প্রশান্তি ডেক্স ॥ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রনজিত সরকা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কনক পাল । সিলেট জেলা ছাগল উন্নয়ন খামারে প্রজননের জন্য আনা উন্নতজাতের একটি বড় পাঁঠা দেখে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে সেটি খাওয়ার আবদার জানায় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকর্মী। সেটি দিতে অপারগতা জানানোয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলামকে মারধর করার অভিযোগ ওঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রনজিত সরকার ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কনক পালসহ আরও কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। মারধর ও হামলার এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকারকে প্রধান আসামি করে গত সোমবার একটি মামলা দায়ের করেন সিলেট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। মামলার অন্যতম আসামী জেলা ছাত্রলীগ নেতা কনক পালকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তাকে জেলহাজাতে পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম চৌধুরী কাইয়ুম চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় আটক কনক পালকে ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। রনজিত সরকারসহ অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার দুপুরে নগরের টিলাগড়ে সিলেট বিভাগীয় ছাগল উন্নয়ন ও গবেষণা খামারে কয়েকজন যুবককে পাঠান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার। যুবকরা খামারে প্রজননের জন্য আনা উন্নতজাতের একটি পাঁঠা রনজিতের খাবারের জন্য ফ্রি দেয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. আমিনুল ইসলামের কাছে আবদার করেন। ড. আমিনুল পাঁঠা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা গালিগালাজ করে চলে যান। কিছুক্ষণ পর দলবল নিয়ে রনজিত সরকার সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) কাজী আশরাফের ওপর হামলা চালান। অফিসের অন্য কর্মকর্তাদেরও লাঞ্ছিত করেন তারা। এ ঘটনায় আহত কর্মকর্তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মারধরের শিকার বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে কনকের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী প্রাণিসম্পদ খামারে প্রজননের কাজে ব্যবহৃত একটি পাঁঠা ফ্রি খাওয়ার জন্য নিতে চান। এ সময় প্রজননের জন্য ব্যবহৃত এসব ‘পাঠা’ খাওয়ার জন্য দেয়া যাবে না বলে জানালে তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। কিছুক্ষণ পরে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকার ঘটনাস্থলে এসে আমাদের হুমকি দেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কয়েকজন আমাকে মারধর করেন। এর আগেও তাদের কয়েকজন অনুসারী দুটি ছাগল দাবি করেছিলেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। আমিনুল বলেন, এ খামারে সব মিলিয়ে ২০টি পাঁঠা ছাগল রয়েছে। সেগুলো স্থানীয় খামারিদের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরেও তারা ঝামেলা করে ছাগল নিয়ে যেতে চান। এদিকে এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের মধ্যস্ততায় সমঝোতার চেষ্টা চালান জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। কিন্তু হামলায় আক্রান্ত কর্মকর্তারা সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে বিষয়টি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তাদের নির্দেশে গত সোমবার রাতে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফরের পক্ষ থেকে উপ-পরিচালক ড. আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। প্রসঙ্গত, রনজিত সরকার সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। স্থানীয় ছাত্রলীগে তার নিয়ন্ত্রিত ‘রনজিত গ্রুপ’-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকমের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমি বিরত।’ এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post