প্রতারণায় অনন্য সেই রকি বড়ুয়া, জানা গেলো অজানা তথ্য

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ২০০১ সালে চরম্বা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও দুই সাবজেক্ট এ ফেল আসলে হতাশায় পড়ালেখায় আর এগুতে পারেনি। এখানেই মুলত পড়া-লেখার ইতি টানেন তিনি। এরপর ৫/৬ বছর ভবঘুরে জীবন-যাপন করেন। নিউ মার্কেটে একটি ভিডিওর দোকানে চাকরিও করেন। পরে ২০০৭/২০০৮ সালের দিকে কোন এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভারত চলে যান। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ভান্তে হয়ে গায়ে লাল কাপড় পরা শুরু করেন। এরপর বৌদ্ধ ভান্তে (ভিক্ষু) হিসেবে তার পথচলা শুরু। পরে ভিক্ষু সেজে দিল্লীতে জগৎজ্যোতি বিহারে আশ্রয় নেন তিনি। পরে নানা পথ মাড়িয়ে বাংলাদেশে এসে সেই তিনিই হয়ে যান অদৃশ্য ক্ষমতাধারী। নিজেকে দাবি করেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার র এজেন্ট। এলাকায় চলেন প্রভাব নিয়ে। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিও তার আশ্রয় প্রশ্রয় নেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। মূলত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে তিনি প্রতারণা করে থাকেন। তবে অবশেষে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মুক্তি নিয়ে বৈঠক করে বিতকের জন্ম দিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। বলছি বিতর্কিত রকি বড়ুয়ার কথা। তিনি চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়েনের ৪ নং ওয়োডের বিবিবিলা গ্রামের বড়ুয়াা পাড়ার অধিবাসী জয়সেন বড়ুয়ার ছেলে। তাঁর বয়স (৩৭)। তাঁর মায়ের নাম রেনেকা বড়–য়া। রেনেকা ও জয়সেন বড়ুয়ার এক ছেলে এক মেয়ে সন্তানের মধ্যে রকি সবার বড় বোন হ্যাপি বড়য়া। জানা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পযন্ত ৫ বছর ধরে রকি বড়য়া বাংলাদেশ-ভারত আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। এরই মধ্যে হঠাৎ ধর্মীয় রীতি ও ভান্তের ধর্মীয় শপথ ভেঙে বিগত ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ বিয়ে করে ফেলেন রকি বড়য়া। বর্তমানে সে এক কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের জনক। সাংসারিক জীবনে চলে গেলে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ভিক্ষুত্ব পরিচয় না থাকলেও রকি বড়য়া ঠিকই নিজেকে আজ পযন্তও ধর্মীয় গুরু ভিক্ষু দাবি করে চলেছেন। তিনি প্রতিবারই বাংলাদেশ থেকে ভারত যাওয়ার সময় গায়ে লাল কাপড় লাগিয়ে ভিক্ষু সাজেন, আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতেই লাল কাপড় খুলে প্যান্টশার্ট পরেন। ভারত-বাংলাদেশ এভাবেই চলে তার প্রতারণা। ভারতের দিল্লীতে রকি বড়ুয়ার আশ্রিত বিহারটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ধর্মবীর পাল (রাজ্যের সংসদ সদস্য) এর সাহচর্যে থাকার সুবাধে ভারতের বিজেপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী-এমপি এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথেও ছবি তোলার সুযোগ হয় তার। বাংলাদেশে এসে সেই ছবিগুলোকে পুঁজি করা শুরু করেন রকি। এবার বাংলাদেশে প্রচার করতে থাকেন দিল্লীর রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের সবার তার সাথে দহরম-মহরম ও অন্তরঙ্গতা। সেগুলো শুনে এবং দেখে এলাকার লোকজন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অনেকেই সমীহ করতে থাকেন রকি বড়–য়াকে। প্রতিষ্টিত হয় লোহাগাড়ার সন্তান রকি অনেক ক্ষমতা ভারতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। শুধু তাই নয়, রকির ক্ষমতার পরিধি বাংলাদেশ পর্যন্তদ বিস্তৃত। এছাড়াও এসব ছবি প্রদর্শন করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাথেও গড়ে উঠেছে তার সুসম্পর্ক। তাদের সহযোগিতায় ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবগের সাথে। যে ছবিগুলো ভারতে প্রদর্শিত হওয়ার পর সেখানকার মানুষও রকি বড়য়াকে ক্ষমতাধর মানুষ হিসেবে ভাবতে থাকে। এসবকে পূঁজি করে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মনোনয়ন নিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে রকি বড়য়া তার পেছনে ঘুরিয়েছেন অন্তত ডজনখানেক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। এজন্য কারো কারো কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। এছাড়াও রকি নিজেকে বাংলাদেশে ভারতের এজেন্ট দাবি করেন। তিনি এলাকায় বলে বেড়ান, ভারত তাকে বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কি করতে চায় , মিয়ানমার থেকে কেন মানুষ এখানে চলে এলো, মিয়ানমার কি করতে চায় এসব দেখভালের দায়িত্ব নাকি ভারত তাকে দিয়েছে। এছাড়াও সবচেয়ে আর্শ্চয্যের বিষয় যে, সে লাল কাপড়টি ক্ষণে ক্ষণে খোলেন আর পরেন। বাংলাদেশে থাকলে সে প্যান্টশার্ট পরেন আর ভারতে গেলে লাল কাপড় গায়ে লাগান। দিল্লিতে রকি যে আশ্রমের বড় ভান্তের তত্ত্বাবধানে থাকতেন ওই ভান্তে মারা যাওয়ার পর সেই আশ্রমটিও রকি দখল করে নেন। সে আশ্রমে বাংলদেশ থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে তাদেরকে লাল কাপড় পরিয়ে জাপান, চীন, থাইল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রে পাঠাতে থাকেন। ভান্তে সাজিয়ে আদম পাচারের বিষয়টি ধরা পড়লে ভারত সরকার তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বাতিল করে দেয় ভান্তে পরিচয়ে করা পাসপোর্টটি। সেই থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করে বিলাসী জীবন-যাপন করছেন রকি বড়–য়া। চট্টগ্রাম শহরে তার রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও ঢাকায় এপার্টমেন্ট। দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে রেখেছেন কক্সবাজারের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। সুত্রঃ সিভয়েস

Leave a Reply

Your email address will not be published.