করোনা মোকাবেলায় ডব্লিউএইচও’র পদক্ষেপের নিরপেক্ষ পর্যালোচনার ঘোষণা

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, তারা করোনা মোকাবেলায় তাদের নেয়া পদক্ষেপসমূহের নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ডব্লিউএইচওকে ‘চীনের পুতুল’ হিসেবে আক্রমণ করার পর সংস্থাটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনের সঙ্গে অব্যাহতভাবে দ্বন্দ্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও টেনে এনেছে। প্রথমবারের মতো সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভার্চুয়াল বিশ্ব সম্মেলন শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবারও এ সম্মেলন চলছে। সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাবে কোভিড সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও ব্যাপক মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেডরস আধাম গেব্রিয়াসিস তাদের কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন এবং একইসঙ্গে নিরপেক্ষ পর্যালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পূর্ণমূল্যায়ন কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেয়া অনেক দেশের নেতা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও মার্কিন স্বাস্থ্য মন্ত্রী এলেক্স আজার অভিযোগ করে বলেছেন, সংস্থাটি কোভিড -১৯ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ও জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে চীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিলেন। চীনে গত ডিসেম্বরে করোনার প্রাদুর্ভাব প্রথম শুরু হয়। ট্রাম্প বারবারই চীনের ল্যাব থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি বলে প্রমাণহীন অভিযোগ করে আসছেন। এছাড়া ট্রাম্প প্রথমদিকে এই মহামারিকে গুরুত্ব না দেয়া ও চীনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে ডব্লিউএইচকে তহবিল দেয়া বন্ধ করে দেন। এমনকি সোমবার ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীনের ‘পুতুল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, সংস্থাটি আমাদের অনেক খারাপ উপদেশ দিয়েছে। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, মহামারি করোনা মোকাবেলায় ট্রাম্প তার ব্যর্থতার দায় থেকে মুখ অন্যদিকে ফেরাতে চীনের সাথে দ্বন্দ্বকে উস্কে দিচ্ছেন। এদিকে সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, কোভিড -১৯ এর সংকট কেবল একটি সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, ভয়ংকর বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলায় দরকার নতুন ঐক্য ও সংহতি। কিন্তু কোভিড- ১৯ মোকাবেলায় আমরা যে সংহতি দেখছি তা খুবই সামান্য। গুতেরেস আরো বলেন, অনেক দেশই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশসমূহকে উপেক্ষা করেছে। এর ফলে ভাইরাসটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন এটি বিশে^র দক্ষিণাঞ্চল গ্রাস করতে যাচ্ছে, যার ফল হবে আরো ভয়ংকর। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রক্ষা দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয় নয় বরং নিজেদের স্বার্থেই তা করতে হবে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথ প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তার দেশের তৈরি যে কোন ভ্যাকসিন সকলের জন্যেই সহজলভ্য করার অঙ্গীকার করেন। এছাড়া তিনি দু’শ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তারও প্রস্তাব করেন। চীনে বর্তমানে পাঁচটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। সম্মেলনে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ও জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল সকলের জন্যে ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা ডব্লিউএইচও’র এই সম্মেলন সাধারণত তিন সপ্তাহ ধরে চলে। কিন্তু এবারে তা কেবলমাত্র সোমবার ও মঙ্গলবার এ দুদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বে কোভিড -১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ লাখের কাছাকাছি এবং মারা গেছে ৩ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি লোক। সোমবার দুপুরে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান,স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা অংশ নিয়েছেন। সূত্র: বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published.