প্রশান্তি ডেক্স ॥ রাজধানী ঢাকার মহাখালী এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ২০ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত র্যাব-১১’র একটি আভিযানিক দল।
গত সোমবার (২২ জুন) বিকেলে গাজী ইন্টারন্যাশনাল ও ভিশন বিজনেস সেন্টার নামের দুটি অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক সরঞ্জাম ও প্রমাণাদি।
গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাতে র্যাব-১১’র অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকারের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মো. জামাল হোসেন ইমন ওরফে মনিরুজ্জামান (৪৫), খালেদ নুর (৩৬), মো. ইসমাইল হোসেন (২৯), নাজমুল হাসান (২৯), হাসান মুনমুন (৩৪), মো. জাবেদ হোসেন (২৮), মো. আরিফ হোসেন (২২), মো. ইফসুফ (৪৫), খোরশেদ আলম (৪৫), ফাতেমাতুজ জোহরা (৩৪), মোছা. রাবেয়া আক্তার বিথি (২৩), জ্যোতি আক্তার (১৯), মোছা. অনামিকা আক্তার (২৬), মোছা. তানিয়া সুলতানা (২৯), অন্তরা খাতুন (২৫), সানজিদা আক্তার (২৪), আলমগীর (২৯), মীর সানবিরুল আলম (২৭), মো. শামীম আহম্মেদ (৩১) ও মো. মাহিম (২১)।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ১৫১টি চাকরির আবেদনপত্র, ৩টি সীল, ৫টি আইডি কার্ড, ৫টি ল্যাপটপ, বিপুল পরিমাণ ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন, ভূক্তভোগীদের নিকট হতে অর্থ আদায়ের রশিদ, চাকরি প্রার্থীদের নিবন্ধন ফরম ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবের অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার আরও জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তির নামে একই সময়ে ঢাকা উভয় সিটি কর্পোরেশন থেকে ‘‘গাজী ইন্টারন্যাশনাল লিঃ’’ ও ‘‘ভিশন বিজনেস সেন্টার’’ নামে দুটি ট্রেড লাইসে›স নিয়ে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় দুটি অফিস খুলে। এই প্রতারক চক্র উক্ত দুটি কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য ফেসবুক, অনলাইন ও লিফলেটের মাধ্যমে ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রত্যেক চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন ফি বাবদ এক হাজার টাকা ও প্রশিক্ষণ বাবদ ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নিত। কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার, ব্যাঞ্চ ম্যানেজার, এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার প্রভৃতি পদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে যুবক যুবতীদের প্রলুবদ্ধ করত। চাকরি পাওয়ার পর মাসের পর মাস অফিসে আসা যাওয়া করে বেতন না পেয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে প্রদেয় টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে নানাভাবে ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানসহ মারধরও করত।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে গাজী ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লি. ও ভিশন বিজনেস সেন্টার নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে বলে স্বীকার করেছে।
র্যাব-১১’র অধিনায়ক আরও জানান, এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানির নামে পত্রিকা, লিফলেট ও অনলাইনে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রত্যাশী যুবক-যুবতীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তাছাড়া চাকরির আবেদন ফরম, প্রশিক্ষণ ও ভালো পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রচুর নগদ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা কাউসার আহমেদ চৌধুরী বিজয়। তার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দেশের নামীদামী কোম্পানির নামের সাথে মিল রেখে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়। পরে অভিজাত এলাকায় ফ্লোর ভাড়া নিয়ে উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে সু-সজ্জিত অফিস খুলে। পত্রিকা, লিফলেট ও অনলাইনে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার যুবক যুবতীদের আকৃষ্ট করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-১১’র অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।