বহুদিনপর একটি সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের কাছ থেকে। যা আরো আগেই আসা উচিত ছিল। তবে এই সিদ্ধান্তের পক্ষের মানুষজন নিরব এবং নিথর প্রকৃতির; তবে সংখ্যায় অগনিত। কিন্তু বিপক্ষের মানুষগণ সংখ্যায় অল্প হলেও তারা সরব এবং সমালোচনায় উত্তপ্ত বালুকণার চেয়েও কিছুটা বেশী। তবে যে যাই বলুক না কেন এই সিদ্ধান্ত জনগণের উপকারের জন্য এবং সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে সঠিক। কারণ আমরা সকলেই সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল এবং তার করূনায়ই বেঁচে আছি। মানুষ মানুষের জন্য এবং জীবন জীবনের জন্য এই কথাটি বাস্তবায়ীত হওয়ার জন্য প্রয়োজন মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ সম্বন্ধ স্থাপন এবং একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করা। আর এই কাজের শুরু হবে লকডাউন নামক প্রতিবন্ধকতা উঠানোর মাধ্যমে। সকল প্রকার ভীতির উদ্ধে উঠে কাজ করার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করা হউক। ভালবাসাতে ভীতি নেই; ক্ষমাতে ভীতি নেই; আর শয়তানকে ভয় পাওয়ার কোন কারণও নেই; কারন শয়তানের সকল ফয়সালা হয়ে গেছে। আর শয়তান বার বার পরাজিত হয়েছে এবং হবে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে জয় করেছে এবং পৃথিবীর শাসনভার তাঁরই হাতে রয়েছে। তাঁর উপর কেউ নেই।
এ যাবত কালে যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবগুলোই সময়োপযোগী এবং এই ৩১ তারিখের সিদ্ধান্তটা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে। তবে ঈদ কেন্দ্রীক নেয়া সিদ্ধান্ত এবং ধর্ম-কর্মকেন্দ্রীক নেয়া সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল। তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো জনমনে প্রশ্নের উদ্ধ্যেগ সৃষ্টি করেছে এমনকি সরকারের সমন্বয়ের দূর্বলতা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সেই ক্ষনস্থায়ী সিদ্ধান্তগুলো পরিবর্তন করে নতুন নেয়া সিদ্ধান্তের আলোক জনমনে স্বস্তির নি:শ্বাস নেমে এসেছে। শিক্ষাকেন্দ্রীক নেয়া সিদ্ধান্তগুলোও বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্মুক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া উচিত। কারণ শিক্ষা অর্জনকারীরা যথেষ্ট সচেতন এবং তাদের সচেতনতা শিক্ষারও একটি মাধ্যমে হতে পারে এই দুর্বল চিত্তের করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসটি শক্তিতে দুর্বল কিন্তু ভীতি ছড়ানোতে সবল; তাই বিশ্বলয়ের ভীতির চাপে অজ¯্র প্রাণ হলো করোনা নামক অদৃশ্য শত্রুর হাতে বলিদান। আর যেন কোন প্রাণকেই বলিদান হতে না হয় সেই দিকে লক্ষ্য দেয়া আমার আপনার সকলেরই উচিত।
রমজানের এবাদত, ঈদের এবাদত; নামাজ পড়ার জন্য নেয়া সিদ্ধান্তটিও একটি জটিল সমীকরণের মধ্যে প্রথাগত ভীতিকে ঈমান ও বিশ্বাস এবং আমলের শক্তিতে বলিয়ান রুপদান করা হয়েছে। আর ঐ সিদ্ধান্ত নিতে যেসময়টুকু নেয়া প্রয়োজন ছিল তারচেয়ে একটু বেশী সময় নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে এবং ধর্ম-কর্মের নতুন সূতিকাঘার হিসেবে চিহ্নিত এবং আর্বিভূত হয়েছে। আজ বিশ্ব সম্প্রদায় সৃষ্টিকর্তার এবাদত কাঠামোয় এবং চিন্তা চেতনায় নতুনত্ব এবং পরিবর্তন আনয়নের সুযোগ পেয়েছে। ধর্ম এবং এবাদত ও সৃষ্টিকর্তা কোন ঘরে আবদ্ধ নয় এটা আবারো প্রমানিত হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা রয়েছে আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে বা দিলে। তাই স্বহৃদয়ে অবস্থানকারী খোদাকে বা সৃষ্টিকর্তাকে অনুসরণ করে পথ চলাই এখন যুগের শ্রেষ্ঠ দাবী ও বর্তমানের আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত বহনকারী চাহিদা। দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যারা নিয়োজিত হন তারা কিন্তু খোদার ইচ্ছায় এবং মনোনয়নেই হয়। তাই ঐ দায়িত্বপ্রাপ্তদের সদা সর্বদা খোদার ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটানোই মুখ্য কাজ হিসেবে বিবেচিত। আর সেদিকে মন দেয়ার উপযুক্ত সময় এখনই। তাই আমরা সকলেই শাসকদেরকে মান্য করা এবং শাসকের পাওনা পুর্ণাঙ্গরূপে বুঝিয়ে দেয়া কতব্য চর্চায় এবাদতে