলক প্রয়োগও করা হয়ে গেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল যে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছে, সেই ভ্যাকসিন সফল কি না তা জানা যেতে সময় লাগতে পারে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। স্যার প্যাটট্রিক বলেন, ‘নতুন যত ভ্যাকসিন নিয়েই গবেষণা করা হোক না কেন, সবগুলোই সফলতার মূখ দেখেছে দীর্ঘ গবেষণার পর। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, খুব কমই শেষ পযন্ত কার্যকরভাবে মানুষ গ্রহণ করতে পারে।’ ঠধপপরহব করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্যাটট্রিক। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ভিন্ন কিছু হবে না। এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনও সফলতার মুখ দেখবে দীর্ঘ গবেষণা এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর। নিশ্চিতভাবেই অনেক সময় লাগবে এবং কেউই এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় বলতে পারবে না।’ ব্রিটেনে মনে করা হচ্ছে যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় ঝুঁকি সত্ত্বেও সরকারের লাইসেন্স দেয়ার আগেই এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা হতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অনেকেই ঝুঁকির বিষয়টা জেনেও এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ফলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার যে ক্ষমতা রয়েছে, সেটাতে ভয়ঙ্করভাবে ওলট-পালট হতে পারে। স্যার প্যাটট্রিক বলেন, ‘কোনো কোনো ভ্যাকসিন হয়তো সফলভাবে কাজও করতে পারে। কিন্তু সেটা মানব শরীরের জন্য কতটুকু নিরাপদ, তা সবার আগে দেখা প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো একটি ভ্যাকসিন কোটি কোটি মানুষের মাঝে প্রয়োগ করা হয়, যাদের মধ্যে আবার অনেকেই থাকবেন কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়, তখন অবশ্যই সেই ভ্যাকসিন নিরাপদ কি না, সে বিষয়ে ভ্যাকসিনের প্রোফাইলে সম্পূর্ণরূপে উল্লেখ থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে আমাদের সবার আগে বোঝা প্রয়োজন হবে, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে।’ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গবেষক দল করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ করছেন, তাদের অনত্যম অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট। তিনি বিসিবির অ্যান্ড্রু মার-এর শোতে এসে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ট্রায়াল চালিয়ে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাই। এ নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী। তবে, কোনোভাবেই নিশ্চিত নই যে, এই ভ্যাকসিন পুরোপুরি কাজ করবে কি না।’
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post