করোনা মোকাবেলায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্তের স্থায়ীত্ব এবং উপযুক্ত শব্দ চয়নের ব্যবহার এমনকি সার্বজনীন ও সর্বজনবিদীত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া। ইদানিং আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত জাতীয়ভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় যার স্থায়ীত্ব বেশীক্ষাণ হয় না। আবার দেখেছি অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সমন্বয়হীনতার অভাবের টানাপোড়নে দুদল্যমান সিদ্ধান্ত প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। তবে জাতিয় সিদ্ধান্তগুলো স্থায়ী হবে এবং সকলে মিলে সমন্বয়ের মাধ্যমে আসবে এটাই আমাদের কামনা। তবে একক কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অবশ্যই যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের বিস্তারিত উল্লেখ করা আবশ্যক। কারণ জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো আসে সকলের সমন্বিত প্রয়াসে। কিছুদিন আগে এক সার্কুলার বা প্রজ্ঞাপনে বলা হলো বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ২৪ঘন্টা খোলা থাকবে এবং খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হলো। আসলে সারা বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর ইমাজেন্সি আগে থেকেই ২৪ ঘন্টা খোলা আছে সুতরাং নতুন করে এই নির্দেশ দেয়া বা বলা একটু ভুল বার্তা ছাড়া আর কি? যেখানে আগে থেকেই আছে সেখানে এই ধরণের বার্তার অর্থ হলো নিবুদ্ধিতা বা না জেনে বা বুজে এই আদেশ জারি বলেই ধরে নেয়া হয়। তাই মন্ত্রণালয়গুলোকে আরো সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। সকলের সমন্বিত প্রয়াসেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে একটি বিশৃঙ্খল বা অগোছালো জাতিকে লক ডাউনে অভ্যস্থ্য করিয়েছেন তা এক বিরল দৃষ্টান্তে উপনীত হয়েছে। যদি তিনি একবাক্যে লকডাউন এবং দুইমাস বা তিনমাস অথবা কারফিউ ঘোষনা করতেন তাহলে মানুষের আরো কষ্ট বাড়ত। মানুষ ভিতবিহবল হয়ে আরো দ্বিগুণ হারে মরতো অথবা চরম এক নৈরাজ্যের সৃষ্টি হতো। যা সামাল দিতে গিয়ে বহু মানুষের প্রাণ বিসর্জন দিতে হতো। তাই তিনি ধীরে ধীরে এই জাতিকে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় যোগান দিয়ে কার্যকরী করে তুলেছেন। ঠিক একই সাথে, স্বার্থ্য, কৃষি, সমাজ কল্যাণ, শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, মিলিটারিসহ সকল ডিপার্টমেন্টগুলো এমনকি মন্ত্রণালয়গুলোও ঐক্যমত্যে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নিলে আরো ভাল হতো এবং জনগণ সাদরে গ্রহন করে কার্যকর করতো। আলাদা আলাদা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছু কিছু অমিল এবং শৈথিল্য দৃশ্যমান রয়েছে।
আসা যাক ঈদকে সামনে রেখে নেয়া পুলিশের মুভমেন্ট পাস আইন। চমৎকার একটি আইডিয়া এবং এটি কার্যকরও হতো। কিন্তু এর স্থায়ীত্ব বেশীক্ষণ থাকেনি। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। আরেকটি বিষয় হলো ঈদে ঘরমুখো মানুষদের ঢাকার বাইরে যেতে দেয়া হবে না এমনকি ঢাকায়ও আসতে দেয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তটিও বেশীক্ষন টিকে থাকতে পারেনি। তাই ভেবে চিন্তে সময় নিয়ে তড়িঘরি করে কোন কিছু করা থেকে এই ক্রান্তিকালে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়। আরেক বিষয়ও বলতে হবে যে, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঈদে ঢাকার বাইরে এমনকি ঢাকায় আসতে পারার আনুমতি। এটিও একটি জটিল সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘরে ফিরার আশায় কতইনা কষ্ট করছে এমনকি কেউ কেউ প্রাণও দিয়েছে? তাদের জন্যওদো ভাবা দরকার এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। তাই সকল সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই তবে সময় নিয়ে যুযোগপযোগী সিদ্ধান্ত জাতিকে উপহার দিতে পারলে অমঙ্গলের হাতে থেকে মঙ্গলের বার্তাই কার্যকরী হয়ে আগামীর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে পরামর্শের জন্য প্রতিটি সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনয়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করা ও জনগণের সামনে নিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। নতুবা এই বৈচিত্র এবং রহস্য দুটোই জনমনকে আচ্ছাদিত করে রাখবে। অভিজ্ঞতা এবং মতামত ও সময় নিয়ে কাজ করতে গেলে খারাপের বা সমালোচনার চেয়ে ভালকিছুই হয়েছে এবং হবে বলে বিশ্বাস।
নিয়োগের ক্ষেত্রেও তড়িঘড়ি করে নেয়া সিদ্ধান্ত কতটুকু ফলপ্রসু হবে তা আগামীই বলে দেবে। তবে গাছ-গাছালির সমীকরণে ইউনানি ও আয়ূবেদীক ঔষধের কোন বিকল্প নেই। আর এই করোনা যুদ্ধে ঐ ঔষধগুলোই নিরবে নিবৃত্তে কাজ করে যাচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষায়। কিন্তু এটা তেমন প্রচার ও প্রসার না থাকায় সাধারণ মানুষ যদিও চিকিৎসা নিচ্ছে কিন্তু কনফিডেন্ট লেভেল একটু কম পাচ্ছে। তবে উপকারের পর আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি পুরন হচ্ছে। ইন্ডিয়া যেভাবে এর প্রচার করেছে বাংলাদেশ সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে মুদিজি তারা স্লোগানে ইউনানি ও আয়ুবেদিক ঔষধের আশ্রয়ে জীবন বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
আয়ুরবেদিক ও ইউনানির ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এমডি করার কোন ব্যবস্থা নেই এমনকি যারা ডাক্তার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে বাইরে থেকে এমডি করিয়ে আনারও কোন পদক্ষেপ এপর্যন্ত নেয়নি। তাই মনে হয় সিদ্ধান্ত এখনই নেয়ার সময় এবং ডাক্তারদের এমডি করিয়ে এনে দেশেই এমডি করার ব্যবস্থা চালূ করলে স্বাস্থ্য সেবায় ঝুকিবীহিন পরিচর্যা অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রীর নেয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সামনে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের আর আমরা যখন দায়িত্বে থাকি তখন এই কথাটি বেমালুম ভুলে যায়। আর মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রী স্বরণ করিয়ে দিয়ে আমাদের চেতনাকে বা স্মৃতিশক্তিকে বাঁচিয়ে রাখেন। তাই আমাদের স্বজাগ হওয়া এমনকি কাজে নিজেদেরকে প্রমান করার সময় এখনই।
চাপাবাজিরও একটি সময় আছে কিন্তু আমাদের সমাজে এই চাপাবাজি বিশেষ করে দুর্যোগ মুহুত্বেই বেশী হয়ে থাকে। তাই সাবধান হউন চাপাবাজি থেকে। আম্পান ও করোনা উভয়েই মানুষের ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। তাই এই দুই থেকে বেঁচে থাকার জন্য যা যা করণীয় তাই করেন সর্বজন বিদৌত ভাবে। সরকার, জনগণ এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে গেলেই এই জীবননাশকারী সকল রীপু দুরীভুত হবে। পরিশেষে বলতে চাই খোদার ইচ্ছা কি জানতে চেষ্টা করুন এবং সেই ইচ্ছাই দাড়িয়ে জীবনের সফলতায় পৌঁছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আল্লাহর ইচ্ছা-“তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি; সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, অপকারের জন্য নয়; সেই পরিকল্পনার মধ্যদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।” তাই হউক —আমীন॥