করোনাকে পালিয়ে বাঁচা যায় কিন্তু মৃত্যুকে পালিয়ে বাঁচা যায় না। শত চেষ্টা করেও একদিন আয়ু বাড়ানো বা কমানো যাবে না এবং যায় নি। এটাই সৃষ্টিকর্তার বিধান। তবে বিশ্বমহলে বেঁচে থাকার আশায় মানুষ কত কিই-না করে থাকে। এইতো করোনার ভয়ে ঘরে লুকিয়ে একঘরে হয়ে আছে। এখানে আমার প্রশ্ন হলো কি কারণে করোনাকে ভয়? এর আগে কি করোনার মত রোগ মানুষকে আক্রমন করেনি? কলেরা, বসন্ত, হাম, পোলিও, নিউমুনিয়া, ইনফুয়েঞ্জাসহ আরো অনেক রোগ যা মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করে অনেকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। আজ কেন করোনার ভয়ে বিশ্ব আতঙ্কিত? করোনাকে কি মাবুদ আল্লাহ পাঠিয়েছেন? না করোনাকে পাঠিয়েছেন মানুষ যারা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তবে তাদের দ্বারা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার ব্যাত্যয় ঘটানো সম্ভব হয়নি হবেও না।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন নিদিষ্ট সময়ের জন্য। আর এই সময় অতিবাহিত হলেই মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা বহাল রহিয়াছে। তবে নির্ধারিত সময়ের একটু আগে বা পরে মৃত্যু কখনো কারো জীবন কবজ করবে না এমনকি করেওনি। তাই মৃত্যুভয়ে লুকিয়ে থাকার কোন মানে হয় না। একটু ভাবুনতো পালিয়ে কি কেউ নিজের জিবন রক্ষা করতে পেরেছেন? করোনা ছোয়াছে রোগ ঠিক আছে কিন্তু এই রোগ থেকেতো মানুষ বেঁচে যাচ্ছে এবং এই রোগতো সবাইকে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়াতে পারেনি। বরং এই রোগ মানুষকে এমনকি সৃষ্টিকর্তাকে ভয় পেয়ে দিশেহারা কারণ রোগের নিজস্ব কোন স্বত্বা নেই এমনকি বেঁচে থাকার অবলম্বনও নেই। অন্যের উপর নির্ভরশীল করোনা কিভাবে পৃথিবীকে বোকা বানিয়েছে তা এখন দৃশ্যমান। জন্ম এবং মৃত্যু এই দুটি সৃষ্টিকর্তার বিধান। জন্মিলে মরিতে হইবে এই কথাই সত্যি তবে এর সঙ্গে যুক্ত করা যায় যে, পৃথিবীতে মৃত্যু ছিল এবং আছে ও থাকবে। তবে মৃত্যুকে বিভিন্ন উছিলায় বা বাহানায় পর্যবসীত করেছে খোদা স্বয়ং নিজে। কারণ তিনি নির্দোষ এবং এই নিদ্যোষিতার প্রমানস্বরূপ বলতে পারি যে, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন তার সবই কোন কোন রোগে অথবা কোন না কোন দুর্ঘটনায়। কোনটির জন্যই সৃষ্টিকর্তাকে দোষারূপ করা যায়নি এবং যাবেও না। বরং আমরা বলে বেড়াই জ্বরে, হামে, নিউমুনিয়ায়, হার্ট এটার্কসহ নানাহ কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। কারণ এই মৃত্যুকে বরণ করেছি আমরা নিজেরাই। আমাদের স্বীয় কৃতকর্মের বা পাপ দ্বারা। আমরা পাপি এবং আমাদের পাপের পরিপূর্ণতা পায় মৃত্যুদ্বারা। তবে পাপের পরিণতির দ্বায় স্বয়ং খোদা তুলে নিয়েছেন এবং তাঁর বিনামূল্যের দান দারা মৃত্যুকে পরাজিত করে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করে খোদার সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর বিনামূল্যের দান আজ আমাদেরকে পবিত্র করেছে এবং সুখ-শান্তি ও আনন্দের সঙ্গে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। মৃত্যুর পর বেহেস্তবাসীর হওয়ার পাকাপোক্ত নিশ্চয়তা আমাদের জন্য অব্যাহত রয়েছে।
করোনা মানুষের মাঝখান থেকে মায়া-মহব্বত এবং মানবিকতাকে বিতাড়িত করেছে। কারণ করোনার ভয়ে মৃত্যুব্যক্তিকে মাটিচাপা দিতেও এখন ভয় কাজ করছে। যার জন্য গ্রামে বা করবস্থানে কবর দিতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আত্মীয়স্বজন (বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, বউ এমনকি পাড়া পড়শি) করোনার ভয়ে আপনজনকে দেখাতো দুরের কথা শেষ আশ্রয়ের জায়গাটুকুও দিতে নারাজ। আমরা এই মানবিকতায় ঘৃণা করি এবং বলতে পারি শয়তানের ভয়ে পৃথিবীর মানুষ সৃষ্টিকর্তা এবং তার অভিপ্রায় ও রহমত বঞ্চিত হচ্ছে। তারপরও সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে ভালবাসেন এবং আমাদের সমস্ত যোগান দিয়ে যাচ্ছেন যেন আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসি।
