প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ফুটবলের ইতিহাসেই একটা কলঙ্কজনক অধ্যাক সৃষ্টি করে রেখেছে ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের সেই ঘটনাটি। হঠাৎ ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে ঢুঁস মেরে বসেন জিনেদিন জিদান। তখনকার সময়ের বিশ্বসেরা ফুটবলার জিদানের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা অবাক করে দিয়েছল সারা বিশ্বকে। সেই ট্র্যাজেডিতে লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বের হয়ে যান জিদান। ফুটবল ক্যারিয়ারও সে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় তার। বিশ্বকাপটাও আর জেতা হয়নি জিদানের দেশ ফ্রান্সকে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই ঘটনা আজও রহস্য হয়ে রয়েছে সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। কেন জিদান হঠাৎ মাথা গরম করে ফেলেছিলেন। কেন তিনি মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে গুঁতো দিয়ে বসেন? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এখনও ব্যর্থ ফুটবলপ্রেমীরা। তবে সবার সেই প্রশ্নের জবাব মার্কো মাতেরাজ্জি নিজেই দিলেন এবার। জানালেন সেই রহস্যের জবাব। বললেন, কেন তিনি সেদিন ন্যাক্কারজনক কাজটি করেছিলেন। মাতেরাজ্জি নিজেই প্ররোচিত করেছিলেন জিদানকে। অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছিলেন। যার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বুকে ঢুঁস মেরে বসেন জিদান। ইচ্ছা করেই তিনি এ কাজ করেছিলেন, জিদাানের মাথা গরম করে দেয়ার জন্য। জিদান মাথা গরম করলেই তাদের বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। পরিকল্পনামত কাজও হয়েছিল সেদিন। স্প্যানিশ স্পোর্টস ডেইলি এএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনা এবং এর পেছনের কারণ বর্ণনা করেন মাতেরাজ্জি। তিনি বলেন, ‘মনে বড় আঘাত পেয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন, এ ধরণের কথা আমি কখনও বলতে চাইনি। তারপর কখনও বলিওনি। জিদানকে আটকাতে না পারার জন্য গাত্তুসোর থেকে ধমক খাচ্ছিলাম। তাই জিদানকে আটকাতে শার্ট ধরে বেশ কয়েকবার টানাটানি করি। ভেবেছিলাম ঠান্ডা মাথায় জিদান খেলে যাবে; কিন্তু সে যে আমার ফাঁদে পা দেবে তা ভাবিনি। এভাবে তৃতীয়বার শার্ট ধরে টানায় আমাকে বলে বসল, তুমি কি আমার শার্টটা নিতে চাইছ? আমি মাথা গরম করে বলে বসি, তোমার শার্ট নয়, চাইছি তোমার বোনকে।’ ব্যস ততেই কাজ হয়ে গেলো। জিদান গেলেন ক্ষেপে। বরফের মত ঠান্ডা মাথা মুহূর্তেই গরম হয়ে গেলো। অশ্লীল কথাটি সহ্য করতে পারলেন না তিনি। ফিরেই ঢুঁস মেরে বসেন মাতেরাজ্জির বুকে। যেটা ফুটবল ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে ‘হেডবাট’ নামে। এএসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিটি করলেন মাতেরাজ্জি। স্বীকারোক্তির এ পর্যায়ে এসে মাতেরাজ্জি বলেন, ‘ঝামেলা হোক চাইছিলাম। প্রত্যেকে চায় প্রতিপক্ষকে হারাতে। শান্ত থাকার কথা সকলেই বলে। কিন্তু করে দেখানোর কাজটা সত্যিই কঠিন। ম্যাচের পরে সকলে জয়ের আনন্দে ভেসে গিয়েছিলাম। সেবার আমাদের দলটার কথা ভাবুন। (আন্দ্রে) পিরলো, গাত্তুসোর মতো ফুটবলার দলে ছিল। পিরলোকে খুব শান্ত মনে হয়। আসলে সে প্রচন্ড বুদ্ধিমান।’ মাতেরাজ্জি ভেবেছিলেন, জিদানের সঙ্গে তাকেও হয়তো লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেফারি তা করেননি। ওই ম্যাচের শুরুতেই গোল করে বসেছিলেন জিদান। মাতেরাজ্জি বলেন, ‘শুরুতেই জিদান গোল করার পর আমাদের কোচ (মার্সেলো লিপ্পি) আমাকে নির্দেশ দেন, তাকে মার্ক করে রাখতে। এরপর থেকেই আমি তার সঙ্গে লেগে থাকি পুরো ম্যাচ।’তবে মাতেরাজ্জিকে এখনও আঘাত করে স্টেডিয়ামে দর্শকদের আচরণ। তার কথায়, ‘বহুবার দেখেছি স্টেডিয়ামে আমাকে ও বালোতেল্লিকে নিয়ে প্রচুর গালিগালাজ চলে। কখনও আমাকে ডাকা হয়েছে ডাইনির ছেলে। কেন? নাপোলির কাউকে বললে দেখবেন ধুন্ধুমার কান্ত ঘটে যাবে। এরকম ঘটনায় রেফারিরা শক্ত হতে পারতেন।’
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post