গন্য করে নিয়েছি। আর যারা এখনও নিতে পারেননি তাদেরও আল্লাহর কালাম বেশী বেশী করে পড়ে সেই অনুযায়ী পথ চলতে সচেষ্ট হউন। সময় এখনও আছে কিন্তু সামনে আর নতুন করে কোন সময় পাওয়া যাবে না। কারণ পৃথিবী এখন শেষ সময়ের দিকে দ্রুতলয়ে দৌঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং উন্নয়নে গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে লকডাউন প্রত্যাহারের কোন বিকল্প নেই। স্কুল এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার কোন বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় অর্থ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগানের কোন বিকল্প নেই। বাজেট বৃদ্ধিই নয় বরং বাজেট ব্যবহারে শুকুনের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন এমনকি কার্যকরী পদক্ষেপের সুফল পাওয়া এবং ভোক্তভোগীদের আগামীর করনীয়তে সহযোগীতাসহ অব্যাহত যাত্রা গতিশীল রাখা প্রয়োজন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা পরিহার করার এখনই উপযুক্ত সময়। বিদেশ নির্ভর চিকিৎসা এবং পড়ালেখা বর্জনের সময় ও সুযোগ এখনই। কারণ এই করোনা দুর্যোগ এবং লকডাউন আমাদেরকে এই শিক্ষায় দিক্ষা নিতে বড় উপকার করেছে। তাই যত দ্রুত সম্বব দেশেই আরো উন্নতমানের হাসপাতাল এবং চিকিৎসা উপকরণ পর্যাপ্ত করার যাবতীয় উদ্যোগ সরকারী ও বেসরকারীভাবে নেয়া ও কার্যকর করা আগামীর দাবী। স্বচক্ষে বিশ্ব দেখেছে কিভাবে বন্ধ হয়ে গেলো বিদেশী শিক্ষা ও চিকিৎসা। কিভাবে ঝড়ে গেলো লক্ষ লক্ষ প্রাণ। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লাদিয়ে যুগের দাবিগুলো পূরণ করা অত্যাবর্শক। আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে সকল পরিবর্তন প্রয়োজন তা আশু পদক্ষেপে নেয়া উচিত। সকলে মিলেই এই দেশকে সম্মানের এবং সম্বৃদ্ধির সর্বোচ্ছ শিখরে নিয়ে যাব এই হউক আমাদের মনোবাসনা।
একটি বিষয় দৃষ্টি দেয়া যায় এবং প্রশংসাও করা যায় যদি এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আলোকে হয়। যেমন সমগ্র দেশের সকল রাস্তাঘাটে পুলিশ ব্যারিকেট বা চেকপোষ্ট রয়েছে যথেষ্ট পরিমান। যা দেখে বুঝা যায় লকডাউন পালনে বাধ্য করাই ছিল ঐ চেকপোষ্টগুলোর মূল দায়িত্ব। কিন্তু দিন যতই গরিয়েছে ততই চেকপোষ্টগুলো কার্যকারীতা হারিয়েছে। আমার দেখায় মাত্র একবার বা দুইবার চেকপোষ্টের বেড়াজালে দীর্ঘক্ষণ আবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু বাকি লকডাউন সময়টুকু চেকপোষ্ট বিড়মন্বনায় পড়তে হয়নি। তবে চেকপোষ্টগুলো স্ব স্ব জায়গায় দাড়িয়ে ছিল নির্জিব বা প্রাণবিহীন হয়ে। যারা ঐ চেকপোষ্টের দায়িত্বে ছিল তারাই শুধু অনুপস্থিত; আবার কোথাও কোথাও দেখা যেতো অনেক দুরে অবস্থান করে আছেন। যেন ক্লান্ত অথবা ভিতসন্তষ্ট হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে এটি যদি প্রশাসনিক ভিতরগত সিদ্ধান্ত হয় তাহলে ভাল এবং সাধুবাদ পাওয়ারই যোগ্য। কারন জনবান্দব আচরণের জন্যই তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আর যদি হয় দায়িত্ব অবহেলা বা করোনা ভীতিতে আক্রান্ত হয়ে ঐ আচরণের স্বীকারে পরিণত হওয়া তাহলে বলতে হবে খুবই দু:খজনক। কারণ এদের উপরে দায়িত্ব দিয়ে দেশ ও দেশের জনগণের জান মালের দায়িত্ব রক্ষিত হবে বলে মনে হয় কি? তবে আমার একটি মূল্যায়ন আছে এই ক্ষেত্রে- যেমন প্রথম দিকে সকল বাহিনীর লোকজনই সচেতনতাই এমনকি নিয়ম পালনে বাধ্য করাতে যথেষ্ট তৎপর ছিল। কিন্তু ঐ বাহিনীর লোকজন যখনই আক্রান্ত হয়ে পড়ল এবং মৃত্যুবরণ করতে শুরু করল ঠিক তখনই ঢিলেমি এবং মাঠ ফাকা করে দায়িত্বে গাফিলতি পরিলক্ষিত হলো। তাই এই বিষয়টি প্রশংসা এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ব সচেতনতার ক্ষেত্রে এমনকি উভক্ষেত্রেই ভাবার বলে মনে হয়।
কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিরে আসুক চাঞ্চল্য এবং কর্মোদ্দীপনা; বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রাণ চাঞ্চল্য ও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। জাতির হারানো ঐতিহ্য এবং মানবতার ভুলুন্ঠিত অংশটুকু পুনরুদ্ধার করে এগিয়ের যাওয়ার প্রেরণাই হউক আমাদের সকলের প্রার্থনা।