ইদানিং মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত নেতিবাচক সংবাদগুলো আমাদেরকে পীড়া দেয় ঠিক তেমনি সৃষ্টিকর্তাকেও। করোনা যে সংস্কৃতির চালু করেছে তার থেকে বের হয়ে আসা অতিব জরুরী। করোনা ভীতি পালিয়ে নয় বরং ভালবাসায় এবং ক্ষমায় জয় করতে হবে। করোনাকে বিতারিত করতে হলে মানুষকে আরো সাহসি এবং খোদার প্রতি ভীতি এমনকি খোদার ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা ও এর ব্যবহার বৃদ্ধি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই করোনা সংস্কৃতি দুর হবে এবং বিশ্ব ফিরে পাবে স্বস্তি ও শান্তি এবং আশার এক নতুন দিগন্ত। আসুন আমরা ভালবাসায় পরিপূর্ণ হই এবং মানুষ মানুষের প্রতি বৈষম্য তৈরী না করে বরং একীভূত হই করোনা সংস্কৃতির অবসানকল্পে। কাউকে ঘৃণা নয় বরং ভালবাসার আলিঙ্গনেই করোনামুক্ত হওয়া যায়। একটি কথা বলা জরুরী যে, বহিবিশ্বে বেশী মানুষ মৃত্যুর কারণ হলো সেবা যতেœর অভাব এবং পরিবার বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে। বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরীকায় বয়স্করা পরিবারের সঙ্গে থাকনে না বরং তারা হোমে থাকেন; একা থাকেন তাই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সহযোগীতার অভাবেই মৃত্যু হার বেশী। একান্নবর্তী পরিবারে যারা অসুস্থ্য হয়েছে এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের যতœ নিয়েছে ও ভীতি সঞ্চার করেনি তারা প্রত্যেকেই সুস্থ্য হয়েছে আমেরীকা, ইউরোপ এবং আমাদের বাংলাদেশেও। তাই যারা হোমে ছিল তাদের দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিদিষ্ট সময়ে দেখা করতো এবং পরিবারের সদস্যরাও নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করতো তাই ঐ নিয়মের কাছে করোনা পেয়েছে সাহস ও শক্তি বৃদ্ধির উৎস আর করোনা ভীতির কারনে যারা দেখাশুনা করতো তারাও নিজেদেরকে রক্ষায় প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছেন; তাই ঐ নিজেদেরকে রক্ষায় প্রাধান্যের কারণে করোনা পেয়েছে সাহস ও শক্তি। তাই মৃত্যুর মিছিলটা বয়োবৃদ্ধি লাভ করেছে। আর ওখানো যারা বাঙ্গালী একান্নবর্তী পরিবারের স্বাদ নিয়েছেন; যেমন পিতা মাতাকে নিয়ে একসঙ্গে রয়েছেন তারা কিন্তু ঐ মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেননি এমনকি শরীকও হননি। কারন তাদের ছিল না করোনা ভিতি এবং ছিল সাহস ও পরিবারের ভালবাসা এবং পর্যাপ্ত সেবা। আসুন আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের করোনা ভিতির কারণে বিচ্ছিন্ন না করি বরং ভালবাসা বাড়িয়ে সেবার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ্যকরে তুলি। করোনাভীতি না ছড়িয়ে ভালবাসার মাত্রা বাড়িয়ে সেবার যাত্রা অব্যাহত রাখলেই করোনা মোকাবেলা এবং বিতারণ সহজ ও সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ অব্যাহত থাকবে।
সরকার এবং ডাক্তার ও জনগন এমনকি সেবার কাজে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর লোকেরা একত্রিত হউন ভালবাসায় এবং ক্ষমায়। উজ্জ¦ীবিত হউক সাহস ও সম্মুখ সমরের সকল কলাকৌশল। করোনা ভীতি নয় বরং করোনা প্রীতি নিয়ে। কাউকে দুরে ঠেলে নয় বরং সকলকে বুকে আলিঙ্গনে। তাহলেই করোনা সম্পূর্ণ দূরীভুত হবে। সরকারের সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং সকল পদক্ষেপের সফলতায় নিজের ভুমিকা অগ্রজ রাখতে সচেষ্ট থেকে কাজ করি। খোদার কালামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে চাই যা খোদার তা খোদাকে দাও, আর যা রাষ্ট্রের বা স¤্রাটের তা রাষ্ট্রকে দাও। তাই রাষ্ট্রের আইন মেনে সরকারকে সহযোগীতা করে খোদার ইচ্ছাকে জীবনে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাই; তাহলেই আমাদের মঙ্গল আমাদের আগে আগে চলবে এবং খোদার কালাম আমাদেরকে পাহাড়া দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জয় হউক মানবতার এবং ভালবাসার। প্রসারিত হউক ক্ষমার এবং ফিরে আসুক শান্তি, নিশ্চয়তা, আনন্দ এবং আশা। এটাই হলো আমাদের খোদার ভালবাসা এবং অভিপ্রায়।