প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশজুড়ে মহামারি করোনা ভাইরাসে হাহুতাশ বাড়ছেই। এক দিনের চেয়ে আরেক দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা। করোনা মোকাবিলায় গোটা বিশ্ব এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঠিক এমন সময়ই কিছুটা সুখবর দিলেন বাংলাদেশি চিকিৎসক বাবা-মেয়ে। উদঘাটন করলেন করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স। এর ফলে গবেষকরা এই প্রাণঘাতি ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে পারবেন। দেশের মানুষের জন্য সফল এই উদঘাটন করোনার প্রতিষেধক তৈরির সম্ভাবনাকে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডা. সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) ৮ সদস্যের একটি গবেষক দল জিনোম সিকোয়েন্সের ম্যঅপিংয়ের কাজ করে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক ডা. সেঁজুতি সাহা যৌথভাবে তাদের এই উদঘাটনের কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। গত বুধবার (১৩ মে) নতুন এই উদঘাটন সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সিএইচআরএফ। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ আক্তারুজ্জামান লিখেছেন- ‘জিনোম সিকোয়েন্স রোগের মূল অনুসন্ধানের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। একে ‘জিনোমিক প্রেডিকশন’ বলা হয়ে থাকে। ভাইরাস সংক্রমণ যখন ব্যাপক জনসংখ্যার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এটি তখন সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষকদের ভাইরাসটির জেনেটিক পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করতে সহায়তা করে।’ তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকজন রোগীর কাছ থেকে সংগৃহিত ভাইরাস জিনোমের জিনগত অণুক্রমের পরিবর্তনগুলো দেশে ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে এ রোগের বিস্তারকে পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করবে।’ ড. আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে ভাইরাস জিনোম সিকোয়েন্স থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, আমাদের দেশে প্রচলিত নির্দিষ্ট ভাইরাল স্ট্রেনগুলো শনাক্ত করা, সংক্রমণের হটস্পট বা সুপার-স্প্রেডার শনাক্ত করা এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য কৌশল প্রণয়ন করা। এটি আমাদের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে সহায়তা করবে।’ গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যুর সংবাদ আসে ১৮ মার্চ। এরপর মার্চ মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু নাগালের মধ্যে থাকলেও এপ্রিলের শুরু থেকেই বিশেষত এপ্রিলের মাঝামাঝির পর থেকে ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এখন পযন্ত ১৭ হাজার ৮২২ জন হয়েছেন। মারা গেছেন ২৬৯ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৬৮ জন। করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় নাকাল দেশ। মানুষের স্বাভাবিক জীবনের অনিশ্চয়তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জীবন-জীবিকা চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। মাসের পর মাস কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে থেকে অনেকেরই সংসারে টানাপোড়েন চলছে। সরকারের দেয়া বরাদ্দের ত্রাণসামগ্রী ঠিকঠাকভাবে পৌঁছুচ্ছে না ঘরবন্দি সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায়। অন্যদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব দিন দিনই ব্যাপক হারে বাড়ছে। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর সংক্রমণ ঝুঁকিও। এমতাবস্থায় করোনার প্রাদুর্ভাব ও ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে অধিকতর সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে টানা ষষ্ঠ দফায় সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে।